অতি সহজ পদ্ধতিতে সূর্যমুখী চাষ এবং তার তাক লাগানো ফলন হয় কিভাবে, জানতে হলে দেখে নিন

জেনে নেওয়া যাক সূর্যমুখী চাষের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

আরও পড়ুন

বর্তমানে সূর্যমুখী সারা দেশে একটি পরিচিত ফুল। এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারা বিশ্ব জুড়েই। পাশাপাশি, দেশেও ব্যাপক পরিমাণে শুরু হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের চাষ। এই চাষে বাণিজ্যিক দিক থেকে বেশ ভালোই সুফল পাচ্ছে চাষী ভাইরা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হচ্ছে। শুধু বাণিজ্যগত দিক থেকেই নয়, সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষের ঢল। দিগন্ত জুড়ে সূর্যমুখীর হলদে রঙের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেওয়া যায়।

সূর্যমুখী ফুল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এই ফুল থেকে নিষ্কাশিত তেলে রয়েছে ভরপুর পুষ্টিগুণ। এই ফুল চাষ করার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ, আর এর চাষে অর্থকরী লাভও বেশ ভালো। সূর্যমুখীর চাষ করা যায় সারা বছর ধরেই। তবে, কৃষিবিদদের মতে এই ফুলের চাষ অগ্রহায়ণ মাস অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে জৈষ্ঠ্য মাসে অর্থাৎ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে মে মাসের মাঝামাঝি সময়েও এর চাষ করা যায়।

Sunflower seeds

সূর্যমুখী ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম হল Helianthus annuus. এই ফুল সাধারণত সব রকম মাটিতেই জন্মায়। তবে, দোঁ-আশ মাটি এই ফুলের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। সূর্যমুখীর ২টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে, কিরণী এবং বারি সূর্যমুখী-২। কিরণী জাতের উদ্ভাবন হয় বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিরণী এবং বারি সূর্যমুখী-২ দুটি জাতেরই বীজের রঙ কালো। কিরণী এবং বারি সূর্যমুখী-২ এর হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ১.৬-১.৮ টন, ২.০-২.৩ টন।

সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ৪০-৪৫% লিনোলিক অ্যাসিড। তাছাড়া, এই বীজে ইরোসিক অ্যাসিড নেই, যা ক্ষতিকারক। সূর্যমুখীর তেল হৃদরোগের পক্ষে ভীষণ উপকারী। এছাড়া, সূর্যমুখীর খৈল গরু এবং মহিষের উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই ফুলের বীজ ছড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, সূর্যমুখীর গাছ এবং পুষ্পস্তবক জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা যায়।

বিশেষ বপন পদ্ধতিতে সূর্যমুখীর বীজ বোনা হয়। সারিতে বোনা হয়, এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হতে হবে ৫০ সেন্টিমিটার এবং এক গাছ থেকে আরেক গাছের দূরত্ব হবে ২৫ সেন্টিমিটার। এই পদ্ধতিতে বোনা হলে প্রতি হেক্টরে ৮-১০ কেজি মতো বীজ লাগে। এই চাষে ভালো ফলনের জন্য বিভিন্ন ধরনের সার যেমন- ইউরিয়া ১৮০-২০০ কেজি, জিপসাম ১২০-১৭০ কেজি, টিএসপি ১৫০-২০০ কেজি, এমওপি ১২০-১৫০ কেজি, জিংক সালফেট ৮-১০ কেজি, বোরিক অ্যসিড ১০-১২ কেজি, এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট ৮০-১০০ কেজি পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।

Garden

বিছা জাতীয় ছোট ছোট পোকা একগুচ্ছ হয়ে সূর্যমুখীর পাতায় সাধারণত আক্রমণ করে। পোকাগুলো দেখতে হলুদ রঙের হয় এবং গায়ে কাঁটা থাকে। এই পোকা দলবদ্ধভাবে সূর্যমুখীর পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে এবং পাতাগুলোকে পাতলা সাদা পর্দার মতো করে দেয়। এই পোকা সরানোর উপায় হল, গাছে পোকা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই পোকা সমেত পাতাগুলো সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। কেরোসিন মেশানো জলে পোকাগুলো ফেলে দিলে মরে যায়। সেচ নালাতেও এই কেরোসিন মিশ্রিত জল ব্যবহার করা যেতে পারে।

সূর্যমুখী গাছের রোগ হল পাতা ঝলসানো রোগ৷ এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণের ফলে এই পাতা ঝলসানো রোগ হয় গাছে। আক্রমণের শুরুতে গাছের পাতায় সাধারণত ধূসর বা বাদামি রঙের ছোট বড় দাগ লক্ষ্য করা যায়। ধীরে ধীরে এই দাগগুলো এক জায়গায় হয়ে বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং শেষে পুরো পাতা ঝলসে যায়। এই রোগ সারাতে প্রতি লিটার জলের সঙ্গে ২ গ্রাম রোভরাল-৫০ ডব্লু পি মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করলে বা ফসল কাটার পরে পরিত্যক্ত গাছের পাতা, কান্ড এবং মূল পুড়িয়ে দিলে তা নির্মূল হয়।

সূর্যমুখী ফুলের বীজ পরের মৌসুমে লাগানোর জন্য বীজ সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। বীজ সংরক্ষণ করার আগে কাঁচা এবং ভাঙা বীজ বেছে ফেলে দিতে হবে। বীজগুলো মোটা পলিথিন ব্যাগ অথবা কেরোসিনের টিনে সংরক্ষণ করে রাখলে ভালো থাকে। বর্ষাকালে বীজগুলো রোদে শুকিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

এই ফুলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই ফুল ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে শুরু করে এবং সূর্যের সাথে সাথে এরাও নিজেদের দিক পরিবর্তন করতে শুরু করে। সবসময়ই ফুলগুলো সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। সূর্য যখন পশ্চিমে অস্ত যায় তখন তারাও পশ্চিম দিক বরাবর থাকে। সূর্যাস্তের পর আবার তারা সারারাত ব্যাপী উল্টো দিকে ঘুরে পূর্বমুখী হয়।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close