কেকে-র মৃত্যু ইস্যুতে রূপঙ্করের মন্তব্যকে ঘিরে জলঘোলা

আরও পড়ুন

কলকাতার নজরুল মঞ্চ, আর পাঁচটা অনুষ্ঠানের মতোই কেকে-র আরও একটি অনুষ্ঠান। একেবারে শেষের গান ‘হাম রহে ইয়া না রহে কাল, ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল’। দর্শকদের আসন থেকে সক্কলে মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো কেকে-র সুরে ভাসছেন। কেই বা জানত আর কিছুক্ষণ বাদেই এই মানুষটা আর থাকবে না? মৃত্যুকে কেই বা কবে জানতে পেরেছে পুরোপুরি? মানুষ তো থাকে না, থেকে যায় তাঁর কাজ, মুহুর্ত, স্মৃতি। 

কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে

এদিন সংগীতশিল্পী কেকে-র মৃত্যুর পর গায়ক রূপঙ্করকে নিয়ে বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। কেকে-র কলকাতায় কনসার্টের আগের দিন থেকেই সারা শহর তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল, এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঙালিদের প্রতি বেশ কটাক্ষের সুরেই কথা বলেছিলেন রূপঙ্কর। কেকে-র শো নিয়ে তিনি বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় আমি কেকে-র করা কিছু লাইভ পারফরম্যান্স দেখেছি। তা দেখে আমার মনে হয়েছে, আমি তাঁর বহুগুণে ভালো গাই। বাংলার রাঘব চট্টোপাধ্যায়, ইমন চক্রবর্তী, উজ্জয়িনী মুখার্জি, সোমলতা আচার্য, অনুপম রায় এঁরা প্রত্যেকেই কেকে-র চাইতে বেটার গায়।”

রূপঙ্কর বাগচি

শুধু তাই নয়, এদিন কেকে-র আয় নিয়েও কথা বলেন রূপঙ্কর। তাঁর কথায়, “জাতীয় স্তরে কেকে যে পরিমাণ আয় করেন, সেটা বাংলার শিল্পীরা কল্পনাতেই আনতে পারবেন না। তাই ওই তুলনাতে আমি যেতেও চাই না। জাতীয় স্তরে কেকে যে পজিশনে রয়েছেন, বাংলার শিল্পীরাও তাঁর তুলনায় কিছু কম নয়।” তাঁর এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ারই শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। 

এদিন রূপঙ্করের বক্তব্য প্রসঙ্গে জনপ্রিয় গায়িকা সোমলতা আচার্য বলেন, “কেকে আমার একজন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমার ফেভারিট। ছোটবেলায় আমায় যদি আমার পছন্দের পুরুষ শিল্পীর নাম কেউ জিজ্ঞেস করতেন, আমি এককথায় উত্তর দিতাম একজন হরিহরণ জি এবং আরেকজন কেকে। সুতরাং  বুঝতেই পারছেন, গতকাল কেকে-র মৃত্যু সংবাদ শোনার পর আমার ওপর দিয়ে কি গিয়েছে। আমি এখনও পুরো বিষয়টা নিয়ে ঠিক ধাতস্থ হতে পারিনি। আমার সঙ্গে কেকে-র আলাপ হয়নি কোনওদিনই। কিন্তু, বরাবরই আমার মনে হয়েছে তিনি খুব কাছের, খুব ভালো একজন মানুষ। যেটাকে আমি আগাগোড়াই শিল্পীসত্ত্বার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে রেখেছি। সেইদিক থেকে বিচার করতে গেলে আমি কেকে-কেই সকলের ওপরে রাখতে চাইব।”

বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী সোমলতা আচার্য

সোমলতা আরও বলেন, “শিল্পীদের প্রতি কোনওরকম ক্ষতিকারক কথাবার্তা আমি আগেও কোনওদিন সমর্থন করিনি, আজও করছি না। সেটা শিল্পী শিল্পীর মধ্যেই হোক বা মানুষ মানুষের মধ্যেই হোক। আমার মনে হয়, কোভিড পরিস্থিতির পরে এত্ত মানুষকে এবং শিল্পীকে আমরা হঠাৎ করে হারাচ্ছি, এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকেরই একে অপরের প্রতি আরও মানবিক হওয়া দরকার। আমরা ভীষণভাবে নেতিবাচক হয়ে পড়ছি দিনকে দিন। আসলে প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু খারাপ ঘটে চলেছে। এরজন্যেই আরও বেশি করে আমাদের ইতিবাচক মনোভাব রাখা দরকার।”

উল্লেখ্য, কেকে-র এই আকস্মিক মৃত্যুর পর রূপঙ্কর বাগচির ফেসবুক ওয়ালে গিয়ে নেটিজেনরা নানারকম কু-মন্তব্য করছেন। একদল লিখেছেন, ‘বয়কট রূপঙ্কর বাগচি, জাস্টিস ফর কেকে’। এমনকি খুনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এই অভিযোগ নিয়েই এবার পুলিশের দ্বারস্থ হলেন রূপঙ্কর বাগচি এবং তাঁর স্ত্রী চৈতালি লাহিড়ী। চৈতালি জানিয়েছেন, “আমাকে ঠিক থাকতেই হবে এই পরিস্থিতিতে। এক নয়, একাধিক খুনের হুমকি এসেছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি সবটাই, তারা ব্যবস্থা নেবেন।” 

অন্যদিকে, এদিন কেকে-র মৃত্যুর ইস্যুতে রূপঙ্করের পক্ষ নিলেন সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী। নচিকেতার কথায়, “কেকে-র কলকাতা সফর নিয়ে রূপঙ্করের মন্তব্যকে বাঙালি তীব্র আক্রমণ করছে। কিন্তু, ওঁর অভিমানকে আমরা যদি বুঝতে না পারি, তাহলে তো ধরে নিতে হবে আমাদের অনুভূতি বোধটাই চলে গেছে। আমরা কি গাধা হয়ে গেছি! না না গাধা নয়, গাম্বাট। একজন বাঙালি শিল্পী তাঁর অভিমানের জায়গা থেকে একটা কথা বললেন, আর আমরা সেটা ধরতেই পারলাম না! আরে, রূপঙ্কর কি জ্যোতিষী নাকি! ও কি করে জানবে, কেকে মারা যাবে! বিজেপি আর সিপিএম তো ময়দানে নেমে পড়েছে। এমন একটা ভাব যেন, ওই ভীড়ের কারণেই মৃত্যু হয়েছে কেকে-র।” 

বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close