এক মাসে রেকর্ড সংখ্যক আয় করল তিরুপতি মন্দির

আরও পড়ুন

এবার রেকর্ড গড়ল অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দিরভেঙ্কটেশ্বর দেবের ভাণ্ডারে যে অর্থের কমতি নেই, সে প্রায় সকলেরই জানা। দেশের সবচেয়ে ধনীতম মন্দিরের মধ্যে এটি একটি। তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামীর এই মন্দিরে চলতি বছরের মে মাসে মোট আয় হয়েছে ১৩০.২৯ কোটি টাকারও বেশি। মন্দিরের এই এক মাসের আয়ই তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলের। গত দু বছর ধরে করোনা মহামারি এবং লকডাউনের জেরে মন্দিরে ভক্ত সমাগম একেবারে বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর মন্দিরে ফের আগের মতো ভক্তের ঢল আসতে শুরু করে।

তিরুপতি মন্দির

উল্লেখ্য, মে মাসে রেকর্ড সংখ্যক ভক্তদের মন্দির পরিদর্শনের কারণ হল, মে মাস মানেই গরমের ছুটি। ফলত, দেশ বিদেশ থেকে বহু মানুষ এসেছে বেড়াতে। এই মন্দিরের কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা এভি রেড্ডি এ বিষয়ে জানিয়েছেন, “মে মাসে তিরুপতি মন্দিরে প্রায় ২২,৬২,০০০ জন ভক্তের সমাগম হয়েছিল। ঠাকুরের প্রসাদের জন্য ১.৮৬ লক্ষ লাড্ডু বিক্রি হয়েছে। প্রায় ৪৭ লক্ষ ভক্ত মাতৃশ্রী তারিগোন্ডা ভেঙ্গামাম্বা অন্নপ্রসাদা ভবনে অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করেছিলেন। ভক্তরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ীই মন্দিরে কিছু না কিছু দান করেন। অনেকেরই আবার মানত থাকে। প্রায় ১০,৭২,০০০ জন ভক্ত এবার মন্দিরে চুল দান করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “শনি এবং রবিবার তিরুমালায় একেবারে অপ্রত্যাশিত রকমের ভীড় হয়। সপ্তাহের শেষে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের দর্শন পেতে দু-তিন দিন ধরে রীতিমতো অপেক্ষা করতে হয় ভক্তদের।” ভক্তদের বিশ্বাস এই তিরুপতি মন্দিরে যাঁরা চুল দান করেন, তাঁদের স্বয়ং দেবী লক্ষ্মী আশীর্বাদ করেন। এই মন্দিরে যে পরিমাণ চুল ভক্তরা দান করে থাকেন, তার চেয়ে ১০ গুণ ধনসম্পত্তি তারা ফিরে পাবেন বলে অনেকেরই বিশ্বাস। পাশাপাশি অনেকেরই অনেক সমস্যা থাকে, সেই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যও অনেকে তিরুপতি মন্দিরে চুল দান করে থাকেন।

শুধু যে পুরুষ ভক্তরাই ভেঙ্কটেশ্বর দেবের মন্দিরে চুল দান করতে পারেন তা নয়, মহিলারাও চুল দান করতে পারেন। অনেকেরই অনেক মানত, মনস্কামনা থাকে। ভগবানের প্রতি ভক্তি এবং সমর্পণের ভাব থেকেই চুল দান করেন পুণ্যার্থীরা। তিরুপতিতে চুল দানের নেপথ্যে বহু পৌরাণিক গল্পও রয়েছে। প্রতিদিনই প্রায় ২০ হাজার ভক্ত এখানে চুল দান করতে আসেন। সেজন্য তিরুপতি মন্দিরে একাধিক নাপিত পরিষেবা প্রদান করে।

ভেঙ্কটেশ্বর দেবে

প্রত্যেক বছর দেশ বিদেশ থেকে কোটি কোটি মানুষ ভেঙ্কটেশ্বর দেবের মূর্তি দর্শন করতে আসেন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ দানও করেন। তবে, করোনার জেরে গত দু বছর মন্দির পুরোপুরি বন্ধ থাকায় মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জোগাতে হিমশিম খেয়েছে ট্রাস্ট। ছাঁটাই করা হয়েছে প্রায় ১৩০০ জন অস্থায়ী কর্মীকে।

তবে, এবার তামিলনাড়ুর ভক্তবৃন্দরা তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানম-এর অধীনে থাকা বিভিন্ন ট্রাস্টে অনুদানের আকারে ১০ কোটি টাকা দান করেছেন। সূত্রের খবর, চেন্নাইয়ের এক ভক্ত সরোজা সূর্য নারায়ণ, হীরে জড়ানো একটি সোনার পবিত্র সুতো এবং ২.৪৫ কোটি টাকা মূল্যের ৪.১৫০ কিলোগ্রাম ওজনের একটি সোনার হার দান করেছেন তিরুপতি মন্দিরে।

তিরুপতি মন্দির যারা ভ্রমণ করেছেন, তারা সকলেই জানেন এই মন্দির চত্বরের মূল মন্দিরটি পুরোটাই সোনায় মোড়া। দীর্ঘ এক লাইন অতিক্রম করে তবেই তিরুপতি বালাজির দর্শন মেলে। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রদীপের আলোয় দেবদর্শন। কালো রঙের বিশাল মূর্তির মাঝে রয়েছে সোনার প্রলেপ। ভেঙ্কটেশ্বর দেব যেন দুহাত তুলে তাঁর ভক্তদের আশীর্বাদ করছেন। আসলে এই মন্দির জুড়ে শুধু ইতিহাস এবং জনশ্রুতির ছড়াছড়ি। বিশ্বাস আর কিংবদন্তির অদ্ভুত মিশ্রণ দেখা যায় এই মন্দিরে এলে। ভক্তরা তাঁকেই বিশ্বের ত্রাতা হিসেবে শ্রদ্ধা করেন।

বছরভর ভক্ত, পুণ্যার্থীদের সমাগম লেগেই থাকে তিরুপতি মন্দিরে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শন করা পবিত্র স্থান। ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরে এসে যিনিই অর্থ দান করবেন, তিনি পৃথিবীর সকল যন্ত্রণা থেকে চিরতরে মুক্তিলাভ করবেন। ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরকে এভাবে কুবেরের ঋণ শোধ করতে সাহায্য করলে ভক্তরা বৈকুন্ঠ বাসের অধিকার পাবেন। সেই মতোই ভক্তবৃন্দের নানাবিধ দানে প্রতিদিনই উপচে ওঠে তিরুপতি মন্দিরের দানপাত্র। যা মন্দিরের আয় এবং ভগবানের ঋণ শোধ, দুইয়েরই সহায়ক হয়।

মন্দিরে ভক্তদের ঢল

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close