স্ট্রবেরি চাষে বাণিজ্যিক আয় ব্যাপক, জেনে নিন স্ট্রবেরি চাষের কৌশল ।

আরও পড়ুন

স্ট্রবেরি, নামেই একটি হাই ভ্যালু ক্রপ বা দামি ফল। বর্তমানে বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও স্ট্রবেরি চাষের বেশ ভালো ফলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার সঙ্গে এর বাণিজ্যিক মুনাফাও বাড়ছে। স্ট্রবেরি মূলত ছোট ঝোপ জাতীয় লতানো প্রকৃতির গাছ। এ গাছের শক্ত কোনও কান্ড বা ডালপালা নেই। পাতা সবুজ হয়, কিনার গুলো খাঁজকাটা, পাতার বোঁটা লম্বা, সরু এবং নরম হয়। মূলত সাদা বা ঘিয়া রঙের ফুল হয় এই গাছে। তবে, এই গাছের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হল এর ফল। কাঁচা অবস্থায় স্ট্রবেরির রঙ হয় সবুজ, পাকলে তা হয় টকটকে লাল রঙের।

আকর্ষণীয় রঙ, গন্ধ, এবং উচ্চমানের পুষ্টির জন্য স্ট্রবেরি একটি জনপ্রিয় ফল। এই ফলে ভিটামিন সি ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। এটি শুধু ফল হিসেবে খাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন খাবারের ওপর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে এবং সুগন্ধি হিসেবেও ব্যাপক হারে এর ব্যবহার করা হয়।

Strawberry gardening

স্ট্রবেরি চাষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর ভালো জাতের চারাগাছ সংগ্রহ করা। ভালো জাতের চারা পাওয়া যেতে পারে নার্সারিতে। আবার কেউ চাইলে নিজেই চারা তৈরি করে স্ট্রবেরির চাষ করতে পারেন। এমনকি এর চারা বিক্রিও করতে পারেন। স্ট্রবেরি মূলত মৃদু শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। এই গাছের ফুল এবং ফল আসার সময় শুকনো আবহাওয়া প্রয়োজন। সাধারণত বেলে মাটি বা দোঁ-আঁশ মাটিতে এর চাষ খুব ভালো হয়। তবে, স্ট্রবেরি চাষ শুরু করার আগে অবশ্যই ভালো করে মাটি পরীক্ষা করে নিতে হবে।

নির্বাচিত জমির মাটি পরীক্ষা করার পর তাতে প্রয়োজন অনুযায়ী জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। এবং প্রয়োজনে রোগ প্রতিষেধক ওষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। স্ট্রবেরি চাষের ক্ষেত্রে মাটির অম্লতা বা ক্ষারতা ৬.০-৭.০ হওয়া প্রয়োজন। জমিতে অম্লতা বা ক্ষারের পরিমাণ এর কম হলে ডলোমাইট চুন প্রয়োগ করে তা বাড়ানো যায়। স্ট্রবেরি যেহেতু শীতপ্রধান দেশের ফল, সেই কারণে উচ্চমানের এবং উচ্চফলনের জন্য দৈনিক তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি থেকে ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের তাপমাত্রা ১২-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ভালো হয়। কমপক্ষে, দিনের বেলায় ৮ ঘণ্টা সূর্যের আলোয় রেখে দিলে স্ট্রবেরির বৃদ্ধি ভালো হয়।

স্ট্রবেরি চাষের ক্ষেত্রে জমি ভালোভাবে চাষ করে নেওয়া প্রয়োজন। পরিষ্কার পরিচ্ছন করে জমি অন্তত ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে চাষ করে নিলে ভালো হয়। যেহেতু, স্ট্রবেরি গাছের শেকড় মাটির ওপর দিকে থাকে, সেই কারণে মাটি ঝুরঝুরে করে পরিমাণ মতো সার ভালোভাবে মেশাতে হয়৷ মোটামুটি অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা যায়। জমি তৈরি করে নেওয়ার পর প্রতিটি লাইনের দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার রাখতে হয় এবং প্রত্যেক লাইনে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। বৃষ্টি হলে অবশ্যই জমি থেকে অতিরিক্ত জল সরিয়ে দিতে হবে, নাহলে গাছ পচে যাবে।

এক বিঘা জমিতে প্রায় দেড় থেকে দু লাখ টাকা খরচ হয় চারা রোপণ করা থেকে ফল তোলা পর্যন্ত৷ এবং ছয় মাসে এর আয় হয় প্রায় চার লাখ টাকা। স্ট্রবেরি চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণে দরকার হয় জৈব সার। প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া, ৭০ কেজি টিএসপি সার, এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। এসব সারকে আবার দু ভাগে ভাগ করে নিতে হয়৷ তার মধ্যে এক ভাগ দিতে হয় গাছে ফুল আসার আগে এবং আরেক ভাগ দিতে হয় ফুল ফোটার সময়। গাছে ফল ধরা শুরু হলে দুই তিন দিন অন্তর জমিতে সেচ দেওয়া প্রয়োজন। জমিতে পটাশ সার ব্যবহার করা হলে স্ট্রবেরি বেশ সুমিষ্ট হয়।

Strawberry nursery

মূলত, ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা জানুয়ারি মাসে স্ট্রবেরি পাকতে শুরু করে। ফল পাকলে পুরো টকটকে লাল হয়ে যায়৷ তবে, বিক্রির ক্ষেত্রে ফল পুরোপুরি লাল হওয়ার দরকার নেই এবং সে ক্ষেত্রে ফলগুলো শক্ত থাকা অবস্থাতেই তুলে ফেলতে হবে। আর, ফল তুলতে হবে বোঁটাসহ। পরে, বাজারজাত করার জন্য সেগুলো কাগজের প্যাকেটে ভরতে হয়। পাকা স্ট্রবেরি ফ্রিজে ৭-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১০-১৫ দিন মতো সংরক্ষণ করে রাখা যায়।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close