নন্দ উৎসবে কেনও মাতোয়ারা হয় দেশ ?
নন্দ উৎসব মানেই বৃন্দাবনের নন্দালয়ে শ্রীকৃষ্ণকে পেয়ে যে উৎসব হয়েছিল তাকেই স্মরণ করা। ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, একটি দৈববাণীর মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণের মামা কংস জানতে পারেন, তার বোন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানের হাতে তার মৃত্যু হবে। এই কথা শুনে তিনি দেবকী ও বাসুদেবকে কারারুদ্ধ করেন এবং তাদের প্রথম ছয় পুত্রকে হত্যা করেন। দেবকী তার সপ্তম গর্ভ রোহিণীকে প্রদান করলে, বলরামের জন্ম হয়। বসুদেব ও দেবকীর আহ্বানে ভগবান বিষ্ণু নেমে আসেন শ্রীকৃষ্ণরূপে দেবকীর অষ্টম গর্ভে। এরপরই শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সময় চারিদিকে অরাজকতা, নিপীড়ন, অত্যাচার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। সেই সময় মানুষের স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। সর্বত্র ছিল অশুভ শক্তির বিস্তার।
শ্রীকৃষ্ণের মামা কংস ছিলেন তার জীবনের শত্রু। মথুরাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতে তার বাবা বসুদেব তাঁকে যমুনা নদী পার করে গোকুলে পালক মাতা-পিতা যশোদা ও নন্দর কাছে রেখে আসেন।কিন্তু জন্মের পরেই প্রভু চলে গেলেন যমুনা পার করে মথুরা পার করে গোকুলে। অর্থাৎ ভোগভূমি হতে প্রেমভূমিতে এবং ঐশর্য্যময়ভূমি থেকে মাধুর্যময় ভূমিতে বসুদেবের মাধ্যমে। কৃষ্ণ ছাড়া বসুদেবের আরও দুই সন্তানের প্রাণরক্ষা হয়েছিল। প্রথমজন বলরাম (যিনি বসুদেবের প্রথমা স্ত্রী রোহিণীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন) এবং সুভদ্রা (বসুদেব ও রোহিণীর কন্যা, যিনি বলরাম ও কৃষ্ণের অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেন)।
প্রসঙ্গত, শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দেবকী ও বসুদেব এর সন্তান এবং হিন্দু ধর্মাম্বলীরা তার জন্মদিন জন্মাষ্টমী তিথি হিসেবে পালন করেন। অষ্টমী তিথিতে যেমন জন্মাষ্টমী পালন করা হয় ঠিক তার পরের দিন নবমী তিথিতে এই নন্দ উৎসব পালন করা হয়। পুরান সূত্রে জানা যায়- শ্রী কৃষ্ণের জন্মগ্রহণের পর নন্দ মহারাজ আনন্দে ও খুশিতে এই নন্দ উৎসবের দিন নন্দগ্রামে সমস্ত রাজারা ও প্রজাদের আমন্ত্রণ করলেন তার আনন্দে যোগ দেওয়ার জন্য এবং আমন্ত্রণ করলেন বিজ্ঞ ব্রাহ্মণগণকে বেদ মন্ত্র পাঠ করার উদ্দেশে যার ফলে গোপালের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে নন্দগ্রামে সমস্ত বৃন্দাবনবাসী তথা সমস্তবিশ্ববাসীর মধ্যে যেনও আনন্দের ফলগুধারা বিরাজ করে। এরপরেই নন্দমহারাজ সমস্ত বৃন্দাবনবাসীকে অনেক ফল, মিষ্টান্ন ও বস্ত্র বিতরণ করলেন এবং কৃষ্ণের আগমনে সব গ্রামবাসীরা আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। প্রসঙ্গত, এই উৎসব মাথায় রেখেই সমস্ত দেশবাসী বাড়িতে ও মন্দিরে নন্দ উৎসব পালন করেন।
এ রাজ্যের নদিয়ার মায়াপুরে দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ, চৈতন্য গৌড়ীয় মঠ, ইসকন মন্দির সহ বিভিন্ন মন্দিরে ৫১, ১০১ এবং ১৩১টি পদ দিয়ে নন্দ উৎসব পালন করে থাকে। বর্তমানে এ রাজ্যের নানান জেলার বিভিন্ন এলাকায় উৎসব পালনের খবর পাওয়া যায়।
অনুলিখন অঙ্কিতা দাস, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।
আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প , কবিতা , শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক ,’ শনিবারের বিকেল’ times.14.2020@gmail.com