আর নয় পরমাণু বোমা, হোক কলরব
ইতিহাসের পাতায় বহুবার উঠে এসেছে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকির উপর পরমাণু বিস্ফোরণের ছবি। ব্যাঙের ছাতার মতো উঠে যাচ্ছে বিস্ফোরণের ধোঁয়া— বিশ্বযুদ্ধের নিয়তি যেনও সেই ছবিতেই লুকিয়ে ছিল। হিরোশিমা আর নাগাসাকি— দুটো শহরেই ছড়িয়ে পড়েছিল মৃত্যুর আওয়াজ। সেখান থেকেই বেঁচে উঠেছিলেন কয়েকজন। তেজস্ক্রিয় বিকিরণে অনেকেরই দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়েছিল; এমনকি পরবর্তী প্রজন্মও ভুক্তভোগী। যুদ্ধ থামলেও যুদ্ধের ভয়াবহতা বজিয়েছিল দীর্ঘদিন।
ঠিক ৭৭ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শেষের পথে ১৯৪৫ সালের আগস্টের ৬ ও ৯ তারিখ যথাক্রমে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পরমাণু বোমা ফেলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বে প্রথম এই পরমাণু বিস্ফোরণ হয়েছিল যেখানে এই রকম ভয়ানক এক মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। হিরোশিমাতে যে পরমাণু বোমাটি ফেলা হয়, তার নাম ছিল ‘লিটিল বয়’। পাশাপাশি হিরোশিমার বোমা বিস্ফোরণের ঠিক তিন দিনের মাথায় জাপানের নাগাসাকি শহরে যে বোমাটি নিক্ষেপ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার নাম ছিল ‘ফ্যাট ম্যান’।
বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণ পরমাণু বোমা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে গোটা বিশ্বকে ৩৮ বার পুরোপুরি ধ্বংস করা যাবে বলে জানিয়েছে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসইপিআরআই)। পরমাণু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন , লিটল বয় এবং ফ্যাট ম্যান নামের বোমা দু’টির আঘাতে তাৎক্ষণিকভাবে মারা যান প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ এবং আয়নাইজিংয়ের ফলে ধীরে ধীরে আরও অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছেন। ৭২ বছর আগের সেই লিটল বয় ও ফ্যাট ম্যান এখন আরও বেশি শক্তিশালী। এমনকি তাদের সংখ্যাও আরও বেশি। তাইতো সাড়ে সাতশ’ কোটি মানুষের আবাস একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী আজ তার বুকে আশ্রিত প্রাণিকূলসহ ধ্বংসের আশংকায় আর্তনাদ করছেন। হিরোশিমায় যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল, মার্কিনীরা তার নাম দিয়েছিল ‘লিটল বয়’,।এটির শক্তি ছিল প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টন টিএনটির বিস্ফোরণ ক্ষমতার সমান। পাঁচ বর্গমাইল এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল এটি।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে দু’টি আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা। লিটল বয় নামের প্রথম বোমাটি ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে হিরোশিমাতে এবং ফ্যাট ম্যান নামের দ্বিতীয় বোমাটি তিনদিন পর জাপানের নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করা হয়। ২৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ, ১০ ফুট দৈর্ঘ আর ৯,৭০০ পাউন্ড ওজনের লিটল বয়ের মধ্যে ইউরিনিয়াম জ্বালানি ছিল মাত্র ১৪০ পাউন্ড। লিটল বয়ের বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ১৫,০০ টন টিএনটি সমতুল্য। আর ৬০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধ, ১০ ফুট ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ আর ১০,৮০০ পাউন্ড ওজনের ফ্যাট ম্যানের মধ্যে প্লুটোনিয়াম জ্বালানি ছিল মাত্র ১৩.৬ পাউন্ড। লিটল বয়ের বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ২১,০০০ টন টিএনটি সমতুল্য। এ বিস্ফোরণ দু’টির ফলাফল ছিল ভয়াবহ।হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে কত লোক মারা গিয়েছিল, তা মূলত আনুমানিক হিসেব। ধারণা করা হয় হিরোশিমা শহরের সাড়ে তিন লক্ষ মানুষের মধ্যে ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ কেবল বোমার বিস্ফোরণেই মারা যান। আর নাগাসাকিতে মারা গিয়েছিলেন ৭৪ হাজার মানুষ। কিন্তু পরমাণু বোমার তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে পরবর্তী সপ্তাহ, মাস এবং বছরগুলিতে আরও বহু মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
প্রতিবছর ৬ ও ৯ আগষ্ট ঘুরে ঘুরে আসে। আমেরিকার নির্মমতার কথা জাপানিরা কখনো ভুলতে পারবেন না। লিটল বয় এর ধ্বংসযজ্ঞ এতটাই ছিল যে, ২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কাঠের যত পরিকাঠামো ছিল সবই মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। চোখের নিমেশে পুরে ছাই হয়ে গিয়েছে শহরের অধিকাংশ স্থান। ৬৬ বছর পরেও হিরোশিমা নাগাসাকি শহরের মানুষেরা তেজস্ক্রিয়তার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখনো দেখা যায় তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে পঙ্গুত্ব, বিকলাঙ্গসহ নানা রকম রোগব্যাধী। হিরোশিমায় ওই বছর শেষ পর্যন্ত মারা যান প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার মানুষ আর নাগাসকিতে মারা যায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। ৭৭ বছরের ইতিহাসের পাতায় যুদ্ধ থামলেও যুদ্ধের আতঙ্ক প্রবাহমান। সত্যিই যে শহরদুটিকে ভুলে যাওয়ার কথাও ইতিহাসের ভয়ঙ্কর সাক্ষী হিসেবে তা ভুলতে পারা গেল কোথায়?
পরবর্তীতে পৃথিবীজুড়ে স্লোগান উঠেছে- যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। যদিও এখনো পর্যন্ত তা মেনে চলেছেন সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা । কিন্তু জনমানসে প্রশ্ন- হিরোশিমা, নাগাসাকি-কান্ড আর ফিরে আসবে না তো ? কারণ, মনীষীদের কথায়- “চারিদিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শোনাইব মোরা ব্যর্থ পরিহাস”। তথাপি আজ, ৬ জুলাই হিরোশিমা দিবসে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করছেন মানুষ এমনটি ভেবে-‘যেন আর ক’টা দিন শান্তিতে কাটিয়ে যেতে পারেন এমন সুন্দর ধরণীতে’।
অনুলিখন-অঙ্কিতা দাস, ফোর্টিন ওয়েব ডেস্ক, রায়গঞ্জ।
কবিতা
মেহনতির জয়গান
লেখক : দেবাশীষ দাস
চেয়ে দেখো কারা যেন আসছে,
যেন সবেগে কালবৈশাখী ঘূর্ণির,
করাঘাতে ভাঙতে শৃঙ্খলবন্ধন-
আন্দোলিত বাহুতে মেহনতি মানুষের ভীড়।
বহুকাল আমরা শোষিত,
চোখ রাঙানি দেখেছি তোমাদের,
পার পাবে না তোমরা আগামীতে কেহ
যবে রূপ নিব প্রলয় দানবের।
তোমরা তো জানো,আমাদের কি অসীম ক্ষমতা!
তবে কেন বারে বারে বর্বরতার বাঁধ ভাঙো,
তবে কেন তোমাদের আকাশ ছোঁয়া স্পর্ধা,
মেহনতিরা,মৃত্যুর লেলিহান শিখা হানো।
শোনা হে পিশাচ,শোনো হে দুনিয়াদার,
মোরা হিংস্র,মোরা ক্ষ্যাপাটে,
মোরা মৃত্যুকে করি পান,
মোরা মোদের রক্তে লিখে যাব
মেহনতি মানুষের জয়গান।