পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যকে ঘিরে ঘনিয়ে উঠছে রহস্য

0
67

এবার বিতর্ক শুরু হল তাজমহল ঘিরে। তাজমহলের ২২টি বন্ধ হওয়া ঘরে কি লুকিয়ে রয়েছে তা নিয়ে রহস্যের দানা বেঁধেছে। সেই রহস্য উদঘাটনের দাবিতে গত ৪ মে একটি পিটিশন দায়ের হয় এলাহাবাদ হাইকোর্টে। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সেই পিটিশন খারিজ করে দিল আদালত। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে হাইকোর্টে পিটিশনটি দায়ের করেন বিজেপির অযোধ্যা ইউনিটের মিডিয়া ইন-চার্জ রজনীশ সিং। 

রজনীশ সিং এদিন বলেন, “এরকম বিখ্যাত একটা স্মৃতিসৌধের ২২ টি বন্ধ ঘরে লুকিয়ে থাকা সত্যিটা প্রকাশ্যে আসা প্রয়োজন। ওই ২২টি কক্ষে কাউকে প্রবেশও করতে দেওয়া হয় না। আমার ধারণা, এসব ঘরে হিন্দু দেবতা এবং ধর্ম সম্পর্কিত মূর্তি রয়েছে। এছাড়া কিছু হিন্দু ধর্মগ্রন্থও পাওয়া যেতে পারে ঘরগুলি থেকে। এর প্রেক্ষিতে আমি হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছি যাতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে এই কক্ষগুলি খোলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। এই কক্ষগুলি খুলে দেওয়া হলে যাবতীয় রহস্য এবং বিতর্ক বন্ধ হবে। আর তা করতে কোনও ক্ষতিও নেই।”

উল্লেখ্য, রজনীশ সিং এদিন আরও দাবি করেন, তাজমহলকে মন্দির বানানোর কোনও ইচ্ছে তার নেই। তিনি শুধু আসল সত্যিটা জানতে চান এবং সকলকে তা জানাতে চান। তাজমহলের ওই বন্ধ ঘরগুলি নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক গল্প, জল্পনা রয়েছে। সত্যিটা সামনে এলে সেসব মিটবে। বৃহস্পতিবার এই মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি ডি কে উপাধ্যায় এবং বিচারপতি সুভাষ বিদ্যার্থীর এজলাসে ওঠে। 

এদিন বিচারপতিরা মামলার নথিপত্র খতিয়ে দেখে প্রশ্ন তোলেন যে এটা কেমন ধরনের আবেদন? তাজমহলের পিছনের বাস্তব খুঁজে বের করার জন্য একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করার আবেদন মোটেই আদালতের বিচারযোগ্য বিষয় নয়। কক্ষগুলি খোলার বিষয়ে আবেদনের জন্য ঐতিহাসিক গবেষণার একটি সঠিক পদ্ধতি থাকা দরকার। এটি ইতিহাসবিদদের ওপর ছেড়ে দেওয়াই ভালো। 

প্রসঙ্গত, এই বিষয়ে আবেদনকারী বিজেপি নেতা রজনীশ সিং তাজমহলের বন্ধ দরজাগুলি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ দ্বারা বিশেষ কমিটি গঠনের দাবি করেছিলেন। আবেদনকারী রজনীশ সিংয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন অ্যাডভোকেট রুদ্র বিক্রম সিং। এদিকে গত ৫ মে তাজমহলে ধর্ম সংসদ অনুষ্ঠিত করার ডাক দিয়েছিলেন অযোধ্যার সাধু জগদগুরু পরমহংস আচার্য। তাজমহলের ভেতরে শিবলিঙ্গ স্থাপনের কথাও বলেন তিনি। 

এদিকে, আবেদনকারী রজনীশ সিংকে এই মামলার বিষয়ে রীতিমতো ধমকের সুরেই আদালত বলে, “এরপর তো আগামীকাল আমরা দেখব, আপনি আমাদের চেম্বার দেখারও অনুমতি চাইছেন। ঘরগুলি নিতান্তই নিরাপত্তার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। আপনার যদি এই কারণটা যথেষ্ট উপযুক্ত বলে না মনে হয়, তাহলে আপনি নিজে এ নিয়ে রিসার্চ করুন। এমএ করুন, পিএইচডি করুন। কিন্তু, দয়া করে জনস্বার্থ মামলা নিয়ে ছেলেখেলা করবেন না।”

অন্যদিকে, আবেদনকারী রজনীশ সিংয়ের আইনজীবী আবার বলেছেন, “১৬৫৩ সালে তাজমহল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৬৫১ সালে সম্রাট ঔরঙ্গজেবের একটি চিঠি সূত্রে জানা যায়, তিনি তাঁর মায়ের সমাধি ক্ষেত্রটি মেরামত করতে চান।” উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন আবার তাজমহলকে ‘তেজো মহালয়া’ নামক একটি হিন্দু মন্দির বলে দাবি করে। 

এদিকে আবার বিজেপির সাংসদ তথা জয়পুর রাজপরিবারের সদস্যা দিয়া কুমারী সম্প্রতি দাবি করে বলেন, “তাজমহল যে জমিতে নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটা আমাদের ছিল। সেইসময় তো আর আদালত ছিল না। তাই এই বিষয়টি নিয়ে কোথাও আবেদন করা হয়নি। তবে এর নথিপত্র যাচাই করলে সমস্ত সত্যি পরিষ্কার ভাবে সামনে চলে আসবে।”

বিজেপি সাংসদ দিয়া কুমারী

বলা চলে, এই তাজমহলকে ঘিরে রহস্যের ব্যাপারটা আমাদের দেশে নতুন নয়। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যকে নিয়ে এর আগেও বহুবার নানা বিতর্ক জল্পনা ছড়িয়েছিল। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরে তাজমহলকে নিয়ে নানা রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের চত্ত্বরে কেন এই জ্ঞানব্যাপী মসজিদ, মসজিদের গায়ে কেন মন্দিরের চিহ্ন, হিন্দু রাজার জমির ওপরে নির্মিত তাজমহল, এমন নানা সব প্রশ্ন উঠে আসছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তাজমহলকে ঘিরে রীতিমতো দখলদারির রাজনীতি চলছে।