টানা প্রায় সাত বছর জেলের অন্ধকারে কাটিয়ে অবশেষে জামিন পেলেন শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়। গতকাল অর্থাৎ শুক্রবারই বাইকুল্লা জেল থেকে মুক্তি পেলেন তিনি। নিজের মেয়ে শিনাকে হত্যা করার অভিযোগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন ইন্দ্রাণী। বিগত ২০১৫ সাল থেকে জেলে বন্দী ছিলেন তিনি। এর আগে বহুবার জামিনের জন্য আবেদন করেন তিনি, কিন্তু বারংবারই তা খারিজ করে দেয় আদালত।
উল্লেখ্য, এদিন জেল থেকে বেরিয়েই ইন্দ্রাণী বলেন, “যারা এতদিন আমায় কষ্ট দিয়েছে, আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।” চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারী মাসে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ইন্দ্রাণী। অবশেষে বৃহস্পতিবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করল শীর্ষ আদালত। আদালতের তরফ থেকে এদিন বলা হয়, “সাড়ে ছয় বছর একটা দীর্ঘ সময়। আমরা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুর করলাম।”
তবে, জানা গিয়েছে এই মামলার বিচার খুব তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে আরও জানানো হয়, এই মামলায় আরেকজন অভিযুক্ত পিটার মুখোপাধ্যায় গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জামিন পেয়েছিলেন। এদিকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সিবিআইকে একটি চিঠি লেখেন ইন্দ্রাণী। সেই চিঠিতে তিনি দাবি করে লেখেন যে, শিনা এখনও বেঁচে রয়েছে। সে এখন কাশ্মীরে রয়েছে। সিবিআইকে এর তদন্তও করতে বলেন তিনি।
জেল থেকে বেরোনোর পর এদিন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই মুহুর্তে আমি মামলার ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না। বিষয়টি এখনও আদালতে বিচারের অধীনে রয়েছে৷ আমি এখন জীবনটাকে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে শুরু করেছি। সমস্ত স্তরের মানুষের সঙ্গে আমি মিশেছি। এটা একটা বিরাট যাত্রা। কিভাবে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে হয়, তা আমি খুব ভালো করেই শিখেছি এতদিনে। আজ আমি খুব খুশি। জেলে এতদিন অনেক কিছুই শিখেছি। অবশেষে আজ বাড়ি ফিরছি। আলাদা করে এখনও কোনও পরিকল্পনা নেই।”
সুপ্রিম কোর্টের তরফে জানা গিয়েছে, সবে মাত্র ৫০ শতাংশ সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল খুন হয়েছিলেন শিনা বোরা। তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায় মহারাষ্ট্রের রায়গড় জঙ্গলে। পিটার মুখোপাধ্যায়ের ছেলে রাহুলের সঙ্গে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিনা। সেই কারণেই প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হয়, ইন্দ্রাণী এবং পিটার দুজনে মিলে ষড়যন্ত্র করে শিনাকে হত্যা করে। পরে এই কেস চলে যায় সিবিআইয়ের হাতে। ২০১৯ সালে জেলে থাকাকালীনই পিটার এবং ইন্দ্রাণীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। জানা যায়, জেল থেকে জামিন পেলেও দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না ইন্দ্রাণী। সুপ্রিম কোর্টের শর্ত অনুযায়ী, সাক্ষীদের সঙ্গে কোনওরকম যোগাযোগও করতে পারবেন না তিনি।