সমকামী চুম্বন দৃশ্যের জন্য নিষিদ্ধ ডিজনির লাইটইয়ার

সমকামী চুম্বনের দৃশ্যের জন্য ১৪টি দেশে ডিজনি পিক্সারের 'লাইটইয়ার' ছবিটি নিষিদ্ধ করা হল। মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলিতে আজও সমকামিতাকে অবৈধ বলে ধরা হয়।

আরও পড়ুন

যাঁরা অ্যানিমেটেড টয় স্টোরি ফিল্ম দেখতে পছন্দ করেন, তাঁরা ডিজনি পিক্সারের নতুন ফিল্মগুলির জন্য তীর্থের কাকের মতো বসে থাকেন। কিন্তু, এবার ডিজনি পিক্সারের ভক্তদের দুর্ভাগ্য। ডিজনির নতুন মুভি ‘লাইটইয়ার‘, ‘টয় স্টোরি’ ফ্র‍্যাঞ্চাইজির একটি শাখা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অংশে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। তার কারণ, এই মুভিতে দুই নারীর চুম্বন অর্থাৎ সমকামী চুম্বনের দৃশ্য দেখানো হয়েছে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।

উল্লেখ্য, এই এলজিবিটিকিউ (LGBTQ) মাত্রার ছবিটিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য একাধিক মুসলিম দেশ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি এই ছবির দৃশ্য নিয়ে ডিজনির প্রতি মালয়েশিয়ার বক্তব্য, চলচ্চিত্রটি যদি দেখাতেই হয়, তাহলে যেনও চুম্বন দৃশ্যটি কেটে বাদ দিয়ে তারপর দৃশ্যায়িত হয়। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া। তাদের ফিল্ম সেন্সরশিপ বোর্ডের চেয়ারম্যান রোমি ফাইব্রি জানিয়েছেন, “চুম্বনের দৃশ্য এমন একটি আইনকে লঙ্ঘন করতে পারে, যা বিচ্যুত যৌন আচরণ দেখায় এমন চলচ্চিত্রগুলিকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে।”

তাঁর আরও বক্তব্য, “চলচ্চিত্র সেন্সরশিপ বোর্ড এই এলজিবিটি বনাম অ্যান্টি এলজিবিটি-র বিতর্কে জড়াতে চায় না। চুম্বনের দৃশ্যটি চলচ্চিত্র থেকে পুরোপুরি বাদ দেওয়াই ভালো বলে আমি মনে করি।” লাইটইয়ারের বিরুদ্ধে এই আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নতুন এক অশান্তি সৃষ্টি করল। দেশ জুড়ে সমকামিতা বৈধ হয়ে গেলেও, জনসমক্ষে এই দৃশ্য নিয়ে এখনও জনগণের মধ্যে কুণ্ঠাবোধ রয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, ডিজনি লাইটইয়ার ছবিটি পিক্সার অ্যানিমেশন স্টুডিও দ্বারা নির্মিত এবং অ্যাঙ্গাস ম্যাকলেন দ্বারা পরিচালিত। বাজ লাইটইয়ার চরিত্রের নির্দিষ্ট মূল গল্প হিসেবে, যিনি ১৯৯৫ সালের চলচ্চিত্র ‘টয় স্টোরি’ এবং আরও বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ছবিতে দেখানো হয়েছে, লাইটইয়ার বাজ এবং অন্য স্পেস রেঞ্জার, আলিশা হথর্ন ওরফে উজো আদুবা-এর মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আলিশা এদিকে একজন মেয়েকে বিবাহ করেন এবং একটি দৃশ্যে তিনি তাঁর স্ত্রীকে চুম্বন দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। যা নিয়েই মূলত জলঘোলা হয়েছে।

এই বিশেষ দৃশ্যের জন্য ছবিটি মুক্তি পেতে বেশ অসুবিধের মধ্যে দিয়েই যেতে হয় ছবির পরিচালককে। ডিজনির প্রধান এক্সিকিউটিভ বব চ্যাপেক, এই বছরের শুরুতে কোম্পানির অনেক কর্মচারীর দ্বারা চাপের মধ্যে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি ফ্লোরিডার আইনসভার দ্বারস্থ হন। সেখানে অ্যান্টি-এলজিবিটিকিউ আইনের বিরুদ্ধে জোরদার অবস্থান নেন। ফ্লোরিডার গভর্নর এ বিষয়ে অনেক কাকুতি মিনতির পর রাজি হয়ে বিলটিতে স্বাক্ষর করেন।

এদিকে, সোমবার থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিনেমা থিয়েটারে লাইটইয়ারের শো নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির যুব এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক অফিসের ট্যুইট বার্তায় বলা হয়েছে, “লাইটইয়ার ছবিটি দেশের মিডিয়া বিষয়বস্তুর মাত্রা লঙ্ঘনের কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোনও সিনেমাহলে এই ছবি দেখানোর জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হবে না।”

তাদের বক্তব্য, কোনও চলচ্চিত্র সারা দেশের সিনেমাহলে প্রদর্শিত হওয়ার পূর্বে তা যথাযথ মূল্যায়ন করে নেওয়া উচিত এবং উপযুক্ত বয়সের শ্রেণিবিন্যাস কতে দেওয়া উচিত। এতে প্রচারিত চলচ্চিত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত থাকবে। সূত্রের খবর, তাদের তরফ থেকে করা ওই ট্যুইটে লাইটইয়ারের প্রোফাইল ছবিটিতে একটি লাল রঙের ‘না’ চিহ্ন দেওয়া ছিল।

সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিস্তৃত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মতো এখনও পর্যন্ত সমকামিতা বিষয়টিকে অবৈধ বলেই মান্য করে। তাদের কাছে সমকামিতা অপরাধমূলক বিষয়। ইসলামিক আইনে নাকি ব্যক্তির সমকামী আচরণের জন্য তাঁকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়। দুবাইতে সমকামী আচরণের জন্য ১০ বছরের কারাবাস এবং আবুধাবিতে ১৪ বছরের জন্য কারাবন্দী করে রাখা হয়।

এদিকে, সিঙ্গাপুরে নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে, লাইটইয়ার ছবিটি দেখবার জন্য দর্শকের বয়স ১৬ বছর বা তার ঊর্ধ্বে হওয়া আবশ্যিক। এই ছবিটিকে প্রথম বাণিজ্যিক শিশুদের অ্যানিমেশন যা প্রকাশ্যে সমকামী চিত্রণ দেখানো ছবি হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। ছবিটি নিয়ে মনে করা হচ্ছিল, বক্স অফিসে এই ছবি ভাগ্য তৈরি করবে। কিন্তু, বর্তমানে তার চুম্বন দৃশ্য নিয়ে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে এই ছবি কতটা সাফল্য অর্জন করবে তাই লক্ষ্যণীয়।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close