রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় নন, রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাজ্য মন্ত্রীসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করার লক্ষ্যে বিধানসভায় অতি সত্ত্বর একটি বিল পেশ করতে চলেছে সরকার। এই বিল বিধানসভায় পাশ হয়ে গেলেই রেকর্ড গড়বেন মুখ্যমন্ত্রী। দেশের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনিই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হয়ে নজির গড়বেন।
এদিন এ বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, “মন্ত্রীসভার বৈঠকে সবার সম্মতি নিয়ে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, আমাদের রাজ্যে যতগুলি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তার সবকটিতে রাজ্যপালের পরিবর্তে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করতে চেয়ে একটি বিল আনা হবে বিধানসভায়।” এর আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আচার্য রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করেছে। গত ২০১৭ সালে এই বিষয় নিয়ে বিধানসভায় আইন পরিবর্তন করে যাবতীয় ক্ষমতা উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচার্য হলে উপাচার্য নিয়োগের উচ্চশিক্ষা দফতরের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে পাঠাতে হবে। আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল শুধু উপাচার্যই নিয়োগ করেন না, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের অধিকারী হিসেবে সমাবর্তনে তিনিই প্রধান অতিথি হন। পড়ুয়াদের হাতে শংসাপত্র, পদক ইত্যাদি তাঁর হাত দিয়েই তুলে দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আচার্য হলে এবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের বদলে সেই ভূমিকা পালন করবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, রাজ্যপালদের সাংবিধানিক ক্ষমতার পরিধি নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। তার মধ্যে একটি অন্যতম পুরোনো ইস্যু হল তাঁদের আচার্য পদ। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য পদে বসানোর তোড়জোড় বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সরকারি ভাবে এবার তাতে সিলমোহল দেওয়া হল। এদিন রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণকে ঘিরে নানা তর্কবিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক এবং শিক্ষা মহল জুড়ে।
এই বিষয়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন যে, “সম্পূর্ণ ক্ষমতা নিজের হাতে আনতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বৈরাচারের চরম সীমায় চলে গিয়েছে। একনায়কতন্ত্র চলছে রাজ্য জুড়ে। এরপর তৃণমূলের মন্ত্রীসভা হয়তো সংবিধানকেও অগ্রাহ্য করার প্রস্তাব দেবে। রীতিমতো দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হতে চলেছে এই রাজ্য। নিজেই নিজেকে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার দিচ্ছেন। সবকিছুরই একটা সীমা থাকা দরকার।”
এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিপিএম নেতারাও। এদিন দলের তরফ থেকে সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এটা তো খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। যে মুখ্যমন্ত্রী এপাং ওপাং ঝাপাং, আমরা সবাই ড্যাং ড্যাং ড্যাং লিখতে পারেন, তিনি ছাড়া আচার্য পদে বসার যোগ্য আর কেই বা আছেন! ওঁনার থেকে বেশি যোগ্যতা আর কারও নেই এ রাজ্যে। শিক্ষা দফতর বুঝে গিয়েছে যে, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি ধামা চাপা দিতে মুখ্যমন্ত্রীকেই এবার আচার্য করতে হবে।”