গরিব হয়ে মৃত্যর কোলে ঢলে পড়ার কারনেই কি শিল্পীকে সহজে ভুলে যেতে পারেন মানুষ! বাস্তবিকই কি শিল্পীকে ভোলা যায়? অথচ এমনই এক শিল্পীর ছবি ডাস্টবিনে পড়ে থাকার খবর ভাইরাল হওয়াতেই শহরবাসী মুখ ঢাকলো লজ্জায়। সোমবার সাতসকালে রায়গঞ্জের ‘বড় বাসার’ প্রয়াত মেয়ে মহুয়া ওরফে সীমা ঘোষের ছবি ভাগাড়ে পড়েছিল। সেইসঙ্গে মিলেছে তাঁর পারিবারিক কিছু বাঁধানো ছবিও। রায়গঞ্জের ওই শিল্পী পরিচিত মুখ হওয়ায় সযত্নে তুলে রেখেছেন মানবিক মূল্যবোধ না হারানো এক সহনাগরিক দম্পতি।
প্রসঙ্গত, রায়গঞ্জ শহরের লিচুতলার “বড় বাসা” শব্দটি বহু পরিচিত নাম। উকিলপাড়ার প্রায় অর্ধেকটি অংশই এক সময় এই পরিবারের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হ’ত। ফি-বছর দুর্গাপুজোয় বহুদূর থেকে মানুষ দুর্গা মায়ের মুখ দেখার পাশাপাশি, বড় বাসার আত্মীয়-স্বজনদের পোশাক দেখতে শহরের উকিলপাড়ার লিচুতলার পুজো মন্ডপের সামনে ভিড় জমাতেন। ধীরে ধীরে তাদের পরিবারের প্রধানদের মৃত্যুর পর সম্পত্তিগুলিও বিক্রি হতে থাকে। একসময় কপর্ধকশূন্য হয়ে পড়েন সীমা ওরফে মহুয়া ঘোষ। আর্থিক সংকটের পাশাপাশি অনারোগ্য ব্যাধিই অল্প বয়সে তাঁর প্রাণ কেড়ে নেয়। এরপর সীমাদেবীর অনুরাগী এবং শুভানুধ্যায়ীরা তাঁর স্মৃতি আঁকড়েই বেঁচে ছিলেন। অথচ সীমা ঘোষের ছবি ডাস্টবিনে ফেলায় রীতিমতো কুপিত এবং ক্ষুব্ধ হন মানুষ। তারা সমবেতভাবে ওই মানুষটির খোঁজ করছেন।
উল্লেখ্য, রায়গঞ্জের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক চরিত্র ছিলেন সীমা ঘোষ। যে মানুষটি সব বয়সের মানুষের কাছে সীমাদি নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তিনি পরলোক গমন করার পরেও সর্বস্তরের মানুষেরা শোক জ্ঞাপন করতে থাকেন, রায়গঞ্জের জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘নর্দার্ন এক্সপ্রেস’ খবরের কাগজে সীমা ঘোষের মৃত্যুর খবর প্রথম পাতায় শিরোনাম হয়। প্রকাশিত হয় রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার লিচুতলার বড় বাসার আদুরে কন্যা সীমা ঘোষের মৃত্যুর করুন কাহিনী। এছাড়াও বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে শোকবার্তার পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দ ব্যয় করেন লেখক, সাংবাদিক সহ অসংখ্য মানুষ। কিন্তু সোমবার সকালে হঠাৎ করেই রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার একটি জনপ্রিয় আবাসনের বিপরীতে পড়েছিল সীমা ওরফে মহুয়া ঘোষের বাঁধানো ছবি। স্থানীয় বাসিন্দা পার্থপ্রতিম অধিকারী ও তার স্ত্রী সীমাদেবীদের ছবি দেখতে পেয়ে তাদের বাড়িতে এনে সযত্নে তা তুলে রেখেছেন। তারপর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন রায়গঞ্জবাসী। এঘটনার তীব্র নিন্দা করেন রায়গঞ্জ কালচারাল ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শান্তনু চট্টোপাধ্যায়।
তবে মানবিক বিষয়গুলি নিয়ে মানুষের বিবেক যে কবে জাগ্রত হবে তা অবশ্য সময়ই বলবে
রায়গঞ্জের উকিলপাড়া থেকে প্রবাল সাহার রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।