শশীলজ
ময়মনসিংহ
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে পা রাখলে মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িতে শশীলজ ঘুরে আসা চাই। শশীলজের নির্মাণশৈলী মানুষকে আকৃষ্ট করবেই।
শশীলজ ভবনটি ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। অনন্য স্থাপত্য গঠনশৈলীর কারণ ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃতি বিসওয়াল মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়।
মুক্তাগাছার জমিদার বংশের উত্তরসূরী নিঃসন্তান মহারাজ সূর্যকান্ত আচার্য্য চৌধুরী তাঁর দত্তক পুত্র শশীকান্তের নামানুসারে ময়মনসিংহ শহরে এই বিলাসবহুল দোতলা প্রসাদ নির্মাণ করেন। সুরম্য এই অট্টালিকা পারিস ও ইউরোপের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত নানা ধরণের সৌখিন উপকরণ দিয়ে সজ্জিত ছিল। কিন্তু ১৮৯৭ সালের জুন মাসে প্রবল ভূমিকম্পে বিদ্ধস্ত হওয়ার পর ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মহারাজা শশীকান্ত পুনরায় একতলা বিশিষ্ট স্থাপত্যটি নির্মাণ করেন।
প্রায় ২৭ বিঘে জমিজুড়ে বিস্তৃত প্রাসাদটির প্রবেশমুখে রয়েছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানাকৃতির প্রবেশতোরণ। প্রবেশতোরণ ধরে প্রাসাদের দিকে যেতে চোখ পড়বে সবুজ ঘাসের বাগান , যেখানে অলংকৃত মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি ঝরণার মাঝে রয়েছে একটি সুন্দর ভাস্কর্য।
মূল ভবনটির পশ্চিমদিকে কটি পুরনো পুকুর রয়েছে। যার উত্তরপাড়ের মধ্যস্থলে একটি মার্বেল পাথরের ঘাটের উপর দোতলা একটি স্নানঘর অবস্থিত।
প্রাসাদের অভ্যন্তরে ছিল মার্বেল পাথরের অলংকরণের তৈরি একটি চমৎকার ঝরণা ,কাঠের মেঝে দিয়ে নির্মিত বলরুম। আলোকসজ্জার জন্য ঝুলানো ছিল বড়সড় ঝাড়বাতি। প্রাসাদটির দরজায় এবং জানালায় ছিল রঙ্গিন কাঁচের পাতের উপর অত্যন্ত চমৎকার অলংকরণ। বর্তমানে ওই প্রাসাদে বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতত্ত্ব প্রদর্শিত হচ্ছে। তারমধ্যে হাতির দাঁত ও কাঠ দিয়ে নির্মিত সোফা,মার্বেল পাথরের গোলটেবিল , ব্রিটিশ আমলের কাঠের কর্নার শোকেস , কালো ও শ্বেতপাথরের মূর্তি , অলংকৃত পাথর ও ইটসহ অন্যান্য প্রত্নতত্ত্ব উলেখযোগ্য।
শশীলজ ছাড়াও ময়মনসিংহ অঞ্চলের সংরক্ষিত প্রত্নস্থলের মধ্যে রয়েছে আলেকজান্ডার ক্যাসেল,মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি ,হররামেশ্বর মন্দির , পাথরের শিবমন্দির , আটাআনী জমিদার বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা। যা দেখতে আজও ভিড় করেন অগুনতি পর্যটকরা।
কবিতা
সি- অফ
কমলেশ গোস্বামী।
ছেলে আমার বাইরে থাকে,মস্ত অফিসার
বছর শেষে ছুটিসে পায়,মাত্র একবার
নাতি এখন একটু বড় ক্লাস থ্রি হলো
নানা ভষা শেখার চাপে, বাংলা ভুলে গেল
দুচারটে বাংলা কথাবলে কোন মতে
ইংরেজিতে সড় গড়, বোঝায় ইংরেজিতে
বলতে না পারলেও,সেকিন্তু সব কিছুই বোঝে,
ঠাম,দাদানকে,বোঝাতে গেলেই,ইংরেজিটাখোঁজে।
নাতি ভালোবাসে ঠাম,করে কত রান্না
যাবার দিন এসে গেল,নাতির সেকি কান্না
ওর ভাষায় বলে, ঠাম! থাকব দুশো দিন,
বাবা বলেন আসবো আবার, মাঝে কয়েক দিন।
ঠাম কাঁদে, দাদান কাঁদে, কাঁদে ছোট্ট নাতি,
ভাষার বাধা দুরেসরেযায় জেতে হৃদয় আকুতি।
গাড়ি ছাড়ে নাতিবলে, আবার হবে দেখা।
দাদান,ঠাম ফিরে আসে,দুজনে আবার একা।
রবীন্দ্রনাথ
কৌস্তুভ দে সরকার
শিলাইদহ যাইনি কোনোদিন,
জোড়াসাঁকোতেও না ।
বিশ্বভারতীতে পড়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি,
তবুও তুমি যেন কত চেনা।
নীচু ক্লাস থেকে পড়ে আসা সমস্ত কবিতা মুখস্ত আজো
বাসে, ট্রামে, ট্রেনে, রিক্সা, টোটোতে সর্বত্রই তুমি বিরাজ।
নেতাদের সব বক্তৃতা মাঝে তোমার কবিতা শুনি
তোমাকে নিয়ে কত কথা লেখে, বলে, কত জ্ঞানীগুণী।
নতুন বৌঠানকেও কোনোদিন দেখতে পেলাম না
রাণু। কোনোদিন তাকে কোনো মেলাতে দেখলাম না।
তোমার অগাধ সমুদ্র সৈকতে পড়ে রয়েছি আজো।
এক জীবনে এত লেখা কি করে সম্ভব, সেটা ভাবি!
সেইসব সব বাঙালি পড়ে উঠতে পারেনি আজো।
শ্রীনিকেতন, কখনো যাইনি।
শিলং পাহাড়েও যেতে পারিনি।
সামান্য দূরেই মংপু,
সেখানেও নাকি তোমার স্মৃতি জড়ানো, দেখা হয়নি।
কতকিছু তোমার সম্পর্কে জানা শোনা বাকি থেকে গেল
পঁচিশে বৈশাখ, বাইশে শ্রাবণ বারবার আসে আর যায়
আর আমার বুকের ভেতর
তোমাকে
তোমার সমগ্র পেতে, জানতে, স্পৃহা বেড়ে যায়।
জানি, জানি, এবং একেই সত্য বলে মানি –
যতজন বাঙালি ও বাংলাভাষা বেঁচে থাকবে,
ততদিন তুমি চিরভাস্বর থেকে যাবে – রবীন্দ্রনাথ।