এবার এক বিখ্যাত সুগন্ধি প্রস্তুতকারী সংস্থার বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্কের সঞ্চার হয়েছে। সুগন্ধির এক বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘লেয়ার‘ (Layer’r), তাদের ‘শট‘ (Shot) নামক এক সুগন্ধির বিজ্ঞাপন দেখার পর অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দেশবাসী। বলিউড জগতের একধিক অভিনেতা অভিনেত্রীরাও এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এই বিজ্ঞাপন নির্মাণকারীদের মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিজ্ঞাপনটি এক কথায় ধর্ষণের ইঙ্গিত দেয়।
তাদের একটি বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়, শপিং মলে এক তরুণী সুগন্ধির কাউন্টারে ঢোকে, সেখানে চারজন তরুণ ওই তরুণীকে দেখে বলে ওঠে, “আমরা চারজন, আর ও একা। তাহলে কে নেবে শট?” এই কথা শুনে মেয়েটি ভয় পেয়ে চমকে পেছন ঘুরে তাকায়। এই সংস্থারই আরেক বিজ্ঞাপনে দৃশ্যায়িত হয়েছে, একটি ঘরের বিছানায় দুই তরুণ তরুণী বসে রয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ঘরে চারজন তরুণ দরজা খুলে ভিতরে ঢোকে এবং বিছানায় বসে থাকা তাদের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করে, “শট মেরেছিস মনে হচ্ছে?” বন্ধুটি বলে ওঠে, “হ্যাঁ মেরেছি তো।” এবার ওই চারজন তরুণের মধ্যে একজন বলে ওঠে, “এবার আমাদের পালা”, বলে সে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায় এবং সেখানে রাখা শটের বডি স্প্রে-টি হাতে তুলে নেয়।
এই দুই বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুই অশ্লীল, এবং গণধর্ষণের ইঙ্গিত দেয়। বিজ্ঞাপন দুটি টিভি এবং ইউটিউবে প্রচার হওয়া মাত্রই তা কেন্দ্র এবং তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের চোখে পড়ে। এবং সঙ্গে সঙ্গেই সম্প্রচার মন্ত্রকের তরফ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, এই বিজ্ঞাপন দুটি বাতিল করার। উল্লেখ্য, এই বিজ্ঞাপন দুটি প্রথম সম্প্রচারিত হয় আইপিএল (IPL) -এ ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাচের সময়।
প্রসঙ্গত, এই বিজ্ঞাপনটি সম্পর্কে বলিউডের একাধিক তারকারা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বলিউডের প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ফারহান আখতার, রীচা চাড্ডা প্রমুখ অভিনেতা অভিনেত্রীরা বিজ্ঞাপনটিকে নিম্ন রুচির বলে ট্যুইট করেছেন। অভিনেত্রী রীচা চাড্ডা এই বিজ্ঞাপনের নিন্দাসূচক মন্তব্য করে লেখেন, “একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করতে একটি ব্র্যান্ডকে অনেকগুলি পদ্ধতির মাধ্যম দিয়ে যেতে হয়। ক্রিয়েটিভ স্ক্রিপ্ট, ক্লায়েন্ট, এজেন্সি, কাস্টিং এদের মধ্যে সকলেই এই বিজ্ঞাপনের সম্মতি দিয়ে দিলেন! এরা সবাই কি ধর্ষণকে নিছক রসিকতা বলে মনে করেন? এই জঘন্য নোংরামির জন্য এই ব্র্যান্ডটির বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত।”
অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও নিজের মন্তব্য পেশ করেছেন এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে। তিনি লেখেন, “খুবই লজ্জাজনক ঘটনা। এই বিজ্ঞাপন টেলিকাস্ট হতে কতগুলি স্তরের ছাড়পত্র পেতে হয়েছে, তারা কি করে এই বিজ্ঞাপন সম্প্রচারের জন্য অনুমোদন দিলেন! আমি খুব খুশি, সম্প্রচার মন্ত্রক বিজ্ঞাপনটিকে নিষিদ্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে।”
উল্লেখ্য, লেয়ার শটের এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে দিল্লি কমিশন ফর উইমেন-এর চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল কেন্দ্রীয় তথ্য এবং সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরকে একটি চিঠি লেখেন। নারীবিরোধী এই বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক বলে দাবি স্বাতীর। তাঁর কথায়, “এই ধরনের বিজ্ঞাপনগুলি গণধর্ষণের সংস্কৃতিকে প্রচার করে। আমি বিজ্ঞাপনটি দেখার পর রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। টেলিভিশনের পর্দায় কত কুরুচিকর, লজ্জাজনক এবং অযৌক্তিক সব বিজ্ঞাপন আমাদের দেখানো হয়৷ এটি কোন ধরনের সৃজনশীলতা! এর বিরুদ্ধে এফ-আই-আর (FIR) নথিভুক্ত করা হোক। পাশাপাশি, এই বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে জরিমানা দিতে বলা হোক।”