‘ফুচকা‘ তিন অক্ষরের এমন এক লোভনীয় শব্দ, যার নাম শুনলেই জিভে জল আসে না এমন মানুষ বোধহয় খুব কমই আছেন। এক এক জায়গায় এক এক নামে বিখ্যাত এই জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার। কোথাও পানিপুরি, কোথাও বা গোলগাপ্পা, আবার কোথাও ফুচকা। এবার সেই ফুচকাই নাকি বাতিল হয়ে গেল নেপালে! সেখানকার ফুচকাপ্রেমীদের তো এ খবর শোনা মাত্রই মাথায় হাত। কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিল সেই দেশ?
সূত্রের খবর, ফুচকা বিক্রি বা ফুচকা খাওয়া নিষিদ্ধ করবার কারণ হল কলেরা। একেই তো করোনা, মাঙ্কিপক্সে জর্জরিত দেশ। এবার সেখানে দেখা দিয়েছে কলেরার প্রাদুর্ভাব। কলেরা জলবাহিত রোগ। সেখানকার প্রশাসন জানিয়েছে, ফুচকায় ব্যবহৃত জলেই নাকি মিলছে কলেরার জীবাণু। অতএব, পুরোপুরি নিষিদ্ধ ফুচকা। ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে, সেখানে মোট ১২ জন ব্যক্তি কলেরায় আক্রান্ত হয়েছেন। ফলত, এটা চিন্তারই বিষয়। দেশবাসীকে সতর্ক করতে তাই এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল নেপাল।
তবে, এখনও পর্যন্ত কলেরার জীবাণুর মূল উৎস ঠিক কোথায় তা স্পষ্টত জানা যায়নি। আন্দাজ করা হচ্ছে, ফুচকার জল থেকে ছড়াতে পারে জীবাণু। তাই আর কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে ফুচকা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। এর মধ্যেই নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ৭ জন কলেরা রোগীর খবর মিলেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইতিমধ্যেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভাবে রাখা হয়েছে। রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগগুলির প্রাদুর্ভাব সাধারণত বর্ষাকালেই দেখা দেয়। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে আরও সজাগ হতে হবে, পরিষ্কার জল পান করতে হবে। দরকার হলে পানীয় জল ফিল্টার করে খেতে হবে। বাইরের খাবার অর্থাৎ ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খাওয়া কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখতে হবে। জলবাহিত যে কোনও রোগের উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিশেষত বাচ্চা এবং বয়স্কদের এই রোগ যাতে না হয় তার দিকে নজর রাখতে হবে। দূষিত খাবার বা জল খাওয়ার ১২-১৫ ঘণ্টার মধ্যেই কিন্তু কলেরার উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়। জলের মতো মলত্যাগ, বমি ভাব, দেহে জলের অভাব অর্থাৎ ডিহাইড্রেশান (Dehydration), মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব, এবং শরীরের ভারসাম্যহীনতা এই রোগের মূল লক্ষণ। উল্লেখ্য, কোনও ব্যক্তির শরীরে যদি উক্ত লক্ষণগুলি পরিলক্ষিত হয়, তবে দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে নচেৎ বাড়িতে পর্যাপ্ত স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
কলেরা যাতে থাবা বসাতে না পারে সেই লক্ষ্যেই নেপালের প্রশাসন নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, দেশের জনবহুল এলাকাগুলিতে ফুচকা বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হবে। শুধু ফুচকা বিক্রিই নয়, আমজনতা যাতে এই সময় ফুচকা খাওয়া বন্ধ রাখেন সে বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। নেপালের চন্দ্রগিরি এবং বুধনীলাল মেট্রোপলিসে একজন একজন করে কলেরা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে খবর। আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইতিমধ্যেই ‘শুকরাজ ট্রপিক্যাল এবং ইনফেকশিয়াস ডিজিজ’ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন বাদে হঠাৎ কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় কার্যতই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নেপালের জনস্বাস্থ্য আধিকারিকরা। এর আগে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে কলেরা এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা গিয়েছিল।