মঙ্গল গ্রহকে আমরা অনেকে লাল গ্রহ নামেও জানি। আমাদের সৌরমণ্ডলের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ হল মঙ্গল গ্রহ। এটি আমাদের সৌরমন্ডলের চতুর্থ গ্রহ এবং পৃথিবীর সবথেকে কাছের গ্রহ। মঙ্গল গ্রহের নামকরণ করা হয়েছে যুদ্ধের রোমান দেবতার নামে।
- এই গ্রহের উপরিপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ১৪ কোটি ৪৭ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫০০ স্কোয়ার কিলোমিটার, গড় ঘনত্ব ৩.৯৩৩৫ গ্রাম/ঘনসেমি, ব্যাসার্ধ ৩ হাজার ৩৯০ কিলোমিটার। সূর্য থেকে মঙ্গলের দূরত্ব প্রায় ২২৭.৯ কোটি কিলোমিটার।
- পৃথিবী থেকে সেখানে যেতে ৩০০ দিন বা প্রায় 8 মাস সময় লাগে। মঙ্গলে প্রায় ৬৮৬ দিনে এক বছর হয়। যেখানে পৃথিবীতে ৩৬৫ দিনে এক বছর হয়। এর কারণ মঙ্গল সূর্য থেকে আরও দূরে তাই এটিকে প্রদক্ষিণ করতে বেশি সময় লাগে।
- মঙ্গল গ্রহের অক্ষের কাত হল ২৫ ডিগ্রি যার মানে হল গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর মতো ঋতু অনুভব করে কারণ গ্রহের বিভিন্ন অংশ তার কক্ষপথের বিভিন্ন সময়ে সূর্যের কাছাকাছি থাকে। একরকম ভাবে বলা যেতে পারে মঙ্গল গ্রহ পৃথিবীর মতো হ্যাবিট্যাবেল জোনে রয়েছে।
- মঙ্গল গ্রহের ৯৫.৯ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড এবং ২.৭ শতাংশ নাইট্রোজেন থেকে তৈরি একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে। বায়ুমণ্ডল এতই পাতলা যে এটি সূর্যের তাপ আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট ঘন নয় তাই এটি খুব ঠান্ডা – শীতকালে -১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে গ্রীষ্মে টো সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছয়। এই গ্রহের বায়ুমন্ডলে প্রায় ৫ শতাংশ অক্সিজেন রয়েছে।
- মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুবই দুর্বল। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলে মাধ্যাকর্ষণ ৩৭ শতাংশ কম। এর মানে হল যে মঙ্গলে আপনি পৃথিবীর চেয়ে 3 গুণ বেশি লাফ দিতে পারবেন।
- নাসার স্যাটেলাইটের দ্বারা দেখা গিয়েছে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে অনেক চ্যানেল, সমভূমি এবং গিরিখাত রয়েছে যা জল দ্বারা ক্ষয় হওয়ার কারণে হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে তরল আকারে খোলা জল বিলিয়ন বছর আগে ভূপৃষ্ঠে বিদ্যমান ছিল।
- মঙ্গল গ্রহে সূর্য দ্বারা চালিত সহিংস ধুলোর ঝড় কয়েক মাস ধরে চলতে থাকে। ধূলিঝড় সম্পূর্ণরূপে গ্রহটিকে ঢেকে দেয় এবং ক্রমাগত মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠকে পরিবর্তন করতে পারে।
- মঙ্গলের সবচেয়ে বড় গর্ত হল ‘বোরিয়ালিস বেসিন’। এটি প্রান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০ মাইল এবং গ্রহের পৃষ্ঠের ৪০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে।
- মঙ্গল গ্রহে আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় গিরিখাত রয়েছে, নাম ‘ভ্যালেস মেরিনারিস’। এটি ৪ মাইল
- গভীর এবং হাজার হাজার মাইল দীর্ঘ প্রসারিত।
- মঙ্গলে পৃথিবীর মতো উত্তর ও দক্ষিণ মেরু রয়েছে। মেরুগুলি বরফে ঢাকা। কি অবাক হচ্ছেন তো ? হ্যা বরফ রয়েছে মঙ্গলের দুই মেরু তে কিন্তু সেই বরফ হিমায়িত কার্বন ডাই অক্সাইড
অর্থাৎ শুকনো বরফ। - এই গ্রহের উপরিভাগে লৌহ অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকায় এই গ্রহকে লাল দেখায়। মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ আছে, যাদের নাম- ফোবস ও ডিমোস।
মঙ্গলে আজ পর্যন্ত ১৪ টি স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি এখনও সক্রিয় আছে এবং অনবরত কাজ করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু স্যাটেলাইট কক্ষপথে এবং কিছু মঙ্গলের উপরিপৃষ্ঠে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি স্যাটেলাইট আমেরিকার নাসার দ্বারা পাঠানো হয়েছে এবং একটি ভারতের অর্থাৎ ইসরোর দ্বারা পাঠানো হয়েছে। আর ভারতের এই মিশনের নাম ছিল মঙ্গলযান মিশন, যেটা আপনারা অনেকেই জানেন। যা নিয়ে বলিউডে একটি সিনেমায় তৈরি হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে এবং অধ্যয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য রেকর্ড করার জন্য মিশনে মার্স রোভার পাঠিয়েছিল। এই রোভারগুলির মধ্যে কয়েকটি হল ভাইকিং ওয়ান, ভাইকিং টু, মার্স টু, মার্স থ্রি, স্পিরিট, ফিনিক্স, পাথফাইন্ডার, কিউরিওসিটি এবং অপরচুনিটি।
এই গ্রহের পৃষ্ঠতলে ফেরিক অক্সাইডের মাত্রা বেশি থাকার জন্য গ্রহটিকে লালচে রঙের দেখায়, যা খালি চোখে দৃশ্যমান মহাজাগতিক বস্তুগুলির মধ্যে এই গ্রহটিকে স্বতন্ত্রভাবে দর্শনীয় করে তোলে। সেই জন্য এই গ্রহটি “লালগ্রহ” বা ‘রেড প্ল্যানেট’ নামেও পরিচিত।
Fourteen Science Desk