ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান তেল আমদানির প্রায় ৭৫ শতাংশ নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছে। এর ফলে সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে ইউরোপে তেল আমদানি বন্ধ হবে। তবে হাঙ্গেরি এবং সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন অন্যান্য দেশগুলির জন্য পাইপ লাইনে স্থলপথে তেল আমদানি চালু রেখেছে। এটা যদি ইউরোপ করতে পারে তাহলে খুব শীঘ্রই রাশিয়ার অর্থনীতিতে ভাঁটা পড়বে। মূল আয়ের উৎসই যে তেল এবং গ্যাস। ওদিকে পণ্য রপ্তানির কাজও তারা তেমন ভাবে করতে পারছে না নিষেধাজ্ঞার জেরে।
ইউরোপীয় দেশগুলি চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় এটাই যে তারা কিভাবে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবে। এক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি লাভবান হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিচেল এই বিষয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার উপর এই নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো নিষেধাজ্ঞা জারি করল। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক এবং তিনটি রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় নেতারা একমত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, নেতারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে সমর্থন করার জন্য ইউক্রেনকে ৯ বিলিয়ন ইউরো দিয়ে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছে। আমরা রাশিয়ান যুদ্ধ মেশিন বন্ধ করতে চাই। আমরা শক্তিশালী হতে সক্ষম। আমরা দৃঢ় হতে সক্ষম।
উল্লেখ্য, এদিন রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা কয়েক ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছেন। তার কারণ, হাঙ্গেরি এর বিরোধিতা করেছিল। হাঙ্গেরি তার চাহিদার ৬৫ শতাংশ তেল পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে আমদানি করে। ইউরোপীয় কমিশন প্রথমে একটি প্রস্তাব রেখেছিল রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার বিষয়ে। এর জন্য গত এক মাস পূর্বে দেশগুলির জন্য একটি আইনও তৈরি করেছিল কমিশন।
অন্যদিকে, রাশিয়া বুলগেরিয়াতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে ইউরোপের জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার বিষয়টি নিয়ে সহমত হতে পারছে না একাধিক দেশ। অন্যান্য পণ্যের ন্যায় জ্বালানির মূল্যও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন এদিন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত হওয়ার কথা ছিল। তার কারণ, পোল্যান্ড এবং জার্মানির এই বছর রাশিয়ার কাছ থেকে ধীরে ধীরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে তেল আমদানি বন্ধ করে দিতে স্বেচ্ছায় সম্মতি জানিয়েছে।
এদিকে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বেশ কঠোরভাবে বলেন, জ্বালানি সরবরাহ একটি বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আগে আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে বার করা দরকার, তারপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। দেশে তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তবেই নতুন নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করব আমরা।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলিকে আগে নিজেদের মধ্যে বিবাদ অশান্তির মিটমাট করতে হবে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল নিয়ে তারা শুধু দেশটিকে সহায়তা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং তার তেলের ২৫ শতাংশ রাশিয়া থেকে পায়। নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই সম্মত হতে হবে, অবশ্যই কার্যকর হতে হবে। যাতে মস্কো ইউরোপের বিরুদ্ধে যা করছে তার মূল্য টের পায়।
এবার প্রশ্ন উঠছে, পুতিনের ভারত নির্ভরতা কি আরও বেড়ে যাবে? ইইউ-এর নেতারা রাশিয়ার তেল নিষিদ্ধ করলে ভ্লাদিমির পুতিনকে চীন এবং ভারতের উপর আরও বেশি নির্ভর করতে হতে পারে। এশিয়ার অন্য ক্রেতারা সাধারণত ইউরোপ যে ধরনের অপরিশোধিত তেল কিনে থাকে তা প্রক্রিয়া করতে সক্ষম হলেও এক্ষেত্রে রুশ তেল তার ব্যতিক্রম। ইইউ-এর এমন পদক্ষেপের জেরে রাশিয়ার ফ্ল্যাগশিপ উরাল ক্র্যুড তেলের রপ্তানি কমতে পারে। ইউরোপে রাশিয়ার উরাল ক্র্যুড তেল ব্র্যান্ড জনপ্রিয়। তবে, সেখানে রপ্তানি কমলে এর জন্য অন্য ক্রেতা খুঁজতে হবে। কারণ, বিপুল পরিমাণ এই তেল পরিশোধনের সক্ষমতা শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়ার দেশগুলির নেই। এর ফলে সুবিধা পেতে পারে চীন এবং ভারত।