শনিবারের বিকেল : 03 Dec, 2022

আরও পড়ুন

ফাঁসি পর্যন্ত ক্ষুদিরাম বসুর কীর্তি-কলাপ

আজ, ৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বাঙালি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ১৩৩ তম জন্মতিথি। তিনি ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তার মায়ের নাম লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে তার নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র ৫ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান। এক বছর পর তার পিতারও মৃত্যু হয়। তখন তার বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলএ ভর্তি করে দেন। তাদের কাছেই ক্ষুদিরাম বড় হচ্ছিলেন।

১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তারা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন, তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেফতারও হন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন। এরপর ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তার বোন অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায়ের সঙ্গে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে আসেন।

মেদিনীপুরেই তার বিপ্লবী জীবনের অভিষেক হয়। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই ক্ষুদিরাম তার গুণাবলীর জন্য সবার চোখে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন। ক্ষুদিরাম সত্যেন্দ্রনাথের সাহায্যে বিপ্লবী দলভুক্ত হয়ে এখানে আশ্রয় পান। ক্ষুদিরাম তারই নির্দেশে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করে গ্রেফতার হন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে কাঁসাই নদীর বন্যার সময়ে রণপার সাহায্যে ত্রাণকাজ চালান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ তার সহযোগী হেমচন্দ্র কানুনগোকে প্যারিসে নির্বাসনে থাকা একজন রাশিয়ান নিকোলাস সাফ্রানস্কি-এর কাছ থেকে বোমা তৈরির কায়দা শেখার জন্যে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বঙ্গ প্রদেশ ফেরার পর হেমচন্দ্র এবং বারীন্দ্র কুমার আবার দুজনের সহযোগিতায় ডগলাস কিংসফোর্ডকে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন। কিংসফোর্ড আলিপুর প্রেসিডেন্সি বিচারালয়ের মুখ্য হাকিম ছিলেন, যার হাতে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত এবং যুগান্তরএর অন্যান্য সম্পাদকদের মামলা চলছিল। যাঁদের তিনি কঠোর সাজা শুনিয়েছিলেন। যুগান্তর দ্বন্দ্বমূলক সম্পাদকীয় লিখে তার প্রতিক্রয়া জানায়, ফলে এব্যাপারে আরো পাঁচজন অভিযুক্ত হলে এই সংবাদপত্র ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এসমস্ত অভিযোগে সংবাদপত্রের প্রচার বৃদ্ধি পায় এবং এতে অনুশীলন সমিতির জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আদর্শ প্রচারের সহায়ক হয়। শুক্লা সান্যালের মতে, বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ একটা আদর্শ হিসেবে প্রত্যক্ষ না-হলেও অঘোষিতভাবে বঙ্গ প্রদেশের জনতার সমর্থন আদায় করেছিল। যুগান্তর মামলার বিরুদ্ধে প্রচারে অংশ নেওয়ায় একজন বাঙালি ছেলে সুশীল সেনকে চাবুক মারার সাজা দেওয়ায় কিংসফোর্ড সাহেবের জাতীয়তাবাদীদের কাছে কুখ্যাতি ছিল। যেমন আলিপুর প্রেসিডেন্সি আদালতে মুখ্য হাকিম হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার সময় থেকেই নবীন রাজনৈতিক কর্মীদের কঠোর ও নিষ্ঠুর বাক্য প্রয়োগ করতেন। তিনি ওইসব কর্মীদের শারীরিক নির্যাতনের সাজা দিতেন।

ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে ভেবে গুপ্তহত্যা করার জন্য বোমা ছুঁড়েছিলেন। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড সেখানে ছিলেন না। তিনি অন্য একটি গাড়িতে বসেছিলেন, যে ঘটনার ফলে দু’জন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়, যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। এই প্রফুল্ল চাকি গ্রেফতারের আগেই আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরাম গ্রেফতার হন। দু’জন মহিলাকে হত্যা করার জন্য তার বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ হয়।

ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর, ৭ মাস এবং ১১ দিন, যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। বাল গঙ্গাধর তিলক, তার সংবাদপত্র কেশরীতে দু’জন নবীন যুবককে সমর্থন করে আওয়াজ তোলেন অবিলম্বে স্বরাজ চাই। যার ফল হয় অবিলম্বে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার দেশদ্রোহিতার অপরাধে তিলককেও গ্রেফতার করে। এইভাবেই অল্পবয়সী ভারতীয় বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর জীবনাবসান ঘটে। তিনি তাঁর কাজকর্মের জন্য বাঙালিদের মনে আজীবন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প, কবিতা, শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক , ’শনিবারের বিকেল’times.14.2020@gmail.com

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close