মন্দিরে-মন্দিরে তোড়জোড় শুরু মহাশিবরাত্রির
শনিবার ১৮ ফেব্রুয়ারি মহাশিবরাত্রি। শিবরাত্রি উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
মহাশিবরাত্রি বা শিবরাত্রি হচ্ছে হিন্দু শৈব সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এই মহাশিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালন করা হয়। অগণিত ভক্ত এদিন শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল, ঘি দিয়ে পুজো করে থাকেন।
সব ব্রতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল এই মহাশিবরাত্রি। ব্রতের আগের দিন ভক্তরা নিরামিষ আহার করেন। রাতে বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শোয়া হয়। ব্রতের দিন তারা সারাদিন উপোস থেকে ব্রত পালন করেন। সারাদিনের পর রাত্রিবেলা চার প্রহরে শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘি, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তারপর বেলপাতা, নীলকন্ঠ ফুল, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিয়ে পুজো করা হয়। আর ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ এই মহামন্ত্র জপ করা হয়। সেদিন রাত্রি জাগরণ করা হয় ও শিবের ব্রতকথা, মন্ত্র আরাধণা করা হয়। ভারতবর্ষের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ তথা সমস্ত শিবমন্দিরে এই পুজো চলে, তান্ত্রিকেরাও এদিন সিদ্ধিলাভের জন্য বিশেষ সাধনা করেন। মহাশিবরাত্রি সাধারণত ইংরেজি মাসের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
হিন্দু মহাপুরাণ তথা শিবমহাপুরাণ অনুসারে এইরাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন। আবার এই রাতেই শিব ও পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। এর অর্থ হল শিব ও শক্তি তথা পুরুষ ও আদিশক্তি বা পরাপ্রকৃতির মিলন। এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তার প্রতীক লিঙ্গ তথা শিবলিঙ্গরূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপনাশ ও মুক্তির পথ দিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করতেন। তাঁর দ্বারা প্রচুর জীবহত্যা হত। একদিন শিকারে বেরিয়ে তার খুব দেরি হওয়ার ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হিংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয়। কোনও শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটি করে পাতা ছিঁড়ে নিচে ফেলতে থাকে। সেই গাছটি ছিল বেলগাছ। আর সেই বেলগাছের নিচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ি ফিরে এলে তার খাবার সে এক অতিথিকে দিয়ে দেয়। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।
এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে এবং শিব ভক্ত যেই জন, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকেনা। সে মুক্তিলাভ করে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে।
আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প, কবিতা, শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক , ’শনিবারের বিকেল’times.14.2020@gmail.com