ভারতের একমাত্র ট্রেন, যাতে ভ্রমণ করতে টিকিট লাগে না

আরও পড়ুন

আমাদের দেশে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ট্রেনকেই ধরা হয়। এক কথায় বলতে গেলে ট্রেনই আমাদের যাতায়াতের লাইফ লাইন। বেশিরভাগ মানুষই ট্রেন সফরকে অনেক আরামের মনে করেন, এবং একেই প্রাধান্য দেন। দূরের সফরে ট্রেন যাত্রায় যেমনি অন্যান্য যানবাহনের চাইতে খরচ কম হয়, পাশাপাশি ট্রেন জার্নিতে অতটা ধকল হয় না বলেই মনে করেন বেশিরভাগ মানুষ। বলতে গেলে ট্রেন জার্নি বেশ আরামদায়কই এবং উপভোগ্য। 

ভাকরা রেল

আমাদের দেশে এমন একটি ট্রেন চলে, যাতে উঠতে কোনওরকম ভাড়া লাগে না। বিনা খরচে যাত্রীরা এই ট্রেনে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াত করতে পারেন অনায়াসে। ট্রেনটিতে আইনত কোনও ভাড়া নেওয়া হয় না, এই ট্রেনে টিকিট না কেটে ওঠাও কোনও অপরাধ নয়। এ এক চমকে দেওয়া তথ্য। ভারতের এই টিকিট বিহীন ট্রেনটি চলাচল করে হিমাচল প্রদেশ থেকে পাঞ্জাব সীমান্তের মধ্যে। কেউ যদি ভাকরা নাগাল ড্যাম ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিনা খরচে এই ভ্রমণ করতে পারবেন। ট্রেনটি ভাকরা রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে, যা হিমাচল প্রদেশের ভাকরা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।

উল্লেখ্য, ভাকরা রেলস্টেশন থেকে এই ট্রেনটি তার যাত্রা শুরু করে ১৯৪৯ সালে। গত ৭৩ বছর ধরে সেখানকার অন্তত ২৫ টি গ্রামের মানুষ বিনামূল্যে এই ট্রেনে ভ্রমণ করছে। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ জন যাত্রী এই ট্রেনে ভ্রমণ করেন। যাত্রীদের মধ্যে বেশীরভাগই স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরাই থাকেন। এই ট্রেনটি চেনা খুবই সহজ। তার কারণ, এই ট্রেনের সবকটি বগিই কাঠ দিয়ে তৈরি। ট্রেনে কোনও হকার ওঠেন না, নেই কোনও টিটিও। ট্রেনটি চলে ডিজেলে, যা চালাতে প্রতিদিন ৫০ লিটার ডিজেল খরচ হয়।

সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে তৈরি ট্রেনের বগি

এই ট্রেনের ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর থেকে এক টানা চলে ট্রেনটি। পাঞ্জাব সীমান্ত থেকে ভাকরা রেলস্টেশনে ফিরে এসে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনের ইঞ্জিন। ট্রেনটি যাতায়াত করে ভাকরা বাঁধ হয়ে বারমালা, ওলিন্দা, স্বামীপুর, হ্যান্ডোলা, নেহলা, কালাকুন্ড, খেদা, বাগ, নাঙ্গল, সলংদি, লিডকোট, এবং গোলথাইয়ের মতো দূরবর্তী গ্রামগুলোর মধ্যে দিয়ে। ট্রেনটির মোট বগির সংখ্যা ৩। ট্রেনটি চালু হওয়ার পর  প্রথম দিকে ১০ টি করে বগি ছিল, পরে তা কমিয়ে আনা হয়। ৩ টি বগির মধ্যে একটি থাকে মহিলাদের জন্য। আরেকটি সংরক্ষিত থাকে পর্যটকদের জন্য। ৩ বগি যুক্ত এই ট্রেনের একটি রাউন্ড সম্পূর্ণ করতে প্রায় সময় লাগে ৪০ মিনিট। 

ট্রেনটি সকাল ৭টা ৫ মিনিট নাগাদ পাঞ্জাব সীমান্তের নাঙ্গল গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করে, এবং ভাকরা স্টেশনে পৌঁছায় সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট নাগাদ। ভারতীয় রেল যখন একদিকে ট্রেনের ভাড়া ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছে, তখন এই ট্রেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চালানোর কারণ কি, এমনটা মনে হতেই পারে। এই ট্রেন বিনামূল্যে চালানোর অন্যতম কারণ হল ভাকরা বাঁধ। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই মূলত যা তৈরি করা হয়েছিল। ভাকরা বিয়াস ম্যানেজমেন্ট বোর্ড অর্থাৎ বিবিএমবি এই ট্রেন চালানোর দায়িত্ব গ্রহণ করে। 

এই ট্রেন চালানোর জন্য পাহাড় কেটে কেটে রেলপথ তৈরি করা হয়। ম্যানেজমেন্ট বোর্ড চেয়েছিল যে, ভাকরা বাঁধ সম্পর্কে দেশের যুবকদের যাতে জ্ঞান হয় এবং তারা যেন এই বাঁধ দেখতে হিমাচল প্রদেশে আসে। এই উদ্দেশ্যেই বিনামূল্যে চালু করা হয় এই ট্রেন পরিষেবা। ১৯৬৩ সালে এই ভাকরা বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। যা ২২৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। বিবিএমবি-এর কর্মকর্তারা চান এই দেশের প্রত্যেকটি নাগরিক এই বাঁধের ইতিহাস, নির্মাণ সম্পর্কে জানুক। তার জন্যই পাঞ্জাব সীমান্ত থেকে ভাকরা ড্যাম পর্যন্ত এই ট্রেনে  সম্পূর্ণ বিনা খরচায় ভ্রমণ করা যায়। ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তিরা এবার একবার ঘুরে আসতেই পারেন ভাকরা ড্যাম। সম্পূর্ণ বিনা খরচায় ট্রেনের জানলার ধারে বসে ভাকরা বাঁধের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেরিয়ে পড়ুন জলদি। 

ভাকরা-নাগাল ড্যাম

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close