আকাশছোঁয়া খরচ এবং অতি মাত্রায় উচ্চ বিলাসিতা নির্বিশেষে, বিশ্বের বহু বড় বড় প্রাসাদের চেয়ে রাষ্ট্রপতির বাসভবনের জাঁকজমক কোনও অংশে কম নয়। রাষ্ট্রপতি ভবন হল একটি শক্তি কেন্দ্র এবং একটি দূর্গ যা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য মিশ্রণ। বিশ্ব জুড়ে এর স্থাপত্যের উৎকর্ষতা এবং বিশালতা সত্যিই অবাক করে। এটি শুধু বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের সরকার মনোনীত প্রধানের বাসভবনই নয়, বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রপতির বাসভবনও।
স্বাধীনতার আগে ১৯১১ সালে যখন ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল, সেইসময়ই তৈরি হয় এই রাষ্ট্রপতি ভবন। সাল ১৯১২, দিল্লি তখন সবে ব্রিটিশ শাসিত ভারতের রাজধানীর আখ্যা পেয়েছে, সেইসময় দিল্লির মালচা এবং রাইসিনা গ্রামের প্রায় এক হাজার একর জমির উপর রাষ্ট্রপতি ভবন নির্মাণ কাজের তোড়জোড় চলছে। কয়েকশো মজদুর রোজ সিমেন্ট, সুড়কি, বালি মেখে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে এই বিরাট অট্টালিকা। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে নির্মিত হয় এটি। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি এটি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। ভবনটি চার তলা, তাতে ঘরের সংখ্যা মোট ৩৪০ টি। ভবনের ৩৪০ টি ঘরের মধ্যে লিভিং রুম রয়েছে ৬৩ টি।
রাষ্ট্রপতির বাসভবন তৈরির নেপথ্যে রয়েছে ছোট্ট এক ইতিহাস। ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ইরউইনের জন্য এই ভবন তৈরি করার চিন্তা মাথায় আসে ব্রিটিশ স্থপতি এডুইন ল্যান্ডসিয়ার লুটিয়েন্সের মাথায়। ১৯২৯ সালে তৎকালীন ভাইসরয় এই ভবনে ওঠেন। সেইসময়ে আনুমানিক ১৪ মিলিয়ন রুপির বিনিময়ে এই ভবনটি তৈরি করেন স্যার লুটিয়েন্স। ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল সি রাজগোপালাচারি প্রথম এই বাসভবনে ছিলেন। সেইসময় এই ভবনের নাম ছিল ‘গভর্নমেন্ট হাউস’। গভর্নমেন্ট হাউস থেকে রাষ্ট্রপতি নাম রাখা হয় রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদের সময়।
উল্লেখ্য, আগামী ২৪ জুলাই দেশের ১৪ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে রামনাথ কোবিন্দের। তার আগেই পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আগামী ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার এই মর্মে সম্প্রতি একটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন স্থির করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুন তার বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে এবং আগামী ২৯ জুন মনোনয়ন পত্র জমা করবার শেষ দিন। যদি ভোট গণনার প্রয়োজন হয়, তাহলে ২১ জুলাই তা অনুষ্ঠিত হবে।”
দেশে নতুন করে কোভিড সংক্রমণ ক্রমাগত বাড়ছে৷ তাই সকল প্রকার কোভিড বিধি মেনেই এই নির্বাচন সম্পন্ন হবে, এমনটাই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দিল্লিতে সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দান করবেন সাংসদরা। রাজ্য বিধানসভার সদস্যরা নিজ নিজ রাজ্যের বিধানসভায় নিজস্ব মত প্রকাশ করবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে বিরোধী প্রার্থী প্রাক্তন লোকসভা স্পিকার মীরা কুমারকে পরাজিত করে দেশের ১৪ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন রামনাথ কোবিন্দ। ৬৫.৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন তিনি। সেইসময় ইলেক্টোরাল কলেজের ৭ লক্ষ ২ হাজার ৪৪ টি ভোট পড়েছিল তাঁর সমর্থনে।
ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া বেশ জটিল। যা লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক। লোকসভা এবং রাজ্যসভার নির্বাচিত সদস্য, দিল্লি, এবং পুদুচেরি সহ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির আইনসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ভারতের রাষ্ট্রপতির এই বিশেষ নির্বাচন পদ্ধতিটিকে বলা হয় ‘একক স্থানান্তর যোগ্য ভোটের সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’।
ভোটে কে কিভাবে জয়ী হলেন তা জানারও এক বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি ভোটের আলাদা গুরুত্ব আছে। প্রতিটি বিধায়কের ভোটের মান নির্ধারিত হয়, রাজ্যের মোট জনসংখ্যাকে বিধায়কের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে, তাকে আরও ১০০০ দিয়ে ভাগ করার পর যে ফল বের হয়, সেই ফল অনুযায়ী। সে কারণেই, রাজ্য অনুযায়ী বিধায়কদের ভোটের গুরুত্ব পরিবর্তিত হয়।