অবশেষে গ্রেফতার সাজিদ মীর, মুম্বাই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী

মুম্বাই হামলার মূল হোতা সাজিদ মীরকে অবশেষে গ্রেফতার করল পাকিস্তান পুলিশ। লাহোর আদালতের তরফ থেকে তাঁকে ১৫ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

মুম্বাইবাসীর কাছে আজও ২৬/১১ একটি অভিশপ্ত দিন। দেখতে দেখতে ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসের সেই ভয়াবহ রাতের স্মৃতি আজও মানুষের মনে জীবন্ত হয়ে আছে। ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত লাগাতার হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীরা। তাদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন প্রায় ১৬৪ জন এবং আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ৩০৮ জন। সন্ত্রাসবাদীদের যাত্রা আরম্ভ হয়েছিল করাচি বন্দর থেকে। জলপথে বাণিজ্যনগরীতে অনুপ্রবেশ করে মোট ৮টি জায়গায় হামলা চালায় তারা। তার মধ্যে রয়েছে – ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, তাজমহল প্যালেস, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, লিওপোল্ড ক্যাফে, মেট্রো অ্যাডল্যাবস, নরিম্যান হাইস ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার, কামা হাসপাতাল, টাইমস অফ ইন্ডয়া ভবন এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলি।

২৬/১১-এর মুম্বাই হামলা

উল্লেখ্য, ২৪ জুন অর্থাৎ গত শুক্রবার মুম্বাই জঙ্গি হামলার অন্যতম মূলচক্রী সাজিদ মীরকে কার্যত গ্রেফতার করল পাকিস্তানের পুলিশ। এতদিন ধরে দাবি করা হচ্ছিল, তিনি নাকি মারা গিয়েছেন। এবার লস্কর-ই-তৈবার সেই জঙ্গিকেই গ্রেফতার করল পাকিস্তান। এককথায় মুম্বাই হামলার ওই ১০ জন পাক জঙ্গির মধ্যে এই সাজিদ মীরই ছিলেন মূল মাথা বা ‘মাস্টারমাইন্ড’ (Mastermind). জানা গিয়েছে, লাহোর আদালতের তরফ থেকে সাজিদ মীরের ১৫ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মুম্বাই হামলার মূলচক্রী সাজিদ মীর

সাজিদ মীর সম্পর্কে গোয়েন্দাদের দাবি, মুম্বাইতে যখন হামলা চলছিল সেসময় পাকিস্তানে বসে ওই ১০ পাক জঙ্গিকে সমস্তরকম নির্দেশাবলি পাঠাচ্ছিল সাজিদ। উল্লেখ্য, এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাজিদ মীরের জন্য ৫০ লক্ষ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। সাজিদ মীরকে বলা হয়ে থাকে ‘মুম্বাই হামলার প্রজেক্ট ম্যানেজার’। সূত্রের খবর, এর আগে ২০০৫ সালে তিনি নাকি ভুয়ো পাসপোর্ট দেখিয়ে ভারতে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন জঙ্গিগোষ্ঠী লস্করের সামাজিক এক সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়া-এর সক্রিয় সদস্য।

শুধু মুম্বাই-ই নয়, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ডেনমার্কেও হামলা চালিয়েছিল সাজিদ মীর। তাঁকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদী’ বলে ঘোষণা করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন প্রশ্ন উঠছে এত বছর বাদে কেন এই কুখ্যাত সাজিদ মীরকে গ্রেফতার করবার সিদ্ধান্ত নিল পাকিস্তান? আসলে, এখন ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স অর্থাৎ এফ-এ-টি-এফ (FATF)-এর ‘ধূসর তালিকা’ থেকে বেরিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। এর আগে একাধিক নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে আর্থিক সহায়তা করবার জন্য ২০০৮ সালেই পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করা হয়। সেই লক্ষ্যেই এবার সাজিদকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে পাক পুলিশবাহিনী।

প্রসঙ্গত, জানা যায় সাজিদ মীরের মাথার দাম ৫০ লক্ষ টাকা বলে ঘোষণা করেছিল এফবিআই (FBI). এর আগে ২০১১ সালে শিকাগোর একটি আদালত সাজিদকে জঙ্গি তকমা দেয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নাকি জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন তিনি। তবে, এখনও পর্যন্ত পাক প্রশাসন সাজিদের গ্রেফতারি সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এর ফলে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই খবরটি বাস্তবে কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।

পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টালিজেন্স অর্থাৎ আইএসআই (ISI) মুম্বাই হামলার পরে জানিয়েছিল, জঙ্গিরা আগে থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরিকল্পিতভাবেই এই হামলা চালিয়েছিল। ওই জঙ্গি হামলায় ধৃত জঙ্গি আজমল কাসভ ছাড়া আর সকলেই প্রাণ হারিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা বিচারের পর ২০১০ সালে পাঁচটি অপরাধের জন্য আজমল কাসভের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় ট্রায়াল কোর্ট। মুম্বাই হামলার দশ বছর বাদে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ দাবি করেছিলেন, এই হামলায় নাকি ইসলামাবাদের ভূমিকা রয়েছে।

মুম্বাইয়ের এই ভয়াবহ হামলা শুধু ভারত নয়, গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অন্যতম ভয়ানক হামলা। এর আগে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত জাকির-উর-রেহমানকে চিহ্নিত করেছিল। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী জিহাদ ওয়াচ এর আগে জানিয়েছিল, সাজিদ মীরের বিষয়ে বহির্বিশ্বকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখেছে পাকিস্তান। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই পাক গোয়েন্দারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে ভারত বিরোধী দলিল দস্তাবেজ তৈরি করেছে।

ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত পরিস্থিতি

এর আগে মার্কিন এক প্রকাশনায় বলা হয়েছিল, “মুম্বাইয়ের এই ভয়ানক হামলায় প্রমাণিত হয়েছে লস্কর জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কতটা সখ্যতা এবং নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধের কারণেই জঙ্গিদের ব্যবহার করছে ইসলামাবাদ। এমনকি আফগান তালিবান সন্ত্রাসীদেরও মদত জোগাতে দ্বিধা বোধ করেনি পাক সরকার।” গত ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার এক গির্জায় হামলা হয়েছিল, সেই হামলা নাকি মুম্বাই হামলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

২৬/১১-এর এই জঙ্গি হামলা আজও ভারতবাসীকে দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে বেড়ায়। আজও সেই কালো দিনের ক্ষত রয়ে গেছে দেশবাসীর মনে। শুধু ভারতই নয়, সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে ভারত সহ আমেরিকা, কানাডা, জর্ডান, মালয়েশিয়া, মরিশাস এবং ইজরায়েলের মানুষ।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close