শনিবারের বিকেল : 10 Sep, 2022

আরও পড়ুন

ব্যস্ততম জীবন থেকে কদিন মন শান্ত করতে ঘুরে নিন উত্তরের ‘দেরাদুনে’

মানুষের জীবনে ব্যাস্ততার শেষ নেই। একঘেয়ামি জীবনে কাজ করতে করতে ক্লান্ত মানুষ খোঁজেন নির্জন এলাকা। তাঁদেরই মধ্যে সব বয়সের মানুষের পছন্দের জায়গা হলো উত্তরভাগে অবস্থিত উত্তরাখণ্ড রাজ্যের রাজধানী শহর। নিরিবিলি পছন্দ করা সব বয়সের মানুষদেরই আকৃষ্ট করে এই শহর। শহরটি রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম অংশে গাড়োয়াল বিভাগে হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে সমুদ্রসমতল থেকে প্রায় ৬৭০ মিটার উচ্চতায়, ভারতের রাজধানী শহর নয়াদিল্লি থেকে ২৩৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। মূল দেরাদুন শহরে প্রায় ৫ লক্ষ ৭৮ হাজার লোক এবং বৃহত্তর মহানগর এলাকাতে প্রায় ৭ লক্ষ ১৪ হাজার লোকের বাস। জলবায়ু আর্দ্র ক্রান্তীয় ধরনের। মৌসুমী বায়ুর কারণে এখানে বর্ষাকালে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। গ্রীষ্মকালে কদাচিৎ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। স্থানীয় লোকেরা মূলত গাড়োয়ালি হিন্দি ভাষাতে কথা বলে।

বাঙালি হল ভ্রমণপিপাসু জাতি। কথায় আছে – তাদের পায়ে নাকি সর্ষে লাগানো। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন ইতিউতি। আর সমস্ত ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে পাহাড় অত্যন্ত প্রিয় এক গন্তব্য। তাই গরমের ছুটিতে উত্তরবঙ্গের দিকে পা বাড়ান অনেকেই। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দার্জিলিং বা কার্শিয়ঙের ভিড় এড়াতে অনেকেই কিছু খোঁজ করে চলেছেন স্বল্প পরিচিত নিরিবিলি কোনও পর্যটনকেন্দ্র। আবার অনেকেই শহুরে কোলাহল এড়িয়ে কয়েকটি দিন পাহাড়ে কাটাতে চান। তাঁরা কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন উত্তরাখণ্ডের দেরাদুন । ভ্রমণ হল বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেই ভ্রমণের গন্তব্য যদি হয় পাহাড় আর অরণ্য একইসঙ্গে , তাহলে সেই ভ্রমণে এক অনন্য মাত্রা যোগ হয়। দেরাদুন শহরটি একটি পাহাড়ি অবকাশযাপন কেন্দ্র। ভারতের সড়ক ও রেলব্যবস্থাগুলির সবচেয়ে উত্তর প্রান্তে অবস্থিত শহরগুলির একটি হল দেরাদুন। চা প্রক্রিয়াজাতকরণ এ শহরের প্রধান শিল্প। এছাড়া বিভিন্ন প্রযুক্তি ও সামরিক অস্ত্রশস্ত্রও প্রস্তুতের কারখানাও এখানে রয়েছে। দেরাদুনে ভারতীয় জরিপ সংস্থা ও বন বিভাগের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়া এখানে বন গবেষণা ইন্সটিটিউট, প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ পরীক্ষাগার, ভারতীয় সামরিক একাডেমি, রাষ্ট্রীয় ভারতীয় সামরিক মহাবিদ্যালয়, হিমালয় ভূবিজ্ঞান বিষয়ক ওয়াদিয়া ইন্সটিটিউট এবং আরও বেশ কিছু শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত।

পর্যটকদের জন্য উদ্ভিদ উদ্যান, আসান নদীর তীরে অবস্থিত তপকেশ্বর শিবমন্দির ও এর পবিত্র গুহা, স্নান করার প্রাকৃতিক পুকুরসমৃদ্ধ ডাকাতের গুহা বা গুছুপানি এবং সহস্রধারা জলপ্রপাত (গন্ধকযুক্ত পানি) কিছু আকর্ষণীয় স্থান। গুছুপানি গুহার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত মালসি হরিণ উদ্যানে সাধারণ হরিণ ও ভারতীয় অ্যান্টিলোপ হরিণ চরে বেড়ায়, এলাকাটি বনভোজনের জন্য জনপ্রিয়। এছাড়া শহরের কেন্দ্রে ছয়পার্শ্ববিশিষ্ট একটি ঘড়ির মিনার আছে, যার নাম ঘণ্টাঘর। শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমভাগে আছে ব্যস্ত পল্টন বাজার। পূর্বে আছে গুরুদুয়ারা নানাকসার নামের শিখ মন্দির, যার সাদা ও সোনালি গম্বুজগুলি অত্যন্ত কারুকার্যময়। দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্লেমেন্ট টাউন এলাকাতে মিন্ডরোলিং মঠ নামের একটি তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মীয় কেন্দ্র আছে যার মহাস্তুপের মধ্যে অর্চনাস্থল ও ১০৩ ফুট উঁচু বুদ্ধের মূর্তি আছে। বন গবেষণা ইন্সটিটিউটে একটি বড় জাদুঘর আছে, যেখানে বনরোগ ও কাঠের উপর বিভিন্ন প্রদর্শনী আছে। ব্রিটিশ জরিপ পরিচালক ও ভূগোলবিদ জর্জ এভারেস্টের বাসভবন ও গবেষণাগারটিও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়; জর্জ এভারেস্টের নামেই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতটির নাম রাখা হয়েছে। আরও আছে রাজা জি বাঘ অভয়ারণ্য। শহরের কাছে উত্তর দিকে মাসুরি নামের আরেকটি পাহাড়ি লোকালয় একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থকেন্দ্র। নিকটবর্তী ঔলি শহরে পাহাড়ি পদযাত্রা ও স্কি করার ব্যবস্থা আছে। এছাড়া হিন্দুদের তীর্থকেন্দ্র হরিদ্বার ও ঋষিকেশও দেরাদুনের কাছেই দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। শহরটি থেকে উত্তরে হিন্দুদের পবিত্র ধর্মীয় কিছু লোকালয়ে যাওয়া যায়, যাদেরকে একত্রে “ছোটা চার ধাম” নামে ডাকা হয়। দেরাদুনে ব্রিটিশরা অনেক আফগান রাজাকে নির্বাসিত করেছিল বলে শহরটির সঙ্গে আফগান রাজপরিবারের সম্পর্ক আছে।

নগর নিগম দেরাদুন নামের পুরসভা দেরাদুন শহরটি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। বর্তমানে দেরাদুনকে দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলের একটি “প্রতিচুম্বক” (কাউন্টার ম্যাগনেট) শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা আছে, যেন রাজধানী অঞ্চলে মানুষের অভিবাসনের কারনে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের ঝুঁকি কমানো যায়। দেরাদুনে ব্যক্তিগত মালিকানা ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি হোম-স্টে রয়েছে। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের মন অত্যন্ত সরল এবং সাদাসিধে। তারা সকলেই যে অতিথিবৎসল তা বলাই বাহুল্য। একবার তাদের আতিথিয়তা গ্রহণ করলে জীবনভর মনে থাকবে।

অনুলিখন – অঙ্কিতা দাস

আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প , কবিতা , শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক ,’ শনিবারের বিকেল’ times.14.2020@gmail.com

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close