শনিবারের বিকেল : 22 July, 2023

আরও পড়ুন

World Snake Day
বিশ্ব সর্প দিবস

সাপ একপ্রকার সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সাপ বিষধর। তাই এরা কিছু সময় প্রাণঘাতী হয়ে থাকে। কিন্তু এটাও ঠিক সাপ ইচ্ছাকৃতভাবে কামড় দেয় না আর অনেক সময় এদের কামড় প্রাণঘাতী নয়। তাই এদের মারা উচিত নয়। তবুও আমাদের অসচেতনতার কারনে বছরে ভারতে মৃত্যুর সরকারি হিসাব ৫৮ হাজার প্রায়। প্রতি বছর ১৬ জুলাই সর্প দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণ প্রেমীর চোখে দেখলে খুবই সুন্দর। আসুন এদের না মেরে এদেরও বাঁচতে দিই।

শুধু একদিন সর্পদিবস পালন করলেই হবে না প্রত্যেক দিনই হোক পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ দিবস।
পশ্চিমবঙ্গের মাত্র পাঁচটি সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়।
১) গোখরো ( Spectacled cobra )
২) কেউটে (Monocled cobra )
৩) চন্দ্রবোড়া (Russell’s viper )
৪) কালাচ (Common krait )
৫)শাঁখামুটি (Branded krait)

মারাত্মক বিষধর শাঁখামুটি, কিন্তু তা নিয়ে আমাদের চিন্তার কারন কম। কারন শাঁখামুটি এতোই শান্ত যে, ওর কামড়ের প্রবণতা অনেক কম। আমাদের এলাকার বাকি আর কোনও সাপ থেকে মৃত্যুভয় নেই। কামড় এড়াতে –

*বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
* রাতে অবশ্যই বিছানা ঝেড়ে মশারি টাঙ্গিয়ে শোবেন। (মেঝেতে ঘুমালে মশারি বাধ্যতামূলক)
* অন্ধকারে হাঁটাচলা করবেন না, একান্তই বাধ্য হলে হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তা ঠুকে চলুন, হাততালি দিয়ে লাভ নেই, কারণ সাপের কান নেই।
* জুতো পরার আগে তা ঝেড়ে নিন।
* মাটির বাড়িতে কোনও ইঁদুর গর্ত থাকলে তা আজই বুজিয়ে ফেলুন।
জেনে রাখুন তাবিজ কবজ মাদুলি আংটি কোনও কাজের নয়। একমাত্র সাবধানতাই সাপের কামড় থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে।

সাপের কামড়ের প্রাথমিক চিকিৎসা- রোগীকে আশ্বস্ত করুন। কারণ রোগী খুবই আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। আতঙ্কও মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। রোগীকে বোঝান, সাপের কামড়ে আক্রান্ত বহু মানুষ চিকিৎসায় বেঁচে উঠেছেন, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।

যত কম নড়াচড়া হবে তত কম হারে বিষ সারা শরীরে ছড়াবে। স্কেল বা বাঁশের টুকরো-সহ হাতে/ পায়ে (যে অংশে কামড়াবে) কাপড় দিয়ে হাল্কা করে বেঁধে দিন। হাত বা পা (কামড়ের নিকটতম স্থান) যেনও তিনি ভাঁজ করতে না পারেন তাই এই ব্যবস্থা।

ফোন করে জেনে নিন আপনার নিকটতম যে হাসপাতালে
১)A.V.S ,
২) নিওস্টিগমিন
৩) অ্যাট্রোপিন এবং
৪) অ্যাড্রিনালিন আছে সেই হাসপাতালে চলুন। মাথায় রাখবেন সাপের কামড়ের সম্পূর্ণ চিকিৎসা একটি ব্লক প্রাইমারী হেলথ সেন্টারেই সম্ভব। সম্ভব হলে রোগীকে মোটর সাইকেলের মাঝে বসিয়ে রোগীর সাথে কথা বলতে বলতে চলুন। জেনে রাখবেন এখানে সময়ের ভূমিকা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।

হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকে সাপের কামড়ের চিকিৎসা করতে বলুন। কথা বলতে গিয়ে রোগীর কথার মধ্যে কোনও অসঙ্গতি (যেমন কথা জড়িয়ে আসা, নাকি সুরে কথা বলা খেয়াল করলে তা যথাযথ (কতক্ষন আগে শুরু হল) ভাবে চিকিৎসকে জানান।

সাপে কামড়ানোর ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ মিলিলিটার AVS শরীরে প্রবেশ করলে রোগীর বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ১০০%।।

হাসপাতালে কোন পথে চলবে চিকিৎসা:
১)দু’চোখের পাতা পড়ে আসা(সব সাপের কামড়ের মূল লক্ষণ ২) কামড়ের স্থানে অসম্ভব জ্বালা যন্ত্রণা (ফণাধর সাপের ক্ষেত্রে)
২) ক্রমবর্ধমান ফোলা
৩) শরীরের নানা স্থান থেকে রক্ত বেরিয়ে আসবে(চন্দ্রবোড়ার ক্ষেত্রে)
৪) ঢোঁক গিলতে অসুবিধে
৫) ঝাপসা দেখা
৬) জিভ জড়িয়ে
৭) ঝিমিয়ে পড়া

চিকিৎসায় দেরি হলে শ্বাসকষ্ট এবং শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যু

*এশিয়ার বিষাক্ততম সাপ কালাচ এর কামড়ে কোনও জ্বালা যন্ত্রণা থাকে না, দংশন স্থানে কোনও চিহ্ন পাওয়া প্রায় যায়ই না।পেটে ব্যাথা, গাঁটে গাঁটে ব্যাথা, খিঁচুনি কিংবা শুধুমাত্র দুর্বলতা অনুভব করার লক্ষনের সাথে দুচোখের পাতা পড়ে আসা নিশ্চিত কালাজের কামড়ের লক্ষণ।
চিকিৎসা–

বিষক্রিয়া নিশ্চিত হলে ডাক্তার
*কোন স্কীন টেস্ট ছাড়াই (যা ২০১০সালে WHO র নির্দেশিকায় বাতিল হয়ে গেছে)শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই ৪ ভাগের ১ভাগ অ্যাড্রিনালিন ইনজেকশন চামড়ার তলায় দিয়ে শিরা ফুঁড়ে স্যালাইনের সাথে ১০ভায়াল AVS এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শরীরে প্রবেশ করাবেন।সাথে অবশ্যই দেবেন নিওস্টিগমিন এবং অ্যাট্রোপিন (ফণাধর নার্ভবিষ গোখরো ও কেউটের ক্ষেত্রে এই দুই ইঞ্জেকশন দিতেই হবে)
* কোনও অবস্থাতে রোগীকে রেফার করতে হলে ১০ ভায়াল AVS, নিওস্টিগমিন এবং অ্যাট্রোপিন না দিয়ে রেফার করা যাবে না ।
* AVS দিলে ৭০%ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া(শ্বাসকষ্ট, শরীরে আমবাতের মত দেখতে পাওয়া ইত্যাদি)হয় যাকে সাময়িক স্যালাইন বন্ধ করে ইনজেকশন সিরিঞ্জে ধরে রাখা ০.৫m.lআড্রিনালিন দিয়ে সফলভাবে মোকাবিলা সম্ভব।
*চন্দ্রবোড়ার কামড়ে চিকিৎসায় দেরী হলেই কেবল ডায়ালেসিস লাগে।
আসুন সকলে মিলে আটকাই সমস্ত মৃত্যুকে, সাপের কামড় এড়াবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই, সাপে কামড়ালে রোগীকে সত্বর সাপের কামড়ের চিকিৎসা হয় এমন নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে চলি এবং সাপের কামড় সহ সমস্ত সঠিক চিকিৎসা বিনামুল্যে মানুষ যাতে পায় তার দাবী জানাই।
তবু সাপের কামড়ে কোনও রোগীর যদি মৃত্যু ঘটে –মৃত ব্যক্তির বাড়ীর লোক এককালীন ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন। কোন রোগী মারা গেলে সরকারী হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার “মৃত্যুর কারণ যে সাপের কামড়” এই মর্মে শংসাপত্র প্রদান করবেন কারণ সাপে কামড়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের প্রাপ্য ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নয় এই শংসাপত্রই চলবে।(সরকারী অর্ডার নং- ১৫৬১(১৯)F.R/৪P-৩/০৪ date ১৯.৮.২০০৮)

আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প, কবিতা, শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক, ’শনিবারের বিকেল’times.14.2020@gmail.com

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close