দেবাদিদেব মহাদেব নাকি আকন্দ ফুলে তুষ্ট হন এবং এই বিশ্বাসে ভক্তরাও শিবপুজোর প্রধান উপকরণ হিসেবে রাখেন এই ফুল। পথে ঘাটে, রাস্তার দু-ধারের জমিতে, রেললাইনের ধারে,বিশেষ করে শুকনো জমিতে অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠতে দেখা যায় এই আকন্দ ফুলের গাছকে। সারাবছর হেলাফেলা করলেও এই গাছের বিশেষ চাহিদা বেড়ে যায় শিব চতুর্দশীর সময় । বর্তমানে এই ফুলের চাহিদা ক্রমশ বাড়তে থাকায় বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হচ্ছে এই ফুল। সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, একাধিক কৃষক এই আকন্দ ফুল চাষ করে আর্থিক দিক থেকে বিরাট সুফল পাচ্ছেন।
‘আকন্দ ফুল’,যার বৈজ্ঞানিক নাম Calotropis gigantea. আকন্দ মূলত এক প্রকারের ঔষধি গাছ। যার আকার মোটামুটি মাঝারি ধরনের, ঝোপ জাতীয়। আকন্দের পাতা অনেকটা বটের গাছের পাতার মতো। সাধারণত ৮ থেকে ৭ ফুট লম্বা হয় এই গাছ। এই গাছের ছাল হয় ধূসর রঙের এবং ডালগুলো বেশ নরম এবং লোমযুক্ত। আকন্দের ফল হয় সবুজ রঙের। এই গাছের পাতা ভাঙলে দুধের মতো সাদা আঠা জাতীয় তরুক্ষীর বের হয়। আকন্দ ফুল সাধারণত সাদা বা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, এই গাছের দু রকমের প্রজাতি রয়েছে, কেলোট্রপিস গাইগেনটিয়া এবং কেলোট্রপিস প্রসেরা।
আকন্দের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে৷ আকন্দ চুলের সমস্যার এক বড় ওষুধ৷ শরীরের বিভিন্ন ব্যথা বেদনার নিবারক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই গাছের পাতা, কাণ্ড। শুধু তাই নয়, অম্বল বা পেটের সমস্যায় এই গাছের পাতা বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়। বলা হয়, আকন্দ গাছের শিকড়ের ছাল গুঁড়ো করে তা আকন্দের আঠায় ভিজিয়ে রেখে সেটি শুকিয়ে, চুরুটের মতো বানিয়ে ধূমপান করলে নাকি শ্বাস কষ্টের ক্ষেত্রে অনেক আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া, নিউমোনিয়াজনিত ব্যথা বেদনায় এর ব্যবহার হয়।
আকন্দের বীজ থেকে বংশ বিস্তার সম্ভব হলেও এই গাছের মূল ব্যবহারিক অংশ হল এর ফুল, পাতা, শিকড় এবং আঠা। এই গাছের বংশ বিস্তার হয় আঁশ এবং বাতাসের মাধ্যমে। আকন্দ ফুল মূলত ফোটে ফাল্গুন এবং চৈত্র মাসের দিকে। এই গাছের আঠার মতো তরুক্ষীর এনজাইম সমৃদ্ধ। যাতে বিভিন্ন গ্লাইকোসাইড, বিটা-এমাইরিন এবং স্টিগমাস্টেরল জাতীয় পদার্থ রয়েছে।
আকন্দ চাষের বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণত ৩-৪ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে এই গাছ লাগাতে হয়। মে, জুন মাসের দিকে আকন্দের ফল পাকলে তা ফেটে এর বীজ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। সেই কারণেই, এই সময় আকন্দ চাষের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এছাড়া, কাটিং পদ্ধতিতেও আকন্দের চাষ ভালোই হয়। সাধারণত, জলধারণ ক্ষমতা কমযুক্ত অর্থাৎ শুকনো মাটিতে এই গাছ ভালো হয়। প্রতি কেজিতে আকন্দের বীজের পরিমাণ হয় প্রায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ ৪০ হাজারটির মতো। এই ফুলের চাষে খুব একটা বেশি খরচ নেই, সেই তুলনায় বর্তমানে এর বাজারদর বেশ ভালো।