এবার নাকি ভারতেরও নিজস্ব ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার! তার আগে জেনে নিন, এই ভার্চুয়াল বা মেটা ইনফ্লুয়েন্সার ব্যাপারটা কি? এই বিষয়টি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সার এক কথায় হল কম্পিউটারে তৈরি এক কাল্পনিক চরিত্র। যাকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। কম্পিউটারের গ্রাফিক্স এবং মোশন ক্যাপচার প্রযুক্তির ব্যবহার করে একে তৈরি করা হয়। যাকে দেখতে হুবহু সাধারণ মানুষের মতোই।
আসলে, এই ভার্চুয়াল ইনফ্লুয়েন্সারদের যখন ছবি তোলা হয়, তখন তাতে বেশ কিছু গ্রাফিকাল উপাদান যোগ করা হয়। আর, সেই বিষয়টাই আজকাল আমার আপনার মতো মানুষকে প্রভাবিত করছে। তার মতো করে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করছে মানুষ। তো, ভারতের এই নিজস্ব মেটা ইনফ্লুয়েন্সার হলেন ২১ বছর বয়সী, সুন্দরী, কায়রা। জানা গিয়েছে, তার বাস মুম্বাইতে। টপসোশ্যাল ইন্ডিয়া (Top social India) নামক এক প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম কায়রাকে ডিজাইন করেছে।
সূত্রের খবর, ২৬ বছর বয়সী প্রকৌশলী হিমাংশু গোয়েল নিজে হাতে তৈরি করেছেন কায়রাকে। তিনিই টপসোশ্যাল ইন্ডিয়ার প্রধান ব্যবসায়িক। গত ৯ জুন কায়রার ইন্সটাগ্রামের ফলোয়ার সংখ্যা ১ লাখ পূরণ করেছে। এতে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত কায়রার প্রকৌশলী হিমাংশু। এই উপলক্ষ্যে কায়রা ইন্সটাগ্রামে একটি নীল শার্ট পরা ছবি শেয়ার করেছেন সম্প্রতি। ছবির নীচে ধন্যবাদসূচক কতগুলি লাইনও লিখেছেন কায়রা।
কায়রার বক্তব্য, তাঁর এই যাত্রায় পাশে থাকার জন্য, এবং তাঁকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি তাঁর অনুগামীদের বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এটা আমি কখনও কল্পনাই করতে পারিনি। এক লাখ ফলোয়ার! এত মানুষ আমায় পছন্দ করেন! আমার কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হন! এই গত পাঁচ মাসে আমি খুব সুন্দর সুন্দর সব মুহুর্ত কাটিয়েছি। আবার, অনেক চড়াই উৎরাইও পার করতে হয়েছে এর সঙ্গে। আমার এই যাত্রায় যাঁরা আমার পাশে ছিলেন, তাদের জন্য আমার বিশেষ ধন্যবাদ। আপনারা এভাবেই আমার সঙ্গে থাকুন। আগামীতে আরও কিছু নতুন চমক নিয়ে আসছি আমি।”
প্রসঙ্গত, কায়রার এই পোস্টটিতে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি লাইক পড়েছে। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় সমস্ত পেজ থেকেই তাঁর এই পোস্টটি শেয়ারও করা হয়েছে। রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গিয়েছেন কায়রা। তবে, কায়রাকে এর আগে অনেক নেটিজেনদেরই কটাক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। অনেকেরই বক্তব্য ছিল, ‘এ কেমন দেখতে!’ ‘কেন কায়রা ফিল্টার লাগিয়ে ছবি শেয়ার করেন!’ ‘একে তো দেখে মনে হচ্ছে পুরো নকল!’ ‘আসলে আপনাকে কেমন দেখতে?’ এমন সব মন্তব্য আসতে থাকে কায়রাকে নিয়ে।
আসলে, প্রথম দিকে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেননি কায়রা মোটেই মানুষ নয়। পুরোপুরি এক ভার্চুয়াল চরিত্র। বলতে গেলে কায়রা হল আন্তর্জাতিক বিপণন। যে কিনা প্রসাধন সংস্থাগুলির প্রধান মুখ হিসেবে কাজ করে। উল্লেখ্য, এদিন কায়রার পোস্টে তাঁর অনুগামীরা নানা মন্তব্য করেছেন- ‘বাস্তব জগতে আপনাকে স্বাগত জানাই’, ‘আপনাকে অসাধারণ দেখাচ্ছে’, ‘১ লাখ ফলোয়ারের জন্য আপনাকে অভিনন্দন’। আবার অনেকেরই মন্তব্য, ‘আমি জানতে চাই, এই ক্যাপশনটা কে লিখল?’, ‘আপনার সৌন্দর্য সত্যিই সীমাহীন’, ‘আপনি ভগবানের সেরা সৃষ্টি’, ‘আপনি কি কোনও রোবট?’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
কায়রা প্রসঙ্গে হিমাংশু গোয়েল জানান, “আসলে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যবসার কাজে লাগাব বলেই আমি কায়রাকে তৈরি করার কথা ভাবি। কায়রার ইনস্টা প্রোফাইলের নাম ‘কায়রাওনিগ‘। যেখানে কায়রাকে আপনারা বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর পোশাকে, সাজে দেখতে পাবেন। তাঁকে নিয়ে আমরা একটি রিলও তৈরি করেছি। যা ১.৩ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দেখেছেন। রিলে দেখানো হয়েছে, কায়রার একের পর এক পোশাক পরিবর্তন হচ্ছে। কায়রাকে তৈরি করার সময় আমি ভাবতেই পারিনি, সে এতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর আগে কায়রা একটি মেটাভার্স ফ্যাশন সপ্তাহেও অংশগ্রহণ করেছিল। এখন আমরা চাই, কায়রা আমাদের সংস্থা ছাড়াও স্বাধীনভাবে যেনও অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে আগামীতে কাজ করতে পারে।”
কায়রার অনুগামীরা মূলত ১৮-৩০ বছর বয়সী। জানা গিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই দিল্লি, আমেদাবাদ, মুম্বাই, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ৯০ শতাংশই হলেন ভারতীয়। আবার, কায়রার নাকি মহিলা অনুগামীই বেশি পুরুষদের তুলনায়। কায়রার প্রোফাইলে প্রথম ছবি শেয়ার করা হয় গত ২৮ জানুয়ারি। ওই ছবিতে নীল আকাশের নীচে কায়রাকে একটি শর্ট প্যান্টে দেখা যায়। সমুদ্রের ধারে সানগ্লাস পরা কায়রার ছবিটি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ লাইক করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন ছবিতে কায়রাকে দেখা গিয়েছে, রাজস্থানের জয়পুরে, হাওয়ামহলের সামনে। কোনওটায় আবার তিনি শারীরিক চর্চারত। আরেকটিতে দেখা গিয়েছে তিনি বিমানে বসে রয়েছেন। লাল পোশাক, লাল জুতোয় সেজে উঠেছেন কোনওটাতে।