চলছে গর্বের মাস। সমকামীরা মেতে উঠেছেন রামধনুর সাত রঙে। গর্বের মাস উদযাপিত হচ্ছে নানা জায়গায় নানা ভাবে। ভালোবাসা তো কোনওকিছুর বাধা মানে না। কিন্তু, আজও সমাজের একাধিক মানুষ সমপ্রেমকে গ্রহণ করতে পারছে না। প্রতিবন্ধকতা থেকেই যাচ্ছে। বাড়িতে সমপ্রেমের খবর জানাজানি হতেই এক এক পরিবারে শুরু হয়ে যায় তুমুল অশান্তি। এমন অনেক ক্ষেত্রেই কিছু উপায় না দেখে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় সমপ্রেমীদের। সমাজের এই মানসিকতা কবে দূর হবে তা সত্যিই স্পষ্ট নয়।
উল্লেখ্য, এবার সমপ্রেম নিয়ে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটল উত্তরপ্রদেশে৷ ভালোবাসার যে কি জোর রয়েছে তাই প্রমাণিত হল এবার। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা এক তরুণী ভালোবেসেছে আর এক তরুণীকে। দুই তরুণীর এই ভালোবাসার কথা জানাজানি হতেই তাঁদের পরিবার এবং সমাজ নিন্দার ঝড় তোলে। পরিবারের সকলে তো সাফ জানিয়ে দেয়, এই সম্পর্ককে তাঁরা কিছুতেই মান্যতা দেবেন না। কিন্তু, সমপ্রেমী ওই দুই তরুণী প্রেমে একেবারে বদ্ধপরিকর।
তাঁরা পরিবারের সদস্যদের এ ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, না কোনওকিছুতেই লাভ হয়নি। এদিকে, সম্পর্কও ভেঙে ফেলতে পারবেন না তাঁরা। কিন্তু, কিছু তো একটা এসপার ওসপার করতেই হবে। অবশেষে প্রেমিকাকে কাছে পেতে প্রয়াগরাজের ওই তরুণী বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজের লিঙ্গই পরিবর্তন করে ফেলবেন তিনি। এর ফলে, সমাজের আর কিছু বলার অধিকার থাকবে না। লিঙ্গ পরিবর্তন করে ফেললে সে তো আর সমপ্রেম রইল না। সমাজের চোখে আর পাঁচটা স্বীকৃত নারী পুরুষের সম্পর্কের মতোই হয়ে যাবে তাঁদের সম্পর্ক।
সূত্রের খবর, তাঁর এই নারী থেকে পুরুষ হয়ে ওঠার যাত্রায় তাঁর পাশে দাঁড়ায় প্রয়াগরাজের স্বরূপ রানি নেহরু হাসপাতাল। সেখানকার এক দল চিকিৎসক ইতিমধ্যেই ওই তরুণীর দেহের ঊর্ধ্বাংশ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। এখন, বুকের কাঠামো পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। চিকিৎসকদের কথায়, ওই তরুণী পুরোপুরি পুরুষ হয়ে উঠতে পারবেন প্রায় দেড় বছর পর। এ এক বিশাল প্রক্রিয়া। এত সহজ সার্জারি নয় এটা।
জানা গিয়েছে, তরুণীর লিঙ্গ পরিবর্তনের এই পুরো প্রক্রিয়াটির দায়িত্বে রয়েছেন চিকিৎসক মোহিত জৈন। তিনি জানান, “আমরা এখন ওই মহিলার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন ক্ষমতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এই হরমোন পুরুষের দেহে থাকে। এর ফলে ওই মহিলার মধ্যে পুরুষসুলভ পরিবর্তন দেখা যাবে। পুরুষদেহের মতো বক্ষদেশে চুল উৎপাদনও হবে এই টেস্টোস্টেরন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামীতে ওঁনার লিঙ্গ পরিবর্তন করা হলে উনি আর কখনও অন্তঃসত্ত্বা হতে পারবেন না। এই সমস্ত প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে আমাদের প্রায় ১৮ মাস তো লেগেই যাবে। আমরা ওঁর শরীরে সমস্তরকম পরীক্ষা করিয়েছি, কোথাও কোনও সমস্যা নেই। তবে, এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার। তরুণীর সাহসকে আমরা কুর্নিশ জানাই।”
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৮ সালে লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচারের খবর পাওয়া গিয়েছে মহারাষ্ট্রে। সেখানকার এক ৩০ বছর বয়সী সমকামী মহিলা পুলিশ কনস্টেবল ললিতা সালভে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে ললিত সালভে হয়ে উঠেছেন। জানা যায়, মুম্বাইয়ের সরকারি হাসপাতাল সেন্ট জর্জে দীর্ঘদিন ধরে তিন ধাপে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তাঁর।