আজ জাতীয় ডাক্তার দিবস। কিংবদন্তী চিকিৎসক এবং পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধানচন্দ্র রায়কে সম্মান জানাতে ১ জুলাই ওঁনার জন্মদিবসের দিনটিকে দেশ জুড়ে জাতীয় ডাক্তার দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। তবে ১ জুলাই শুধু জন্মদিন নয়, বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যদিনও আজই। এমনই এক অদ্ভুত সমাপতন জড়িয়ে আছে এই মানুষটির সঙ্গে। চিকিৎসা জগতে তিনি এককথায় ‘ধন্বন্তরি’ ছিলেন। কেউ কেউ বলতেন তাঁর নাকি দিব্য দৃষ্টি রয়েছে। মহাত্মা গান্ধী তাঁর প্রশংসা করে বলতেন, “বিধান, দ্য সেফটি হ্যান্ড অফ ইন্ডিয়া” (Bidhan, the safety hand of India).
জানা যায়, স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক কালে বিধানচন্দ্রের চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর বাবা প্রকাশচন্দ্র রায় ছেলের নাম বিধান রাখা সম্পর্কে বলেছিলেন, “বিধান নাম দেওয়া সত্যিই সার্থক হয়েছে। কেশবচন্দ্র সেনের লেখা ‘নববিধান’ নামক বইটি থেকে বিশেষ অনুপ্রাণিত হয়ে আমি ওঁর নাম রেখেছিলাম বিধান। রোগীর মুখ দেখেই রোগ নির্ণয় করবার মতো অলৌকিক বিদ্যা আছে ওঁর। খুব সহজ সরল চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করে বিধান। একেবারেই কম ওষুধ দেয়।”
উল্লেখ্য, বিশ্ব জুড়ে ডাক্তার দিবস পালিত হয়ে থাকে ৩০ মার্চ। কিন্তু ভারতে প্রতি বছর ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ (Indian Medical Association/IMA)-এর তরফ থেকে ১ জুলাই তারিখে ড. বিধানচন্দ্র রায়ের সম্মানার্থে এই দিবস পালিত হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯১ সালে এই দিবস পালনের সূচনা করে। এই বছর জাতীয় ডাক্তার দিবসের থিম হল ‘ফ্রন্ট লাইনে ফ্যামিলি ডক্টরস’। যাঁরা নিজেদের কথা ভুলে যেকোনও পরিস্থিতিতে অক্লান্ত পরিশ্রমের সঙ্গে মানুষের সেবা করে আসছেন, এই দিনটি সেইসব মহান চিকিৎসকদের জন্যই নিবেদিত।
গত দু বছর ধরে পৃথিবীব্যাপী করোনার দাপট চলেছে। সেসময় একাধিক চিকিৎসক নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের প্রাণ ফিরিয়েছেন। তাঁদের কাছে সেসময় দিনরাতের ফারাক ছিল না। প্রত্যেকটা দিন একইভাবে মুমূর্ষু রোগীদের এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলার এক বিরাট যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছেন চিকিৎসকেরা। স্বভাবতই কোভিড মহামারির সময় থেকে ১ জুলাই দিনটির গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে।
আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশের সমস্ত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে সম্মান জ্ঞাপন করে বলেন, “আমাদের এই সমাজকে সুস্থ রাখতে যাঁরা প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন, তাঁদের এই বিশেষ দিনে আমি কুর্নিশ জানাই৷ আমরা কোভিড পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি, এর পেছনে চিকিৎসকদের বিরাট অবদান রয়েছে। কোভিডের মতো এক কঠিন লড়াইয়ে হাল ছেড়ে দেননি তাঁরা। তাঁদের অসীম ধৈর্য্য এবং সেবার ফলে আমাদের দেশ আজ ফের নতুন করে বাঁচতে শিখেছে। চিকিৎসকরাই আমাদের ঈশ্বর।”
চিকিৎসকদের ছাড়া সমগ্র মানবজাতি যে অচল, সে সম্পর্কে সকলেই অবগত। তাঁরা আছেন বলেই আমরা আজ সুস্থ শরীরে বেঁচে আছি। এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছরই একটি নির্দিষ্ট থিম তৈরি করা হয়। এর আগে ২০২০ সালে কোভিড মহামারি কালে থিম ছিল ‘Lessen the morality of Covid-19’. উল্লেখ্য, এই বিশেষ দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফ্রি হেলথ চেক-আপ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এছাড়া সাধারণ মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একাধিক অভিযান চালানো হয় এই বিশেষ দিনে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আবার ৩০ মার্চ দিনটিকে চিকিৎসক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এই দিনই জাতীয় ডাক্তার দিবস হিসেবে পালিত হয়। এছাড়া ব্রাজিলে ১৮ অক্টোবর, ইরানে ২৩ আগস্ট এই বিশেষ দিন উদযাপিত হয় চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে। এই দিনটিতে একাধিক সরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও একাদিক ক্লাব, বা সংগঠনগুলি এইদিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে থাকে। এভাবেই চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর আগে ২০১৯ সালের এই বিশেষ দিনের বিষয় ছিল ‘চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতি হিংসাত্মক আচরণকে কখনওই বরদাস্ত করা হবে না’ (Zero tolerance to violence against doctors and clinical establishment).