আসুন জেনে নেওয়া যাক লক্ষী পুজোর মহত্ব
বাঙালিদের শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আরাধনা করা হয়। বাঙালি হিন্দুদের ঘরে ঘরে এই পুজো করতে দেখা যায়। প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পুজো হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পত্তির দেবী। ধন সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হয়ে থাকে। নারী-পুরুষ উভয়েই এই পুজোয় অংশ গ্রহণ করেন।
অনেকেই সারাবছর প্রতি গুরুবার অর্থাৎ বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পুজো করে লক্ষীর পাঁচালি পরে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতেও লক্ষ্মীর পুজো হয়। লক্ষণীয় বিষয় হল-খারিফ শস্য ও রবি শস্য ঠিক যে সময় ওঠে হয় ঠিক সেই সময় বাঙালিরা মেতে ওঠেন লক্ষ্মীর আরাধনায়। তবে পুজোর উপাচারে পরিবর্তন হয় মাস ভেদে।
বর্তমানে গৃহস্থের সুবিধের জন্যই হোক বা পুরোহিতের স্বল্পতার জন্য, লক্ষ্মী পুজো সকাল থেকেই হয়ে থাকে। কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর জন্য ভালো সময় প্রদোষকাল। অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত যেই সময় পাওয়া যায়। যদিও প্রদোষ থেকে নিশীথ অবধি তিথি থাকলেও সেই প্রদোষেই পুজো বিহিত। কিন্তু আগেরদিন রাত থেকে পরদিন প্রদোষ পর্যন্ত তিথি থাকলে পরদিন প্রদোষেই পুজো করা বিধেয়। আবার আগেরদিন রাতে তিথি থাকলেও যদি পরদিন প্রদোষে তিথি না থাকে তাহলে আগেরদিন প্রদোষেই পুজো করা একটি কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোতে দেখা যায় জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক আচার অনুষ্ঠান। এখনও ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করে তার আরাধনা করা হয়। উপচারে ফল মিষ্টি ছাড়াও থাকে মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি। লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। কোনও কোনও পরিবারের পুজোয় মোট ১৪টি পাত্রে উপচার রাখা হয়। কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদ ও হরিতকী দিয়ে সাজানো হয় পুজোর স্থানটিকে। পুজোর উপকরণ এবং আচার অনুষ্ঠান দেখে অনুমান করা যায় এর নেপথ্যে থাকা কৃষি সমাজের প্রভাব। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্মীপিজ উপলক্ষে মেলাও বসতে দেখা যায়। কোথাও বা নৌকাবাইচও অনুষ্ঠিত হয়।
লক্ষী পুজোর অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল প্রতিটি বাড়ির ঘরে ঘরে মায়ের পায়ের আলপনা-সহ বিভিন্ন ধরনের নকশা আঁকতে দেখা যায়। অন্যান্য পুজো আর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর আলপনাতে বেশ কিছু পার্থক্য থাকে। এই পুজোতে মূল আল্পনার সঙ্গে বাড়ি জুড়ে আঁকা হয় ধানের ছড়া, মুদ্রা, আর মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের ছবি। এই প্রতীকগুলি পুজোর মহত্ত্ব যেমন ব্যাখ্যা করে, তেমনই পুজোর নিয়ম-আচারের একটি অংশ হয়ে ওঠে এই বিশেষ ধরনের আলপনা।
আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প, কবিতা, শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক , ’শনিবারের বিকেল’ times.14.2020@gmail.com