উপমহাদেশের মানুষের কাছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি অত্যন্ত চেনা নাম। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বলা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রথম কর্পোরেশন কোম্পানি। শুরুর দিকে এই কোম্পানির নাম ছিল ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে অনারেবল কোম্পানি অফ মার্চেন্টস অফ লন্ডন ট্রেডিং ইনটু দ্য ইস্ট ইন্ডিজ অথবা ইউনাইটেড কোম্পানি অফ মার্চেন্টস অফ ইংল্যান্ড ট্রেডিং টু দ্য ইস্ট ইন্ডিজ রাখা হয়। তপবে, উপমহাদেশে এই কোম্পানি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামেই অধিক পরিচিত ছিল।
যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৮ এবং ১৯ শতকে ভারতবাসীরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, সেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বর্তমান কর্ণধার একজন ভারতীয় উদ্যোক্তা। সত্যিই এ এক অভাবনীয় ঘটনা। ভারত থেকে ইউরোপে চা, মশলা এবং বহিরাগত নানারকম দ্রব্য আমদানির লক্ষ্যে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৭১৭ সালে ফারুখশিয়ারের ফরমানের মাধ্যমে এই কোম্পানি ভারতে যাত্রা শুরু করে।
উল্লেখ্য, এর কিছুদিন বাদেই কলকাতায় স্থাপিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম। এরপরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাকে সিংহাসন থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৭৫৭ সালে সংঘটিত হয় পলাশির যুদ্ধ। অসংখ্য বাঙালির রক্তে ভেসে যায় পলাশির প্রান্তর। এরপর দীর্ঘ ১০০ বছর ভারতে শাসনের পরিবর্তে শোষণ করতে থাকে এই কোম্পানি। এই সংস্থার হাত থেকে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ভারতের শাসনভার নেন মহারানি ভিক্টোরিয়া।
এই ঘটনার পর থেকেই ক্রমশ পতনের দিকে যেতে থাকে সংস্থা। ২০০৩ সাল নাগাদ এই কোম্পানি পুনরায় তার কাজ আরম্ভ করার চেষ্টা করে। এই কোম্পানির শেয়ার হোল্ডাররা চা এবং কফি ব্যবসার মাধ্যমে এই কোম্পানিটির পুনর্গঠন করে। ২০০৫ সালে সঞ্জীব মেহতা নামের এক ভারতীয় উদ্যোক্তা উক্ত কোম্পানিটি কিনে নেন। বিলাসবহুল চা, কফি এবং খাবারের ব্র্যান্ডে কোম্পানিটি রূপান্তরিত করেন তিনি। পরে ২০১০ সালে সঞ্জীব মেহতা লন্ডনের অভিজাত মে ফেয়ার অঞ্চলে কোম্পানির প্রথম দোকান চালু করেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সম্পর্কে সঞ্জীব মেহতা বলেন, “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপনিবেশের কালো অধ্যায় থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। যে কোম্পানি কিনা এক কালে ভারতের ওপর শাসনকার্য চালিয়েছে, সেই কোম্পানির মালিক এখন একজন ভারতীয়। এটা ভারতবাসীর কাছে বেশ গর্বের এবং ইতিবাচক ঘটনা। এটাই হয়তো যোগ্য জবাব ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে। কোম্পানির ভিত্তি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছি আমি। এই কোম্পানি আগে পরিচালিত হত আগ্রাসনের ভিত্তিতে, এখন তা চলে পুরোপুরি সহমর্মিতার ভিত্তিতে।”
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যে সঞ্জীব মেহতা লন্ডনে বিলাসবহুল এক খাবারের দোকান চালু করেছেন। মাত্র ৩৫ জন কর্মীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানে সঞ্জীব মেহতার বিনয়োগের পরিমাণ প্রায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ড।