বীর সাভারকরের ১৩৯ তম জন্মজয়ন্তী পালন

আরও পড়ুন

বিনায়ক দামোদর সাভারকর, বিজেপির হিন্দুত্বের আইডিওলজির জন্মদাতা বলা হয় তাঁকে। তিনিই ছিলেন সেই বিরলতম শ্রেণীর প্রতিনিধি যাঁকে ইতিহাস একইসঙ্গে বীর এবং বিপজ্জনক আখ্যায় ভূষিত করেছে। আজ ২৮ মে, তাঁর ১৩৯ তম জন্ম বার্ষিকী। যে সময় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার লক্ষ্যে আজাদ হিন্দ বাহিনী গড়ে তুলছিলেন একটু একটু করে, সেই সময় বীর সাভারকর ব্রিটিশদের সঙ্গে সহযোগিতা করে লাখ লাখ ভারতীয় ছেলেদের ব্রিটিশ সেনা বাহিনীতে ভর্তি হতে সাহায্য করেছিলেন। 

বিনায়ক দামোদর সাভারকর

উল্লেখ্য, বিনায়ক দামোদর সাভারকরের সম্পর্কে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “সাভারকর হলেন ভারত মাতার খাঁটি সন্তান এবং অসংখ্য দেশবাসীর কাছে তিনি অনুপ্রেরণা স্বরূপ। তাঁর অদম্য ইচ্ছাশক্তি ভারতের ইতিহাসে এক অমূল্য অবদান রেখে গিয়েছে।” গত শতাব্দীর প্রথম দশকের বেশ কিছু সময় ধরে সাভারকর একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন বটে, কিন্তু তখনও তিনি হিন্দুত্বের আদর্শকে সেইভাবে ধ্যান জ্ঞান করে ফেলেননি। বলতে গেলে, তিনি সেইসময় ছিলেন একজন নাস্তিক, যুক্তিবাদী, যিনি ভারতকে ঔপনিবেশিক কব্জার হাত থেকে মুক্ত করবার লক্ষ্যে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন। 

সাভারকরের কথায়, “যখনই ভুল শক্তি প্রয়োগ করে হিংসার মাধ্যমে জাতীয় এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে দমন করবার চেষ্টা করা হবে, তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া হিসেবেই বিপ্লব জন্ম নেবে। অতএব, আমাদের উচিত এই আন্দোলনকে সর্বান্তকরণে স্বাগত জানানো। তার কারণ, এটাই সত্যের পথ এবং সঠিক পথকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার একমাত্র উপায়।” 

সাভারকর ইংল্যান্ডে আইন পড়তে যান ১৯০৬ সালে। সেই সময় তিনি ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সোসাইটি‘-র প্রতিষ্ঠা করেন। যার মূল লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডে পাঠরত ভারতীয় ছাত্রদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা। এই সময় তিনি বলেন, “অমুক ব্রিটিশ বা তমুক অফিসারের নামে, এই আইন বা ওই কানুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে কোনওরকম লাভ হবে না। আমাদের এই আন্দোলন কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা আইনের বিরুদ্ধে নয়। বরং নিজেরাই নিজেদের আইন তৈরি করার অধিকার অর্জনের পক্ষে। এক কথায় বলতে গেলে আমরা চাই সম্পূর্ণ স্বরাজ এবং স্বায়ত্তশাসন।”

উল্লেখ্য, ১৯০৯ সালে অভিনব ভারতীয় সোসাইটির এক সদস্য নাসিকের তৎকালীন কালেক্টর এ এম টি জ্যাকসনকে হত্যা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। পরে জানা যায়, তার কাছ থেকে যে পিস্তলটি পাওয়া গিয়েছে তা জোগাড় করে দিয়েছিলেন খোদ সাভারকরই। সেই ঘটনার অপরাধে সাভারকরকে আন্দামানের কুখ্যাত সেলুলার জেলে ৫০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দিয়ে পাঠানো হয়। 

সেই সময় জেলে বসে তিনি লেখেন, “১৯১১ সালের জুন মাসে যখন প্রথম আমি এখানে আসি, তখন আমার দলের অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে আমাকে মুখ্য কমিশনারের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে ডি ক্লাসের আওতা ভুক্ত করা হয়। ডি ক্লাস অর্থাৎ ডেঞ্জারাস প্রিজনার্স। এরপর দীর্ঘ ৬ মাস আমাকে একা নির্জন কারাবাসে থাকতে বাধ্য করা হয়, আর কাউকে এই সলিটারি কনফাইনমেন্ট দেওয়া হয়নি। আমার আচরণ যদিও পুরোনো সময়কাল থেকে ভালোই ছিল, কিন্তু তবুও ৬ মাসের জন্য আমাকে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়। ওই ৬ মাস কেটে যাওয়ার পরেও আমায় জেল থেকে ছাড়া হয়নি। আমার সহবন্দীরা সেসময় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলেন। যারা অল্প মেয়াদের কয়েদী, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু, আমার কপালে তো ৫০ বছরের সাজা লেখা রয়েছে। নৃশংসতম অপরাধীরা এখানে যে ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন, আমার তো এই বদ্ধ কুঠুরিতে তাও পাওয়ার কথা নয়। এত দীর্ঘ সময় এভাবে কাটানোর জন্য মনের জোর কি আমি জোটাতে পারব?” 

প্রসঙ্গত, এবার বড় পর্দায় সাভারকর। এ বছর সাভারকরের ১৩৯ তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর চরিত্রে বলিউড অভিনেতা রণদীপ হুডার ফার্স্ট লুক সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলেন চলচ্চিত্র নির্মাতারা। সিনেমার পোস্টার শেয়ার করে রণদীপ লেখেন, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে বিস্মৃত নায়কদের একজনকে স্যালুট। আমি আশা করি একজন সত্যিকারের বিপ্লবীর এত বড় চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার গুরুভার আমি নিতে পারব এবং তাঁর কাহিনি সকলকে বলতে পারব, যা এতদিন অনেকের কাছেই অজানা ছিল।”

বীর সাভারকরের লুকে অভিনেতা রণদীপ হুডা

এই ছবির নির্মাতা সন্দীপ সিং এই প্রসঙ্গে বলেন, “এমন এক সময়ে যখন হর্ষদ মেহতা, বিজয় মাল্য এবং ললিত মোদির সিনেমার তালিকা শীর্ষ স্থানে রয়েছে সেখানে বীর সাভারকরের জীবনী বলতে বেশি আগ্রহী হয়েছি। তিনি ছিলেন ভারতের একজন গতিশীল নায়ক এবং একমাত্র ব্যক্তি যিনি ১৯৪৭-এর দেশভাগকে রুখতে পারতেন। স্বাধীনতার জন্য যে সাহসী লড়াই তিনি লড়েছেন তা সত্যিই সকলের কাছে অনুপ্রেরণাদায়ক। তাঁর যা প্রাপ্য তার তুলনায় তিনি কমই সম্মান পেয়েছেন, আমি এই ছবির মাধ্যমে তাঁর কৃতিত্ব সম্পর্কে অবগত করতে চাই দর্শকদের। 

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close