দশ দিনপর মাধ্যমিক পরীক্ষা রাজ্য জুড়ে এবার কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।
সূত্রের খবর,দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে প্রায় ৬২ হাজার পরীক্ষার্থী। জেলা শিক্ষা দফতর জানায়, পরীক্ষার্থীর সংখ্যাটা গত বছরের তুলনায় প্রায় দশ হাজার কম। নবম শ্রেণিতে ‘রেজিস্ট্রেশন’ করার পরেও অনেক শিক্ষার্থীরা বসছে না পরীক্ষায়।
শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় দু’বছর স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার অভ্যাসটাই চলে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বেড়েছে মোবাইলের আসক্তি। দু’বছর পরীক্ষা ছাড়াই দু’ক্লাস উপরে উঠে গিয়েছে পড়ুয়ারা। কিন্তু উঁচু ক্লাসের পড়া সামাল দিতে পারেনি অনেকে। তাই নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় অনেকে সফল হতে পারেনি। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ অনেকে। তা ছাড়া, অনেকে পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে বলে জানতে পেরেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বহু ছাত্র ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। বহু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপ এলাকায় বালিয়াড়া কিশোর হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১০২ জন ছাত্রছাত্রী। মাধ্যমিকে বসবে ৭৯ জন। গোপালনগর হাইস্কুলে এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১৩০ জন। মাধ্যমিক দিচ্ছে ১০৩ জন।
প্রধান শিক্ষক তরুণকুমার মিত্র বলেন,গত দু’বছর পড়াশোনা হয়নি। যার ফলে অনেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায়ও পাশ করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন লকডাউন এর পরবর্তী সময়ে অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অনেক ছেলে বাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপ দেখে ভিন্ন রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে।
সাগর ব্লকের হরিণবাড়ি যুধিষ্ঠির হাইস্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার জন্য ৫৬ জন ছাত্রছাত্রী রেজিস্ট্রেশন করেছিল। কিন্তু পরীক্ষায় বসবে ৫১ জন। প্রধান শিক্ষক দেশবন্ধু দাস বলেন, দু’একজন মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেরা কেউ কেউ পড়া বন্ধ করে বাবা-মায়ের সঙ্গে দিল্লি, কেরল, গুজরাতে কাজে চলে গিয়েছে। ওদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কিছু লাভ হয়নি।
অভিভাবকদের একাংশ জানালেন, তাঁরা চান ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করুক। কিন্তু মেয়েদের অনেকেই বন্ধুদের দেখে পালিয়ে বিয়ে করছে। ছেলেদের মধ্যেও আশপাশের বন্ধুবান্ধব, স্কুলের দাদাদের দেখে বাইরে কাজে যাওয়ার ইচ্ছে বাড়ছে। অল্প বয়সে হাতে টাকা আসার পরে তারা আর পড়াশোনার জগতে ফিরতে চাইছে না।
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার আহ্বায়ক অজিত নায়েক বলেন, ‘‘প্রতি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় দু’তিন হাজার পরীক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে অনুপস্থিত থাকে। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু এ বছর সংখ্যাটা অস্বাভাবিক ভাবে কমেছে। বয়সের কড়াকড়ির জন্য অনেকে এ বছর রেজিস্ট্রেশন করায়নি। এ ছাড়া, অন্যান্য কিছু কারণ থাকতেও পারে।’’
গোপালনগরের নহাটা সারদা সুন্দরী বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুল থেকে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে চলেছে ৯২ জন ছাত্রী। যদিও নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১০২ জন ছাত্রী। প্রধান শিক্ষিকা শম্পা পাল বলেন, ‘‘করোনা ও লকডাউনের সময় ১০ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তারা আর পরীক্ষা দেয়নি।’’
শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানালেন, করোনা পরিস্থিতি পেরিয়ে স্কুল খোলার পরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে বহু পড়ুয়াকেই ফের স্কুলমুখী করা হয়েছিল। তবে চিত্রটা ধূসর বেশিরভাগ জায়গাতেই। এক শিক্ষক আফসোস করে বললেন, ‘‘একটা প্রজন্মের পড়াশোনা অকালেই শেষ হয়ে গেল!’
ফোর্টিন টাইমলাইন, দক্ষিণ ২৪পরগনা।