একদিকে যখন ভারতবর্ষে এক আদিবাসী প্রতিনিধি রাষ্ট্রপতির পদ অলংকৃত করেছেন সেখানেই প্রকাশ্য দিবালোকে টাকার বিনিময়ে আদিবাসীদের জমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে সঙ্গে তারা ভূমি সংস্কার দফতরের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন বারবার। এবার আদিবাসীদের কাছ থেকে তাদেরই জমি রেকর্ড করে দেওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ভুয়ো বিরুদ্ধে। এমনকি আরও অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে অন্য আরেক ব্যক্তির জমি আদিবাসীদের নামে রেকর্ড করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সাদলীচক গ্রাম পঞ্চায়েতের সূর্যাপুরা এলাকায়। ঘটনার জেরে হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ওই অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এবং হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ভূমি সংস্কার দফতরের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, ,হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার অর্জুনা এলাকার বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল নামে এক যুবক সদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সূর্যাপুরা গ্রামের ঠাকরাম হেমরম, লক্ষী মার্ডি,ভজু মুর্মু সহ বেশ কয়েকজন আদিবাসীদের কাছ থেকে মোহড়ারের পরিচয় দিয়ে তাদের জমির দলিল সংগ্রহ করে এবং বলে যে জমিগুলি তাদের নামে রেকর্ড করিয়ে দেবে। আর রেকর্ড করাতে গিয়ে পিন্টু মণ্ডল নামে ওই যুবক মুহুরিল পরিচয় দেওয়া ওই যুবক ওই এলাকার বেশ কয়েকজন আদিবাসীর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। পাশাপাশি জানায়, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকদের টাকা খাইয়ে জমির রেকর্ড করিয়ে দেবেন। কিন্তু পরিবর্তে তাদেরকে ভুয়ো রেকর্ডের কাগজ দিয়ে দেন । পরবর্তীতে প্রতারিতরা ওই আদিবাসীরা ভূমি সংস্কার দফতরে গিয়ে জানতে পারেন, দাগ নম্বর এ জমিটি রেকর্ড করা হয়েছে জমিটি তাদের নয় অন্য এক ব্যক্তির। তারা আরও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পিন্টু মণ্ডল নামে কোন ব্যক্তি ভূমি সংস্কার দফতরে মোহড়ার নয়।সে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে তাদের কাছ থেকে জমির রেকর্ড করে দেবে বলে টাকা নিয়েছিল। ঘটনার কথা জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকার আদিবাসীরা।
উল্লেখ্য, আরও জানা যায় পিন্টু মন্ডল ওই ব্যক্তি নিজেকে বাঁচানোর জন্য ঘনঘন নিজের নাম পরিবর্তন করতে থাকে সঙ্গে মোবাইল নম্বরও। এদিকে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে জানতে পারার পরই সূর্যাপুরা গ্রামের আদিবাসীরা মিলিত ভাবে পিন্টু মন্ডলের বিরুদ্ধে ভূমি সংস্কার দপ্তর এবং হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে ভূমি সংস্কার দফতর সঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা জানিয়ে দেয়, খতিয়ান আদিবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল তা এডিট করা। অন্য এক ব্যক্তির জমির দাগ নম্বর আদিবাসীদের ভুয়ো খতিয়ানে বসিয়ে দেওয়া হয়।এই নিয়ে সরব হয়েছেন এলাকার আদিবাসী বাসিন্দারা। তাদের দাবি, ভুয়ো খতিয়ান কাণ্ডে ভূমি সংস্কার দফতরে একাধিক আধিকারিক জড়িত আছে।
এদিকে ঘটনার অভিযোগ পেয়ে তদন্ত নেমেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা। এদিকে দফতরের আধিকারিক ওহিম মিত্র বলেন, আদিবাসীরা যে জমির কাগজ দেখাচ্ছেন সেগুলি এডিট করা। অন্য একজনের জমির দাগ নম্বর আদিবাসীদের খতিয়ানে বসিয়ে দিয়ে তাদেরকে প্রতারিত করা হয়েছে। অন্যদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ব্লক ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ফিরোজ খান জানান, পিন্টু মণ্ডল নামে কোনও মোহরার এই ভূমি সংস্কার দফতর নেই। ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কোন ব্যক্তি এই কাজ করে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও খোঁজ নেব। অপর দিকে আদিবাসীদের অভিযোগ পেয়ে নড়ে চড়ে বসেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি দেওদূত গজমের জানান, অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযুক্তর বিরুদ্ধে তল্লাশি চলছে। আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।