বিহারের গয়া জংশনটি অত্যন্ত বড় মাপের রেল স্টেশন হলেও উত্তর বাংলা থেকে সরাসরি গয়াতে পৌঁছনোর রেলগাড়ি আজও সংখ্যায় কম রয়েছে। অসমের কামাখ্যা-গয়া সাপ্তাহিক রেল গাড়ি রয়েছে। বর্তমানে তা বন্ধ। বেশিরভাগ মানুষই পাটনা হয়ে গয়াতে পৌঁছন। হাওড়া থেকে গয়া পর্যন্ত কিছু রেলগাড়ি রয়েছে হাওড়া গয়া এক্সপ্রেস, এছাড়াও গয়ার উপর দিয়ে হাওড়া থেকে বেশ কিছু রেলগাড়ি রয়েছে দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছয়। শিয়ালদা স্টেশন থেকে রয়েছে গয়াগামী রেলগাড়ি আছে।
উত্তরবঙ্গ থেকে গয়া পৌঁছতে হলে প্রথমে পাটনা স্টেশনে যেতে হবে। পাটনা স্টেশন থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরে রয়েছে গয়া স্টেশন। ভোর পাঁচটা থেকে এক ঘন্টা অন্তর অন্তর রেলগাড়ি রয়েছে। ওই রেল গাড়িটি যথাক্রমে ৮-৯ এবং ১০ নম্বর পাটনা রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়ছে। গয়া জংশনে সাতটি প্লাটফর্ম রয়েছে। গয়া স্টেশন থেকে ফোল্গু নদীর দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। দৈনিক অসংখ্য মানুষ এখানে যাতায়াত করেন। গয়া স্টেশন থেকে পান্ডার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে ১০০ টাকা ভাড়া লাগে রিজার্ভ অটো রিকশোতে। পান্ডার বাড়িতেই ধর্মশালা রয়েছে। পান্ডার বাড়িতে থাকা এবং পিণ্ডদান পর্যন্ত একজনের পিন্ডদান বাবদ চার হাজার টাকা গুনতে হয়। পান্ডার বাড়ির ধর্মশালায় ৬০ টাকা নিরামিষ খাবারের প্লেট। এক কাপ চা দশ টাকা। একটা রুম সঙ্গে এটাচ বাথরুম তার জন্য কোনও বাড়তি পয়সা গুনতে হয় না।রান্নার ব্যবস্থা পান্ডা নিয়ন্ত্রিত ধর্মশালা কর্তৃপক্ষেরই। সকাল সকাল পৌঁছে সেদিনই পৌঁছে পিন্ডদান করা যেতে পারে। অন্যথায় রাত্রি যাপন করে পরদিন পিণ্ডদান করে ফিরতে পারেন মানুষ। মস্তক মুণ্ডন থেকে শুরু করে ফোল্গু নদীতে পিন্ডদান পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই ঘন্টা। এরপর বিষ্ণু মন্দির পরিক্রমায় সময় লাগে ১ ঘন্টা। ওই বটবৃক্ষের তলায় সীতাদেবী বসে পিন্ডদান করেছিলেন। জনশ্রুতিতে আছে- এই বটবৃক্ষটি ত্রেতা যুগ থেকে এখনো সবুজ পাতা নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ওই গাছের ছবি তোলা নিষেধ। তোলা যাবে না বিষ্ণু মন্দিরের ছবিও। মানুষ বহুদূর থেকেই ছবি তোলেন । প্রসঙ্গত, পিন্ডদান করতে যাওয়া মানুষ অতি অবশ্যই বুদ্ধগয়া দর্শনে যান।
ফোল্গুনদী সংলগ্ন ধর্মশালা থেকে থেকে বুদ্ধগয়া পর্যন্ত দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। অটো রিক্শো রিজার্ভ করে পৌঁছতে হয় সেখানে। অটোচালকেরা পরিবার পিছু যাওয়া-আসার ভাড়া হাঁকেন ৫০০ টাকা। জনবহুল এলাকা হওয়ার কারণে এক ঘন্টা সময় লাগে সেখানে পৌঁছতে। এই বুদ্ধগয়াতেই গৌতম বুদ্ধ জ্ঞানার্জন করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। সেইসঙ্গে তিনি দেহত্যাগও করেছিলেন এখানেই। বহু দেশ-বিদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুক থেকে শুরু করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানে বুদ্ধমূর্তি দর্শনে আসেন। বিধর্মী মানুষেরাও পৌঁছন সেখানে। প্রায় ৫০০ মিটার দূর থেকে জুতো খুলে রাখার ব্যবস্থা এবং মোবাইল রাখার জন্য আলাদা কাউন্টার রয়েছে। চূড়ান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই দর্শনার্থীদের সেখানে ঢুকতে দেওয়ার অনুমোদন করা হয়। প্রায় দু’ঘন্টা সময় লাগে এলাকাটি ঘুরে দেখতে।
বিহারের বুদ্ধগয়া ঘুরে এসে সরিতা পান্ডের রিপোর্ট, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।