অসমের বন্যা পরিস্থিতি রীতিমতো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বন্যার জেরে বিপর্যস্ত সেখানকার জনজীবন। মাত্র কয়েক মিনিটের জল কাদার স্রোতে প্রায় ভেসে গেল অসমের হাফলং স্টেশন। এরই মধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বরাক উপত্যকার সঙ্গে রেল এবং সড়ক যোগাযোগ। ভারতীয় বায়ু সেনারা নেমেছে এর উদ্ধার কার্যে। শুধু অসমই নয়, প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে অরুণাচল প্রদেশের বিস্তীর্ণ কিছু এলাকা।
উল্লেখ্য, হাফলং স্টেশন চত্বরকে রীতিমতো ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে কাদাজলের স্রোত। জলের স্রোত এতটাই তীব্র ছিল যে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগি উল্টে যায় জলের ধাক্কায়। বন্যায় ডুবে গিয়েছে আরও বেশ কিছু রেল লাইন। শিলচর, আগরতলা সহ উত্তর-পূর্বের একাংশের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের রেল যোগাযোগও পুরোপুরি ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
ক্রমাগত বৃষ্টির জেরে অসমের বাকসা, বাজালি, কাছাড়, দারাং, চড়াইদেও, ডিব্রুগড়, ডিমা, কামরূপ, হাসাও, শোনিতপুর, মাজালি, নওগাঁও, ধেমাজি সহ প্রায় কুড়িটি জেলা ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। তবে জানা যাচ্ছে, এসব জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হোজাই এবং কাছাড় জেলায়। খবর সূত্রে জানা গিয়েছে, হোজাই জেলাতে প্রায় ৭৯ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। অন্যদিকে, কাছাড় জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৫২ হাজার মানুষ।
সূত্রের খবর, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা একটি ট্যুইট করে জানিয়েছেন, “ক্রমাগত ভারী বর্ষণ এবং তার ফলে ভূমিধ্বসের জেরে অসমের যোগাযোগ ব্যবস্থা রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ ডিমা, হাসাও জেলা থেকে বন্যায় আটকে পড়া ১১৯ জন যাত্রীকে আকাশ পথে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ইতিমধ্যেই। বায়ুসেনা, সেনা বাহিনী, জেলা প্রশাসন, রেল এবং এএসডিএমএ-এর প্রত্যেককে আমি কুর্নিশ জানাই।”
অন্যদিকে, এই বন্যার জেরে অরুণাচল প্রদেশের অবস্থাও রীতিমতো ভয়ংকর। সরকার থেকে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, রবিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দুটি ভূমিধ্বসের ফলে মোট পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা আরও ছয় জন। সেখানকার ৪১৫ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ইটানগর এবং নাহারলাগুনের মধ্যে মোদিরিজো গ্রামে বেশ কিছু বাড়ি ভেসে গিয়েছে বন্যার জলের স্রোতে।
এদিকে, এরই মধ্যে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুত পরিষেবা চালু করার কাজ শুরু করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। জানা গিয়েছে, বন্যার জেরে কাছাড় জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। অসমের মোট ৬৫২ টি গ্রাম বন্যার জেরে তছনছ হয়ে গিয়েছে। প্রায় দু লক্ষের বেশি মানুষ পড়েছে ভয়াবহ বন্যার কবলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যে বর্ষা আসতে এখনও কিছু সময় দেরি আছে। বর্ষা প্রবেশের আগেই বন্যায় ভাসছে প্রতিবেশী রাজ্য অসম।