ISKCON : বৈভব ছেড়ে কৃষ্ণপ্রেমে মজেছেন ‘ফোর্ড’ মালিক আলফ্রেড

আরও পড়ুন

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যার আকাশছোঁয়া, সারা পৃথিবীর মানুষ যে কোম্পানিকে এক ডাকে চেনেন, সেই মানুষটিই কিনা বৈভব ছেড়ে কৃষ্ণ প্রেমে নিজেকে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনিই আলফ্রেড ফোর্ড

প্রসঙ্গত, ‘ফোর্ড(Ford)‘ একটি জনপ্রিয় মোটর কোম্পানি। এটি একটি আমেরিকান বহুজাতিক অটোমোবাইল নির্মাণ সংস্থা। এর সদর দফতর মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মিশিগানের ডিয়ারবর্ন -এ অবস্থিত। এই সংস্থাকে হেনরি ফোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তামানে এই কোম্পানির মালিক হেনরি পুত্র আলফ্রেড ফোর্ড। যিনি ভারতে প্রভু অম্বরীশ দাস নামেও পরিচিত।

আমেরিকান ব্যবসায়ী আলফ্রেড ফোর্ডের জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫০ সাল। ‘ফোর্ড’-এর প্রতিষ্ঠাতা হেনরি ফোর্ডের ছেলে তিনি। তাঁর শৈশব আমোদ-প্রমোদে পরিপূর্ণ ছিল। কোনোদিক থেকেই তাঁর জীবনে কোনও অভাব ছিল না। কিন্তু, এতকিছুর পরেও তিনি একাকী অনুভব করতেন। এই একাকীত্বকে দূর করতে অর্থাৎ মনের শান্তির জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে ভারতে আসেন। ভারতে এসে তাঁর ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপদ-র সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর থেকে তাঁর জীবন বদলে যায়। তিনি ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হন। কৃষ্ণপ্রেমে মগ্ন হয়ে যান আলফ্রেড ফোর্ড। এই সময় তিনি হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। এরপরই তিনি ‘আলফ্রেড ফোর্ড’ থেকে ‘অম্বরীশ দাস’-এ পরিবর্তিত হন।

আলফ্রেড ফোর্ড ভারতীয় হয়ে নদীয়া জেলার কৃষ্ণপ্রেমী নারী শর্মিলা ভট্টাচার্য নামের এক ভারতীয় নারীকে বিয়ে করেন। শর্মিলা দেবীও আত্যন্ত কৃষ্ণ ভক্ত। তাদের দুই কন্যা হলেন অনিতা ফোর্ড এবং আনিশা ফোর্ড। আলফ্রেড ফোর্ড ভৌতিক সুখ-সুবিধাকে ত্যাগ করে কৃষ্ণ ভক্তির জন্য তাঁর পুরো জীবন সমর্পন করে দেন। সঙ্গে তিনি নিজের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন ভারতেই বসবাস করছেন। কৃষ্ণভক্ত আলফ্রেড ফোর্ড বলেন, তিনি যেদিন থেকে কৃষ্ণ নাম করছেন এবং ইসকনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সেদিন থেকেই তিনি আগের চাইতে শতগুণে অনেক খুশিতে রয়েছেন। তাঁর কথায়, এই দেশ, এখানের রাজ্যগুলি খুবই সুন্দর। তিনি বিদেশ-সহ ভারতের কিছু জায়গায় ইসকন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছেন।

আমেরিকায় সর্বপ্রথম হাওয়াই দ্বীপে কৃষ্ণমন্দির নির্মাণে তিনি আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। এরপর তিনি তাঁর জন্মস্থান ডেটরাইড শহরে ভাগবত গীতা কালচারাল সেন্টার নির্মাণের জন্য ৫ লক্ষ ডলার দিয়ে সহায়তা করেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বৈদিক কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্যেও তিনি আর্থিকভাবে সাহায্য করেছিলেন। এছাড়াও, তাঁর বিশ্বে সবথেকে বড় ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মন্দির গড়ার ইচ্ছে ছিল। তাঁর সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য তিনি ২০০৯ থেকে ‘টেম্পল অফ দ্য বৈদিক প্লানেটারিয়াম’ নামের একটি প্রজেক্ট শুরু করেন। এই প্রজেক্টটি করার জন্যই তিনি আরও ভারতে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি সারাদিন কৃষ্ণমন্ত্র জপ করার জন্য নিজের গলায় একটি গোমুখী পরে থাকেন।

২০১০ সাল থেকে মায়াপুরে ‘টেম্পল অফ দ্য বৈদিক প্লানেটারিয়াম‘-এর নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ২০২০ সালে এই মন্দিরটির কাজ শেষ হয়। এই মন্দিরটির সম্পূর্ণতার জন্য এখনও এখানে কাজ চ.লছে বলে খবর। এই মন্দিরটির নাম রাখা হয় ‘চন্দ্রোদয়’। এটি প্রায় ৩৮০ ফুট উঁচু।

এই মন্দিরটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৮০০ কোটি খরচ হয়। যার মধ্যে প্রায় আড়াইশো কোটি ফোর্ড কোম্পানি থেকে দেওয়া হয় এবং বাকি টাকা চাঁদার সাহায্যে সংগ্রহ করা হয়। এই মন্দিরের ওপর একটি গম্বুজ দেখতে পাওয়া যায়। এই মন্দিরটি মায়াপুরের বানানোর উদ্দেশ্য হল, মায়াপুর শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মস্থান। আগামী দিনের সারা পৃথিবীর মানুষ এখানে ছুটে আসবেন হরিনাম সংকীর্তন করার লক্ষ্যে।

আলফ্রেড ফোর্ড খ্রিস্টান হয়ে কৃষ্ণভক্তিতে মগ্ন হয়ে যান। তিনি এমনভাবে কৃষ্ণভক্তিতে মিলিয়ে গেছেন যে তিনি এখন কৃষ্ণভক্তদের কাছে এক উদাহরণস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, সবাই যদি কৃষ্ণভক্তিতে মত্ত হয়ে যায়, সব ধর্মকে ত্যাগ করে সনাতন ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যায় তবে সবাই সুখে থাকবে। তিনি বলেন, ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপদ চেয়েছিলেন মায়াপুরের এমন কিছু হোক যা পুরো বিশ্বকে আকর্ষিত করে এখানে সবাইকে নিয়ে আসে। মায়াপুর এমন জায়গা যেখানে শ্রী চৈতন্যদেব জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আর এখানে এমন এক বিশাল মন্দির রয়েছে যেখানে ২০,০০০ জন লোকের থাকার ব্যবস্থা হবে। ইসকনের সব মন্দিরের মতোই এই মন্দিরেও সর্ব ধর্মের মানুষের জন্য অবাধ প্রবেশ দ্বার রয়েছে। আলফ্রেড ফোর্ড স্বয়ং নিজেই সবাইকে এই মন্দিরে আসার জন্য আহ্বান জানান।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় মায়াপুরকে ‘হেরিটেজ সিটি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। প্রতিবছরই এখানে বহু দর্শনার্থীদের ভিড় দেখতে পাওয়া যায়। অভয়চরণ দেব ওরফে প্রভুপাদ সৃষ্ট ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস ওরফে ইসকন (ISKON) বর্তমানে দেশে তো বটেই সারা পৃথিবী জুড়ে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিস্তার করে চলেছে। এই প্রতিষ্ঠান ভক্তবৃন্দ বছরের পর বছর ধরে নিরেমিষ আহার গ্রহণ করে রোগ মুক্ত হয়ে হরিনাম গান করে চলেছেন বিরামহীন ভাবে।

শ্রীপর্ণা কুণ্ডু, ফোর্টিন ওয়েব ডেস্ক।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close