ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি এজি পেরারিভালানকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আজই অর্থাৎ বুধবার এই আদেশ দেওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের তরফে। জানা যাচ্ছে, দেশের শীর্ষ আদালতের এই রায়ে নলিনী শ্রীহরণ এবং তাঁর স্বামী এবং শ্রীলঙ্কার নাগরিক মুরুগান সহ মামলার অন্য ছয় জন আসামির মুক্তির সম্ভাবনা বৃদ্ধি হবে এর ফলে। আজকের এই রায়ের পরেই পেরারিভালান বলেন, “সত্য এবং ন্যায় বিচার আমাদের পক্ষেই ছিল। জনগণের অশেষ ভালোবাসা এবং সমর্থন ছাড়া এটি সম্ভব হত না।”
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধীর হত্যার ঘটনা ঘটে। সে সময় এজি পেরারিভালানের বয়স মাত্র ১৯ বছর। তিনিই ওই সময় হত্যাকারীদের বিস্ফোরক পদার্থ সরবরাহ করেন বলে অভিযোগ ছিল। তামিল টাইগারের সদস্য শিভারাসনকে ৯ ভোল্টের দুটি ব্যাটারি জোগাড় করে দিয়েছিলেন পেরারিভালান। রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য যে বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল, তাতে ওই ব্যাটারি দুটি লাগানো ছিল। ১৯৯১ সালের ১১ জুন পেরিয়ার থিডাল থেকে পেরারিভালানকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তারপর দীর্ঘ ৩১ বছর আদালতের নির্দেশে জেলেই কাটিয়েছেন তিনি।
শুধু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীই নয়, আরও ৪৩ জনকে হত্যা করার জন্য যে বেল্ট বোমা ব্যবহৃত হয়েছিল, তার জন্য যেসব ব্যাটারি লাগে তা কেনার অভিযোগ ছিল পেরারিভালানের বিরুদ্ধে। ১৯৯৮ সালে আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার কথা ঘোষণা করে। তবে, ২০১৪ সালে সেই শাস্তি লাঘব করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয় পেরারিভালানকে। এর আগে ২০১৫ সালে পেরারিভালান তামিলনাড়ু সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে একটি পিটিশন জমা দেন। ভারতের সংবিধানের ১৬১ নম্বর ধারা অনুযায়ী মুক্তির দাবি করেছিলেন তিনি। পরে তিনি দ্বারস্থ হন শীর্ষ আদালতের কাছে।
১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামবুদুরে এক আত্মঘাতী বোমা হামলার ফলে মৃত্যু হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর। তাঁর আশেপাশে থাকা বহু মানুষ এই বোমা হামলায় আহত হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম-এর সদস্য থেনমোঝি রাজারত্নম ছিলেন এই ঘটনার মূল ষড়যন্ত্রকারী। এই বোমা হামলার ঘটনায় প্রথমে তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তিন জন আসামিকেই মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, বহু বছর যাবৎ কারাগারে বন্দী ছিলেন এজি পেরারিভালান। কারাগারে থাকাকালীন ভালো আচরণের রেকর্ড রয়েছে তাঁর। বেশ কিছু শিক্ষাগত যোগ্যতাও অর্জন করেছেন তিনি কারাগারে থাকাকালীন। রচনা করেছেন একটি বইও।
অবশেষে দীর্ঘ ৩১ বছর টানা জেল খাটার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি মুক্তি পেতে চলেছেন। উল্লেখ্য, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে রাজীব গান্ধী হত্যার সঙ্গে যুক্ত সাত বন্দী নলিনী শ্রীহরণ, মুরুগান, পেরারিভালান, রবার্ট পায়াস, রবিচন্দ্রন, সায়ান্থান এবং জয়কুমারের মুক্তির জন্য আর্জি জানিয়েছিলেন।