দার্জিলিং-এর নাম শুনলেই বাড়িতে মন টেকানো দায় হয়ে পড়ে এমন বাঙালির সংখ্যা অগুনতি। শুধু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাই নন, সারা ভারত থেকে মানুষ ঘুরতে যায় দার্জিলিঙের মুগ্ধতা উপভোগ করার জন্য। বিশেষ জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার সঙ্গে সেসব জায়গার বিখ্যাত খাবার খাওয়া, এই ব্যাপার দুটো কিন্তু একে অপরের পরিপূরক। তেমনই দার্জিলিঙের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে একটি হল দার্জিলিঙের স্ট্রিটফুড।
দার্জিলিং মানেই আমাদের মনের চোখে ভেসে ওঠে গরম গরম ধোঁয়া ওঠা এক কাপ দার্জিলিং চা, গরম গরম মোমো, ন্যুডলসের মতো সব লোভনীয় খাবার। আজ আপনাদের জানাবো দার্জিলিঙের কিছু বিখ্যাত জিভে জল আনা স্ট্রিটফুড সম্পর্কে। দার্জিলিং গেলে অবশ্যই একবার চেখে দেখতে পারেন এই স্ট্রিটফুডগুলি।
দার্জিলিঙের স্ট্রিটফুড হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং লোভনীয় খাবার হল চিকেন ‘মোমো’। বলতে গেলে, দার্জিলিঙের সমস্ত ছোট বড়ো রেস্ট্যুরেন্টে তিব্বতীয় খাবার হিসেবে পাওয়া যায় এই মোমো। এখানকার মোমো আবার অনেক ভাবে পরিবেশন করা হয়, যেমন- স্টিমড মোমো, ফ্রায়েড মোমো। যা গরম স্যুপের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। প্লেট প্রতি প্রায় ৬-৮ পিস করে দেওয়া হয়৷ মোমো মূলত তৈরি হয় ময়দা দিয়ে, তাতে পুর হিসেবে থাকে সবজি বা মাংস। ভেজ মোমোতে সাধারণত বাঁধাকপি, পেঁয়াজ, লেটুস, চিজ এসব উপকরণ দিয়ে পুর বানানো হয় আর চিকেন মোমোর ক্ষেত্রে সেদ্ধ করা চিকেন দেওয়া হয়। দার্জিলিং ম্যালের পাশের রেঁস্তোরাগুলির চিকেন মোমো বেশ বিখ্যাত। এছাড়াও গান্ধী রোডের রেঁস্তোরার মোমোও বেশ নামকরা।
‘থুকপা’ হল দার্জিলিঙের আরেকটি সুস্বাদু জনপ্রিয় খাবার। এটি মূলত গরম গরম ন্যুডলস যা স্যুপ সহযোগে পরিবেশন করা হয়। তার মধ্যে থাকে বিভিন্ন পুষ্টিকর সবজি, চিজ, ডিম, চিকেন, ব্রেড ক্র্যাম্ব ইত্যাদি। থুকপা যদিও স্টার্টার হিসেবে পরিবেশিত হয়, তবে এটি কিন্তু পেট ভরার মতো একটি খাবার। দার্জিলিঙে ভালো থুকপা পাওয়া যায় দেভেকাস এবং কুঙ্গা রেঁস্তোরাতে।
দার্জিলিঙের বিশেষ খাবারের মধ্যে আরেকটি বিখ্যাত খাবার হল ‘শা ফালে’ বা ‘শাবালে’। যা তৈরি হয় সাধারণত পাঁউরুটি দিয়ে৷ যার মধ্যে পুর হিসেবে ভরা থাকে চিকেন কিংবা বাঁধাকপির পুর৷ পুর ভরে সেগুলোকে গোল অথবা অর্ধেক চাঁদের মতো কেটে প্যানে ডিপ ফ্রাই করা হয়। শা ফালে পরিবেশন করা হয় চাটনি আর চিজ সহযোগে। দার্জিলিঙের যেকোনো রেঁস্তোরাতেই এই শা ফালে পাওয়া যায়।
‘সেকুয়া’ হল দার্জিলিঙের আরেকটি সুস্বাদু, জনপ্রিয় স্ট্রিটফুড। সেকুয়া মূলত কাবাব জাতীয় একটি পদ৷ নেপালিরা তাদের নিজস্ব ধাঁচে এটি তৈরি করে থাকেন৷ এই সেকুয়া বানানোর জন্য প্রথমে কাঁচা মাংসকে বিভিন্ন রকমের মশলা এবং হার্ব দিয়ে ম্যারিনেট করা হয়। তারপর মাংসগুলোকে কাঠের চুলায় সেঁকা হয়। সেকুয়া পরিবেশন করা হয় আদা কুঁচি, লংকা কুঁচি, ধনে পাতা, এবং লেবুর রস সহযোগে। দার্জিলিং ম্যালের পাশে স্থানীয় বাজারের যেকোনো রেঁস্তোরায় এটি বিক্রি হয়।
‘ছুপরী’ হল শৈলশহরের অন্যতম একটি দুগ্ধজাত খাবার। খেতে অনেকটা চিজের মতো সুস্বাদু। নরম এবং শক্ত দুইরকম ভাবেই বানানো হয় এই পদটি। এটি খুব পুষ্টিকর একটি স্ন্যাক এবং একটু অন্যরকম স্বাদের। ছুপরী মোটামুটি দার্জিলিঙের সব রেঁস্তোরাতেই কম বেশি পাওয়া যায়।
ন্যুডলস পছন্দ করেন না এমন ভোজনরসিকের সংখ্যা খুব কম। অনেকভাবেই বানানো যায় এই খাবারটি৷ ঘরোয়া এবং স্ট্রিটফুড দু ভাবেই আমরা ন্যুডলস খেয়ে থাকি। ভেজ, চিকেন ন্যুডলস তো আছেই, পাশাপাশি দার্জিলিঙের হক্কা ন্যুডলস বেশ জনপ্রিয় খাবার। বিভিন্ন রকম সবজি, সয়া সস, চিকেন সহযোগে তৈরি হয় সুস্বাদু এই ন্যুডলস। দার্জিলিঙের রাস্তার ধারের স্টলগুলো থেকে চেখে দেখতে পারেন এই ন্যুডলস। নিঃসন্দেহে জিভে জল এনে দেবে এই খাবার।
তাহলে, ছুটিতে দার্জিলিং বেড়ানোর পাশাপাশি দার্জিলিঙের এই বিখ্যাত খাবারগুলি একবার চেখে দেখুন এই বিশেষ