যৌনকর্মীদের সম্মতি দেওয়া এবং দেহ ব্যবসাকে বৈধ পেশা হিসেবে সম্মতি জানাল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে এবার থেকে যৌনকর্মীদের কাজে আর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। যৌনকর্মের সঙ্গে জড়িত নারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ আর ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে পারবে না। সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে, যৌনকর্মীরা এবং তাঁদের সন্তানরা আইনের অধীনে মর্যাদা এবং সম্মান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী।
উল্লেখ্য, এদিন বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও-এর অধীনে তিন বিচারপতির বেঞ্চ যৌনকর্মীদের সুরক্ষার জন্য ৬টি নির্দেশ জারি করেছেন। সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও, বিআর গাভাই এবং এএস বোপান্নার একটি বেঞ্চ যৌনকর্মীদের জন্য এই ৬টি সুরক্ষা নির্দেশ জারি করেছে। বিচারপতির বেঞ্চ এদিন জানিয়েছে, “কোনও যৌনকর্মী যদি প্রাপ্ত বয়স্ক এবং নিজের ইচ্ছায় এই পেশায় নিযুক্ত হন, তাহলে সেক্ষেত্রে পুলিশ তাঁদের কাজে কোনও রকম বাধা দিতে পারবে না এবং অপরাধমূলক কোনও পদক্ষেপও গ্রহণ করতে পারবে না।”
সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে এদিন আরও বলা হয় যে, সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে এই দেশের প্রত্যেকটি মানুষের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। পুলিশ আধিকারিকরা যখন অভিযান চালায়, তখন যৌনকর্মীদের গ্রেফতার বা হয়রানি করতে পারবে না। কারণ, স্বেচ্ছায় যদি কেউ যৌনকর্মের পেশাকে বেছে নেন, তাহলে তা বেআইনি নয়। পাশাপাশি এদিন আরও বলা হয়, একজন নারী যদি যৌনকর্মী হন, সেক্ষেত্রে তাঁর সন্তানকে তাঁর মায়ের থেকে আলাদা করাও যাবে না। যৌনকর্মী এবং তাঁদের সন্তানদের মৌলিক অধিকার এবং মর্যাদা পূর্ণ জীবন যাপন করার অধিকার রয়েছে।
তবে, যদি কোনও নাবালককে যৌনপল্লীতে বাস করতে দেখা যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে খতিয়ে দেখা হবে যে শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে কিনা। এদিন যৌন হয়রানির বিষয়ে যৌনকর্মীদের সাহায্য করার নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত। কোনও যৌনকর্মী যদি যৌন নির্যাতনের শিকার হন তাহলে সেক্ষেত্রে তাঁকে আইনের অধীনে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা করতে হবে এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া ওই ব্যক্তিকে সমস্ত রকম সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
শীর্ষ আদালত এদিন জানিয়েছে যে, অনেক সময়ই দেখা যায় যে যৌনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ রীতিমতো নিষ্ঠুর এবং হিংসাত্মক মনোভাব পোষণ করছে। যৌনকর্মীদের এমন একটি নিম্ন শ্রেণীর বলে মনে করা হয় যাদের কোনও অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। এবার থেকে পুলিশ এবং অন্যান্য আইন প্রণয়নকারী সংস্থাগুলিকে যৌনকর্মীদের অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল হতে হবে৷ পাশাপাশি এদিন সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াকে উপযুক্ত নির্দেশিকা জারি করার জন্য আবেদন জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, যৌনকর্মীদের অভিযোগ, গ্রেফতার, উদ্ধার অভিযান অথবা অন্য কোনও ক্ষেত্রে যৌনকর্মীদের পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না পুলিশ।
পাশাপাশি, যৌনকর্মীদের কোনও ছবি সম্প্রচার করা যাবে না, যাতে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ পায়। সুপ্রিম কোর্ট এবার নির্দেশ দিয়েছে অভিযান চালানোর যাতে প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের যাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটক করা হয়েছে, তাঁদের পর্যালোচনা করতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে তাঁদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। উল্লেখ্য, কোভিড পরিস্থিতির সময় যৌনকর্মীদের সমস্যা নিয়ে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। তারই শুনানি চলছিল। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২৭ জুলাই।