জৈব রাজ্য এবং অপরাধমুক্ত রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন সিকিমের

আরও পড়ুন

চারদিক পাহাড়ে বেষ্টিত ছোট্ট রাজ্য সিকিম। ভ্রমণবিলাসীদের বরাবরই ভীষণ পছন্দের জায়গা। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে অবস্থিত ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিম ২০১৬ সালে প্রথম ‘জৈব রাজ্য’ বা ‘অর্গ্যানিক স্টেট’ (Organic State) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ কথা প্রায় সকলেরই জানা। প্রায় ৫ বছর পূর্বে যখন সবুজ বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, তখন একইসঙ্গে কীটনাশক বাদ দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে জৈব চাষের কথা বলা হয়েছিল। 

সবুজে ঘেরা সিকিম রাজ্য

গত ১২ বছর আগে ২০০৩ সালে পবন কুমার চামলিং-এর সরকার থাকাকালীন প্রথম জৈব চাষের কথা ভাবা হয় সিকিমে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে বিধানসভায় তার ঘোষণা করার পরই রাজ্যের চাষীরা জৈব চাষ শুরু করে। তখন থেকেই চাষের জমিতে কোনওরকম রাসায়নিক সার প্রয়োগ নিষিদ্ধ করার কথা ঘোষণা করা হয়। শুধু তাই নয়, রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করা শাক সবজি বাজারে কেনাবেচাও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলত, নিরুপায় সিকিমের চাষীরা। জৈব চাষ ছাড়া আর কোনও বিকল্প পথ ছিল না তাদের। 

প্রথমদিকে বেশ অসুবিধেই হত চাষীদের। একেবারে নতুন, অভিনব পদ্ধতি যা তারা আগে কখনও প্রয়োগ করেননি চাষের ক্ষেত্রে। শুরুর দিকে চরম লোকসানও হয়েছিল তাদের। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে সেসময় তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, লোকসানের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে। দু-তিন বছর পর সিকিমের চাষীরা অভ্যস্ত হয়ে পড়লেন জৈব চাষে। ফের উন্নত হল তাদের চাষাবাদ। বর্তমানে, সিকিমে চাষের ক্ষেত্রে কীটনাশকের ব্যবহারকে রীতিমতো অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। এমনকি, কোনও চাষী যদি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করে থাকেন, তাহলে অপরাধস্বরূপ তাকে এক হাজার চারশো ডলার অর্থ জরিমানা দিতে হয় এবং প্রায় ৩ মাসের জন্য তাকে জেলেও কাটাতে হতে পারে। 

রাসায়নিক মুক্ত চাষাবাদে আগ্রহী হওয়ার লক্ষ্যে সিকিমের মূল কারণ ছিল জনস্বাস্থ্য। পাশাপাশি, সেই রাজ্যের মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখার দায়িত্বও নিয়েছিলেন তারা। রাজ্যের মানুষকে সতেজ, টাটকা, উন্নত মানের খাবার পৌঁছে দেওয়া ছিল তাদের লক্ষ্য। রাসায়নিক মুক্ত আবহাওয়া, জল, রাজ্যের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্রতী হয়েছিল সিকিম। এর ফলে, ভারতের অন্যান্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে এক অনন্য নজির গড়ে ফেলেছে সিকিম।

এই জৈব চাষের ফলে সিকিমের প্রায় ৬৬ হাজারেরও বেশি কৃষক পরিবার উপকৃত হয়েছে। ভারতের মতো জনবহুল দেশে যেখানে মারাত্মক হারে প্রতিনিয়ত দূষণ ছড়াচ্ছে, রাসায়নিক বা কীটনাশক প্রয়োগ করা চাষাবাদের ফলে মানুষের শরীরে নিত্যনতুন রোগের বাসা বাঁধছে, সেখানে সিকিমের এই জৈব চাষের পদ্ধতিকে এককথায় মাইলফলক বলা চলে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের প্রথম অর্গ্যানিক স্টেট বা জৈব রাজ্য হিসেবে সিকিম এর আগেই স্বীকৃতি লাভ করেছে। এবার আরেক সম্মান পেল এই রাজ্য। জৈব রাজ্যের পাশাপাশি সিকিমকে ‘অপরাধমুক্ত রাজ্য’ হিসেবে সম্প্রতি স্বীকৃতি দিল ‘ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস লন্ডন’ (World Book of Records London)। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক শহরের এক অনুষ্ঠানে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সুশাসনের জন্য শংসাপত্র পেয়েছেন সিকিমের রাজ্যপাল গঙ্গা প্রসাদ। রাজ্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডস লন্ডনের চেয়ারম্যান ড. দিবাকর সুকুল এবং ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সাংসদ বীরেন্দ্র শর্মা। 

সিকিমের এই খ্যাতি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আরও বিভিন্ন রাজ্যকে। এখন মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, কেরলও চেষ্টা করছে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার। হিমাচল প্রদেশের পর্যটন শিল্পেও জৈব চাষ  বিস্তর প্রভাব বিস্তার করেছে। সেখানকার বিভিন্ন রিসোর্টগুলি নিজেদের জৈব রিসোর্ট বলে ঘোষণা করেছে। বাইরে থেকে আসা পর্যটনকারীরা এখানকার বাগান থেকে নিজেরাই ফসল তুলে তা রান্না করে খেতে পারেন। উল্লেখ্য, জৈব চাষের সম্পর্কে  অবগত রাখতে এবং সচেতনতা বাড়াতে সিকিমের স্কুলের সিলেবাসেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জৈব চাষের পদ্ধতি। এই রাজ্যে জৈব চাষের পাশাপাশি প্লাস্টিকের জলের বোতল একেবারেই নিষিদ্ধ, স্টাইরোফাম বা ওই জাতীয় পণ্যও একেবারে ব্যবহার হয় না এখানে। 

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close