ভাষা বহুকাল ধরেই ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। সংস্কৃত ভাষা মাত্রই বেশ খটমট একটা বিষয়, এমনটা ধারণা অনেকেরই। যদিও আদতে মোটেই সহজ নয় এই ভাষা। ভারতের এক অতি প্রাচীন ভাষা সংস্কৃত, যা অত্যন্ত শ্রুতিমধুর। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃত পড়ানো হয়৷ বেশ কদরও রয়েছে বেদভাষার। দক্ষিণ ভারতের দিকে বহু মানুষ আজও এই ভাষাতেই কথাবার্তা বলে থাকেন। তবুও, একটা বিতর্ক চলতেই থাকে, সংস্কৃতকে যদি এতটাই মান্যতা দেওয়া হয়, তাহলে আজকের যুগে এই ভাষা আমাদের ভাব আদানপ্রদানের মাধ্যম হল না কেন?
এবার সেই বিতর্কের জাল একটু হলেও সরাল বারাণসীর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দর মানেই মানুষের মনে একটা ঝাঁ চকচকে তাক লাগানো ছবি তৈরি হয়। যা পুরোপুরি আধুনিকতার রাংতায় মোড়া। সেখানে হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষাতেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলি করা হয়ে থাকে। এবার সেই চেনা ভাষাগুলির পাশাপাশি মানুষের কান অভ্যস্ত হবে ভারতের প্রাচীন ভাষা সংস্কৃত’র সঙ্গে। এ আসলেই এক অভিনব উদ্যোগ। সংস্কৃত ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখবার লক্ষ্যে এমন উদ্যোগ সত্যিই কুর্নিশের দাবি রাখে।
বর্তমানে বিভিন্ন বিমানবন্দরগুলিতে কোভিডের সতর্কতামূলক বার্তা হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় শোনানো হয় অনবরত। এবার সেই বার্তাই যাত্রীরা শুনতে পারবেন এক নয়া ভাষায়। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “যাত্রীরা সংস্কৃতে এই বার্তা শোনার পরেই বুঝতে পারবেন তারা কাশীধামে পৌঁছে গিয়েছেন। যার সঙ্গে সংস্কৃত ভাষার এক নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। নিঃসন্দেহে এই ভাষা শোনার পর যাত্রীদের মনে এক অন্য অনুভূতি তৈরি হবে।”
উল্লেখ্য, বিমানবন্দরের অধিকর্তা অর্যমা সান্যাল এ বিষয়ে জানিয়েছেন, “সংস্কৃত ভাষাকে ব্যবহার করার বিষয়ে কিছুদিন আগে তাঁরা একটি জরুরি বৈঠক করেন। সংস্কৃতকে এখন ‘মৃত’ ভাষা বলেই দাবি করে থাকেন অনেকে। কিন্তু, এই ভাষা নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ছে। তা সত্ত্বেও সংস্কৃতকে হতশ্রদ্ধা করা হয়, বহু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই এই ভাষার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এই অভিনব পদ্ধতির মাধ্যমে যদি নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা সংস্কৃত ভাষার প্রতি একটু হলেও আকৃষ্ট হন, তাতে তাঁরা ধন্য হবেন।”
কার্যত, এমন উদ্যোগে যাত্রীরা বেশ বিস্মিত এবং রীতিমতো আনন্দিত। যাত্রীদের একাংশের মতামত, বিমানবন্দরের পাশাপাশি রেলস্টেশনগুলিতেও সংস্কৃত ভাষায় ঘোষণা করার ব্যবস্থা চালু হোক। আসলে ভাষা তো বেঁচে থাকে ভাষাভাষীদেরই ব্যবহারে। আমরা যদি সংস্কৃত না বলি, না লিখি, না শুনি তাহলে সত্যিই তো একদিন হারিয়ে যাবে এই ভাষা। যে ভাষায় এক কালে সাহিত্যের সেরা ভাণ্ডার রয়েছে, যাতে প্রথম গ্রন্থ বেদ রচিত, তা আজ অচলপ্রায়। বারাণসীর লাল বাহাদুর শাস্ত্রী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এই ছকভাঙা উদ্যোগে সংস্কৃত ভাষার জনপ্রিয়তা ফের গড়ে উঠুক, এমনটাই কাম্য।