বাংলাদেশের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যেনও খুশি আর ধরছে না এদেশের মানুষের। রীতিমতো নতুন পোশাক পড়ে উৎসবের মেজাজে পাড়ি জমিয়েছেন এই সেতুর ওপরে।
জনসাধারণের জন্য পদ্মা সেতুতে যান চলাচলে প্রথমদিনেই উৎসব আর স্বস্তির যাত্রায় উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেল। এই সেততে সবচেয়ে বেশি ভিড় করেছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সূত্রের খবর, শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ভোর ৫টা থেকেই লাইনে দাঁড়ায় প্রায় শতাধিক যান। সকাল ৬টায় যান চলাচল চালুর কথা থাকলেও উৎসুক চালকদের আগ্রহে ৫টা ৪০ মিনিটেই টোল দেওয়া শুরু হয়।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। এদিন সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এ সেতুর প্রবেশদ্বার। এর আগে শনিবার বেলা ১১টা বেজে ৫৮ মিনিটে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে এসেতুর দ্বারোদ্গঠন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাত্রীরা প্রথমবার বাসে উঠে পদ্মা সেতু পার হওয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। প্রথমদিনে স্বপ্নের এই সেতু পাড়ি দেওয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে রাত থেকেই সেতুর কাছাকাছি এসে অপেক্ষা করছিলেন অত্যুৎসাহী মানুষ। অবিস্মরণীয় এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে দু’পার থেকেই ছুটে এসেছেন অসংখ্য জনতা। অনেকেই পরিবার নিয়ে ওপারে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুটি স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত খাঁচায় দাঁড়ানো এসেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
এছাড়া পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার। পদ্মা সেতু নির্মাণে মূল সেতুর খরচ কিন্তু ১২ হাজার কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে বিদ্যুৎ লাইন আছে সেখানেই প্রায় এক হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। গ্যাসলাইন আছে, সেখানেও ৩০০ কোটি টাকার উপরে চলে যাচ্ছে। শুধু ব্রিজে ১২ হাজার কোটি টাকা নেই এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি। শুধু তাই নয়,এটা ছয় লেনের সেতু। ট্রেন যাবে ১৬০ কিলোমিটার গতিতে। এত হাইস্পিড ট্রেন যাবে। এটা ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের একটা অংশ। এই লোডটা সেতুর ওপর দিতে হয়েছে। ১০০ বছরেও এই সেতুর কিছু হবে না।
বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। এক শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।
ব্যুরো নিউজ, ঢাকা, বাংলাদেশ , টাইমস ফোর্টিন বাংলা