কোনও রকম ঢাক গুড় গুড় না করেই জাতীয় রাজনীতি তোলপাড় হওয়া দুই মহিলার বিবস্ত্র কাণ্ড এবার সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা সিবিআই(Central Bureau of Investigation)-এর হাতে তুলে দিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। শুধু তদন্ত করাই নয়,এই প্রক্রিয়াটি মণিপুর থেকে সরিয়ে ভিন রাজ্যে করার নির্দেশ দিয়েছে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এরফলে আগামী দিনে বিরোধীদের আন্দোলন যে ভোঁতা করে দিল মোদী সরকার তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, উত্তর পূর্বের রাজ্য মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এই ঘটনা ঘিরে উত্তাল হয়ে ওঠে দেশ। গত ৪ মে ওই রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কাংপোকপি জেলায় দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানো হয় বলে চূড়ান্ত অভিযোগ ওঠে। আরও অভিযোগ, তাঁদের একটি মাঠে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা হয়। অভিযোগ, এই ঘটনায় অনেক আগেই থানায় এফআইআর করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় পুলিশ নাকি নিষ্ক্রিয় ছিল। কিছুদিন আগে ঘটনার একটি ভিডিও সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে (যদিও সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি টাইমস ফোর্টিন বাংলা)। ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পরেই দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। সারা দেশে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতেও মণিপুরের ঘটনার নিন্দায় সরব হয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। শুধু তাই নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এই ঘটনার নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিন্দার পর একে একে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি বিরোধীদের। বিষয়টির আঁচ বুঝতে পেরে আর সময় নষ্ট না করে সরাসরি সিবিআই-এর হাতে তদন্তভার তুলে দিল দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। উল্লেখ্য, গত ৩ মে ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয় মণিপুরে। সেদিন রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকায় জনজাতি গোষ্ঠীভুক্ত কুকিদের সঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই সম্প্রদায়েরই বহু মহিলা নির্যাতনের শিকার হন বলেও চূড়ান্ত অভিযোগ ওঠে। বর্তমানে মোদী সরকার বিষয়টির শেষ দেখে ছাড়তে চায় বলেই খবর।
মণিপুরের এই ঘটনাকে ঘিরে নতুন করে তেতে রয়েছে জাতীয় রাজনীতি। ৭৮ দিন মৌনী থাকার পর মণিপুর নিয়ে মুখ খোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা যে কোনও সভ্য সমাজের লজ্জা।’’ তবে মণিপুরের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির দাবিতে সরব ছিলেন বিরোধীরা। এই নিয়ে গত কয়েক দিন যাবৎ অচল ছিল সংসদের বাদল অধিবেশন। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। এমন ঘটনার জেরে মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানোর ঘটনার গতিমুখ যে বদলে গেল তা বলাই বাহুল্য।
মামলাটি ভিন রাজ্যে তুলে নিয়ে এসে সিবিআই অফিসাররা তদন্ত করলে প্রকৃত তথ্য যে উদ্ঘাটিত হবে তা মানছেন অনেকেই।
টাইমস ফোর্টিন ব্যুরো,ইম্ফল,মণিপুর।