জিস্যাট-২৪ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ ভারতের

আজ ভোর রাতে ফরাসি গায়ানা স্পেস সেন্টার থেকে জিস্যাট-২৪ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ হল। এই কমিউনিকেশন স্যাটেলাইটটি মূলত ডিটিএইচ সার্ভিসের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ কি না বানিয়েছে! প্রাচীন যুগেই মানুষ একথা জেনে গিয়েছিল, চাঁদই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। কিন্তু, পৃথিবীকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের ধারণায় গ্রহ আর উপগ্রহের মধ্যে ফারাক করা বেশ দুঃসাধ্যই ছিল। চাঁদ তো প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে। চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে, চাঁদকে স্যাটেলাইট বলা যায়। আবার, পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে অবিরাম ঘুরছে। সুতরাং, পৃথিবীও একধরনের স্যাটেলাইট। কিন্তু, মানুষের তৈরি করা স্যাটেলাইট পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে৷ যা আমাদের আবহাওয়া সম্পর্কে পূর্বাভাস, সৌরঝড়, উল্কাপাত, জলোচ্ছ্বাস, উল্কাদের গতি-প্রকৃতি, এবং সৌরজগতের অন্যান্য সব গ্রহ উপগ্রহগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে প্রতিনিয়ত খবর পাঠায়।

আমাদের পৃথিবী যেমন ২৪ ঘণ্টা সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে, তেমনই কৃত্রিম উপগ্রহ অর্থাৎ স্যাটেলাইটও পৃথিবীর সঙ্গে ২৪ ঘণ্টাই ঘুরছে। বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইট ‘স্পুটনিক ১‘। এ তো সকলেরই জানা। আর, ভারতের তৈরি করা প্রথম স্যাটেলাইটের নাম হল ‘আর্যভট্ট‘। এরপর তো আরও একাধিক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। একদিনে ১০৪টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এর আগে রেকর্ড গড়েছিল আমাদের দেশ। ২০১৪ সালে রাশিয়া একদিনে ৩৭টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছিল।

উল্লেখ্য, এবার ভারতের কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট (Communication Satellite) জিস্যাট-২৪ (GSAT-24) এর সফল উৎক্ষেপণ হল সম্প্রতি। জানা গিয়েছে, নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেডের জন্য এই স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO). সূত্রের খবর, জিস্যাট-২৪ উৎক্ষেপণের জন্য কৌরোতে ইউরোপের মহাকাশ বন্দর, গায়ানা স্পেস সেণ্টার থেকে অন-বোর্ড ‘Ariane-V VA257‘ ফ্লাইট চালু করা হয়েছিল। এটিই নাকি ছিল প্রথম ‘ডিমান্ড ড্রাইভেন’ স্যাটেলাইট মিশন।

এই জিস্যাট-২৪ স্যাটেলাইটের ওজন ৪ হাজার ১৮০ কেজি। সারা ভারতে যাতে ডিটিএইচ (DTH) অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা পূরণ হয়, সেই লক্ষ্যেই আজ ভোর রাতে এটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ সালে ভারতের টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তুলতে মহাকাশে জিস্যাট-৩০ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। যার ওজন ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোগ্রাম। এই জিস্যাট অর্থাৎ ভূ-সমলয় কৃত্রিম উপগ্রহগুলি মূলত বিভিন্ন ডিজিটাল তথ্য, অডিও এবং ভিডিও সম্প্রচারের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যা পুরোপুরি দেশীয় প্রযুক্তির দ্বারাই নির্মিত হয়।

প্রসঙ্গত, এর আগে সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে ২০২০ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল কৃত্রিম উপগ্রহ জিস্যাট-২৯। যার ওজন ছিল প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কিলোগ্রাম। এটি ছিল মাল্টি-ব্যান্ড মাল্টি-বিম কমিউনিকেশনের উপগ্রহ। দেশের উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিমের রাজ্য যেমন ত্রিপুরা, আসাম, জম্মু কাশ্মীর, সিকিম অরুণাচল প্রদেশ সহ আরও অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষ উন্নতিসাধনের জন্য এই জিস্যাট-২৯ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ইসরোর তরফ থেকে সফলভাবে ৩টি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। যার মধ্যে রয়েছে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল (PSLV), ইওএস-০৪ (EOS-04), আইএনএস-২বি (INS-2B) . উল্লেখ্য, সম্প্রতিই ইসরো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চাঁদ এবং মঙ্গলের পর এবার শুক্র গ্রহেও নাকি অভিযান চালাবে তারা। শুক্রকে প্রদক্ষিণ করার জন্য ইতিমধ্যেই একটি মহাকাশযান প্রস্তুতের কাজকর্মও শুরু করে দিয়েছে তারা। জানা গিয়েছে, আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে শুক্র গ্রহের জন্য এই মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করা হতে পারে।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close