‘দ্য ইন্ডিয়ান এথনিক‘ এখন রেডিমেড জামাকাপড়ের দুনিয়ার এক বিখ্যাত নাম। মুম্বাইতে অবস্থিত এই কোম্পানি ব্যবসা শুরু করেছিল মাত্র ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। এখন বছর গেলে তারা আয় করছেন প্রায় ১৫-১৬ কোটি টাকা। দ্য ইন্ডিয়ান এথনিকের পথ চলা শুরু হয়েছিল গত ২০১৬ সাল থেকে। মা এবং মেয়ে মিলে চালু করে এই কোম্পানি। তখন নিতান্তই আবেগের বশে এই প্রকল্প চালু করে তাঁরা।
দ্য ইন্ডিয়ান এথনিকের সহ প্রতিষ্ঠাতা লেখনী দেশাই জানান, তাঁরা তাঁদের মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাটের একটি ঘরে এই ব্যবসা শুরু করে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। এখন তাঁদের বার্ষিক টার্ন ওভার ১৫ কোটি টাকা। তাঁদের কোম্পানি এখন সারা দেশে ভারতীয় তাঁতি এবং কারিগরদের উদযাপন করে। লেখনী আরও বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি আর তাঁর বোন মায়ের হাতের ডিজাইন করা পোশাক পরেই বড় হয়েছেন। দোকান থেকে কোনও রেডিমেড পোশাক কিনে পরেননি তাঁরা।
কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা লেখনীর মা হেতাল দেশাই বরাবরই ফ্যাশনের সম্পর্কে ভীষণ নিখুঁত। ৫৮ বছর বয়সী হেতাল প্রায় তিন দশক ধরে তাঁর দুই মেয়ে লেখনী এবং টোয়ারার জন্য বিভিন্ন পোশাক ডিজাইন করে আসছেন। হেতাল নিজে কখনও ফ্যাশন অথবা আধুনিক ডিজাইন সম্পর্কে কোথাও কোনও প্রশিক্ষণ নেননি। এক প্রকার শখেই এই কাজ তিনি করে এসেছেন। লেখনীকে ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রদর্শনীতে নিয়ে যেতেন তিনি। বরাবরই ভালো এবং অত্যাধুনিক জামাকাপড়ের প্রতি নজর ছিল হেতালের। বাজার থেকে সেরা ডিজাইন এবং তার উপকরণ বেছে নিয়ে আসতেন মেয়েদের পোশাক তৈরি করে দেবেন বলে।
হেতালের হাতের কাজ দেখে মুগ্ধ তাঁর পরিবারের সদস্যরা এবং প্রতিবেশীরা। ধীরে ধীরে তাঁরাও হেতালের কাছে আসেন পোশাক ডিজাইন করতে। ২০১৬ সালে দ্য ইন্ডিয়ান এথনিকের সূচনা করার আগে হেতাল কয়েকজন দর্জির সঙ্গে একটি ডিজাইন ইউনিট পরিচালনা করতেন। তখন তাঁর ক্লায়েন্ট ছিল বলিউডের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। কিন্তু, মেয়েদের মানুষ করার জন্যে পরে এই ইউনিট পরিচালনার কাজ ছেড়ে দেন হেতাল।
বর্তমানে দ্য ইন্ডিয়ান এথনিকের একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। লেখনীর কথায়, তাঁদের কোম্পানির ফেসবুক পেজটি খোলা হয়েছিল সন্ধ্যেবেলা। তাঁরা তাঁদের নিজেদের কোম্পানির কিছু পোশাক পরে ছবি তুলে, সেগুলো পেজে আপলোড করেন। তা দেখে গোয়া থেকে তাঁদের প্রথম অর্ডার আসে। প্রথম অর্ডার পেয়েই আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে তাঁদের। এরপর তাঁদের কাছে অর্ডার আসে কেরালা থেকে। তিনি জানান, এই ব্যবসার মাধ্যমে তাঁরা কারিগরদের একটি উপযুক্ত জীবিকা অর্জনে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন। বর্তমানে, মুম্বাই শহরে তাঁদের ৩ টি অফিস রয়েছে। প্রায় ২৫ জনেরও বেশি কর্মচারী কাজ করেন তাঁদের এই কোম্পানিতে।
বর্তমানে ১০০ জনেরও বেশি কারিগর রয়েছে তাঁদের। তাঁদের কুর্তার দাম শুরু হয় প্রায় ১৮০০ টাকা থেকে এবং শাড়ির দাম শুরু হয় ১৭০০ টাকা থেকে। লেখনী জানান, এই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের কোম্পানি এখন অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি জায়গার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। মা মেয়ের এই কোম্পানি দেশ ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায়।