বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে কি বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

আরও পড়ুন

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চলতি বছরের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন ২০২২। “শিল্পই বাংলার লক্ষ্য এবং বিনিয়োগ আমাদের গন্তব্য” এই বিশেষ মন্ত্র নিয়েই আয়োজিত হয়েছিল এবারের বাণিজ্য সম্মেলন। উক্ত সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বের একাধিক প্রতিনিধিদের সামনে রাজ্যের পরিকাঠামোর কথা তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বপ্নের বাংলা কেমন হবে, ঠিক কিভাবে তিনি গড়তে চান বাংলাকে, কোন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান, সেসবই আলোচনা করলেন দুই দিনের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে।

উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিন। এদিন সমাপ্তি ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, এবারে প্রত্যাশার বেশি প্রাপ্তি হয়েছে। দু দিনে লগ্নি প্রস্তাব এসেছে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার। এর আগে ৫ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে বাণিজ্য সম্মেলন। আগের পাঁচ বারের তুলনায় এবারের লগ্নির প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি। তিনি আরও জানান, এবারের বাণিজ্য সম্মেলন ৪০ লাখ কর্মসংস্থানের দরজা মানুষের সামনে খুলে দিতে চলেছে। 

বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

মুখ্যমন্ত্রী এদিন এও বলেন যে, “১৩৭ টি মউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এবারের শিল্প সম্মেলনে। রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত তথা দেশের নানা প্রান্তের সঙ্গে যাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং উন্নত হয় তার জন্য অন্ডাল এবং বাগডোগরা বিমান বন্দরকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যাওয়া হবে৷ পাশাপাশি, পুরুলিয়া এবং মালদায় বিমান বন্দর তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।”

সূত্রের খবর, গত বুধবার বাণিজ্য সম্মেলনের মূল মঞ্চে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে হিরানন্দানি, আইটিসি-র মতো বেশ কয়েকটি সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তথা নারায়ণা হেলথ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ড. দেবী শেঠি এদিন জানিয়েছেন, এক হাজার বেডের অত্যাধুনিক হাসপাতাল গড়বেন কলকাতায়। তিনি এদিন বলেন, “শুধুমাত্র কলেজে পড়াশোনা করলেই নার্স হওয়া যায় না। প্র‍্যাকটিক্যাল দিক থেকে রোগীর চিকিৎসা করার মাধ্যমেই অভিজ্ঞতা তৈরি হয়। তাই, বর্তমানে রোগীর চিকিৎসা করতে পারবে এমন সংখ্যক নার্স তৈরি করতে হবে আমাদের৷ আগামীতে বাংলায় অন্তত ১০০০ মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করাই আমাদের লক্ষ্য।”

গৌতম আদানি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

অপরদিকে, এদিন সম্মেলনে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা ৭৫০ কোটি টাকা খরচ করে ১২৫ মেগাওয়াটের সোলার পার্ক গড়ার জন্য স্বাক্ষর করেছে। এর সঙ্গে পাওয়ারলুম সেক্টরে ৭০ কোটি টাকার লগ্নি করতে চলেছে দুটি কোম্পানি। কলকাতার উত্তরপাড়ায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে একটি অস্ট্রেলিয়ান সংস্থা। ব্রিটিশ কোম্পানি ই- মোবিলিটি-র তরফ থেকে ইলেকট্রিক বাস উৎপাদনে লগ্নির কথাও এদিন পেশ হয় এই সম্মেলনে। 

উল্লেখ্য, বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পপতিদের উদ্দেশ্যে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আপনারা নিশ্চিন্তে এ দেশে শিল্প স্থাপন করতে আসুন। কেউ কোনওরকম বাধা দেবে না। বাংলার মাটি দেশের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ এবং শান্তির। এই রাজ্যে কোনও বনধ নেই, হরতাল নেই। কর্ম দিবস নষ্ট হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই। অকারণে বাংলার বদনাম করার জন্য কিছু কিছু রাজনৈতিক দল উঠে পড়ে লেগেছে। এটাই হল ঘৃণ্য রাজনীতি।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, “শুধুমাত্র লগ্নি টানার লক্ষ্যেই এই বাণিজ্য সম্মেলন নয়। সম্মেলনের জন্য যে শিল্পকেন্দ্রিক সেক্টরাল কমিটি গঠন করা হয়েছে, সেগুলো সারা বছর কাজ করবে। মাসে অন্তত একবার করে হলেও একটি বৈঠক আয়োজন করার চেষ্টা করা হবে। কোনও পলিসি আনার থাকলে বা পরামর্শ করার ব্যাপার থাকলে, তা সরকারকে জানাবে তারা। বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন বোর্ডে।” এদিন মুখ্যমন্ত্রী  আগামী বছরের বাণিজ্য সম্মেলনের দিনক্ষণও জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১, ২, ৩ ফেব্রুয়ারী ফের আয়োজিত হবে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। 

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close