তাঁর কণ্ঠে মাতোয়ারা আট থেকে আশি। আনন্দ, বিরহ, প্রেম সবরকম গানেই তাঁর জুড়ি মেলা ভার। আকাশ ছোঁয়া সফলতার মুকুট থাকা সত্ত্বেও নিজের জায়গা থেকে কখনও সরে দাঁড়াননি এই বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী। দেশজোড়া খ্যাতি থাকা সত্ত্বেও এক বিন্দু অহংকার নেই তাঁর। বলিউডের তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে নম্র এবং মাটিতে পা রেখে চলা গায়কদের মধ্যে একজন হলেন অরিজিৎ সিং। বর্তমানে তাঁকে চেনেন না এমন মানুষ খুব কম আছে। এক কথায় বর্তমান বলিউড সংগীতের বাদশা বলা চলে তাঁকে। ভারতের সমস্ত বিখ্যাত গায়কদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছেন এই সুর সম্রাট। তিনি আসলে সমস্ত প্রশংসার ঊর্ধ্বে।
বিখ্যাত এই সুর সম্রাট জন্মেছিলেন ১৯৮৭ সালের ২৫ এপ্রিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে। তাঁর বাবা পাঞ্জাবি এবং মা বাঙালি। সংগীত তাঁর রক্তেই ছিল, তাঁর মা যখন সংগীতের রেওয়াজ করতে বসতেন, তখন ৩ বছরের ছোট্ট অরিজিৎ হারমোনিয়ামে সারেগামাপা তুলে ফেললেন। ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক শেখা তাঁর মামীমার হাত ধরে এবং দিদিমার সাহচর্যে শেখা কিভাবে গান পরিবেশন করতে হয়। অরিজিৎ-এর মামা একজন সুদক্ষ তবলা বাদক। মা গান এবং তবলা দুয়েই পারদর্শী।
অরিজিৎ সিং বিজয় সিং উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্কুল পাশ করে ভর্তি হন শ্রীপত সিং কলেজে। সংগীতের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও যথেষ্ট মেধাবী ছিলেন তিনি। তবে, সংগীতের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুরাগ দেখে পরিবারের সকলেই তাঁকে পেশাদার সংগীতশিল্পী হওয়ার জন্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন প্রতিনিয়ত। অরিজিৎ রাজেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির কাছ থেকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেন এবং ধীরেন্দ্র প্রসাদ হাজারির কাছে তবলার প্রশিক্ষণ নেন।
গুরু রাজেন্দ্রপ্রসাদ হাজারির অনুপ্রেরণায় এবং উৎসাহে ২০০৫ সালে একটি রিয়্যালিটি শো ফেম গুরুকুলে অডিশন দেন অরিজিৎ। এরপর আরেকটি রিয়্যালিটি শো ১০ কে ১০ লে গেয়ি তে তিনি বিজয়ী হন। সেই শো জেতার পরে তাঁর গুরু রাজেন্দ্রপ্রসাদ তাঁকে তাঁর
রেকর্ডিং সেট আপ তৈরি করে দিয়েছিলেন এবং সংগীত প্রোগ্রাম দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু হয়৷ এরপরে, তিনি শঙ্কর এহসান লয়, বিশাল শেখরের সহকারী সংগীত প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করেছিলেন বেশ কিছুদিন। ২০১০ সালে তাঁর মূল সংগীত জীবনের শুরু হয় প্রীতম চক্রবর্তীর সঙ্গে। সেই সময় তিনি প্রীতমের তিনটি ফিল্মে কাজ করেন- “অ্যাকশন রিপ্লে”, “গোলমাল ৩”, এবং “ক্রুকে”। ২০১১ তে বলিউডে পা রাখেন মিঠুনের রচিত ‘মার্ডার টু’ সিনেমায় গান গেয়ে। ২০১৪ সালে অরিজিৎ তাঁর প্রিয় দুই সংগীত পরিচালক সাজিদ ওয়াজিদ এবং এ.আর রহমানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান।
এখনও পর্যন্ত অরিজিৎ প্রায় ৮টি ভাষায় অজস্র গান গেয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে গুজরাতি, মরাঠি , তেলুগু, তামিল, কানাডা, অসমীয়া, হিন্দি, বাংলা প্রভৃতি। গেয়েছেন বিভিন্ন সিরিয়ালের টাইটেল ট্র্যাক। সৌরভ গাঙ্গুলি দ্বারা পরিচালিত জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো দাদাগিরির টাইটেল ট্র্যাকটিও তাঁরই গাওয়া। ২০১৩ সালে ‘আশিকি টু’ সিনেমায় ‘তুম হি হো’ গানের জন্য তিনি মোট ১০টি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন এবং ৯টি অ্যাওয়ার্ড পান। এছাড়াও ২০১৯ পর্যন্ত তিনি মোট ১৫৪ টি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি লাইভ পারফরম্যান্স করার জন্য তিনি উইস্ক্রাফট অ্যাওয়ার্ড পান এবং এস এস সি এরিনার মধ্যে প্রযোজ্য বিশ্বের সর্বাধিক ১০ জন শিল্পীর মধ্যে একজন হিসেবে নির্বাচিত হন অরিজিৎ। ২০১৫ তে মোট ৭টি মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড জেতেন এবং এছাড়াও ৪টি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড, ১টি আইফা অ্যাওয়ার্ড, ১টি স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ড, ২টি জি সিনে অ্যাওয়ার্ড, এবং দুটি স্ক্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০১৬ সালে ফোর্বস ভারত পত্রিকায় ১০০ জন সেলিব্রিটির তালিকায় ১৫ তম স্থান পান এই বিখ্যাত সুর সম্রাট। ২০১৮ তে বাংলার সবচেয়ে বড় সম্মান সেরা বেঙ্গলি অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
শুধু সংগীতশিল্পী হিসেবেই নয়, মানবিক সেবার কাজেও অরিজিৎ-এর বেশ সুনাম রয়েছে। একটি এন.জি.ও-র সঙ্গে তিনি ওতোপ্রোতোভাবে যুক্ত রয়েছেন। দরিদ্র মানুষের সেবায় বিভিন্ন কাজ, রক্তের ব্যাংক ক্যাম্পের মতো কাজ, এছাড়াও বস্ত্র বিতরণ, দুঃস্থ শিশুদের জন্য বই, খাবার, স্টেশনারি দ্রব্য, পোশাক প্রভৃতি প্রদান করেন তিনি।
উল্লেখ্য, অরিজিৎ সিং এমন একজন গায়ক যাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমশ লাফিয়ে বাড়ছে৷ তাঁর গানের ভিউস, লাইক সবচাইতে বেশি। অসাধারণ অনন্য হয়েও অরিজিৎ মিশে থাকতে ভালোবাসেন সাধারণদের মধ্যে।