আসুন জেনে নেওয়া যাক মহালয়ার গুরুত্ব
মহালয়া মানেই বাঙালিদের কাছে নস্টালিয়া। কারন এদিন সেই পুরনো রেডিয়ো বার করে বীরেন্দ্রভদ্রের মহিষাসুরমর্দিনি শোনার পালা। তবে এখন আর রেডিয়োতে নয়, মোবাইল চালালেই সেই কন্ঠ শোনা যায়। মহালয়া বাঙালির উৎসব হলেও সারা দেশে পালিত হয়। কথিত আছে যে মহালয়ার দিনে মহিষাসুর নামে অসুরকে বধ করার জন্য দেবী দুর্গাকে আবাহন করা হয়েছিল। মহালয়া অমাবস্যার সকালে,পূর্বপুরুষরা পৃথিবীকে বিদায় নেন এবং সন্ধ্যায় দেবী দুর্গা, তার যোগিনী, দুই কন্যা, লক্ষ্মী-সরস্বতী,পুত্র গণেশ এবং কার্তিকের সঙ্গে পৃথিবীতে আসেন। এরপর নয় দিন ঘরে ঘরে অবস্থান করে ভক্তদের প্রতি কৃপা বজায় রাখেন। বাংলায় দুর্গাপূজা বহু প্রতীক্ষিত এবং এই দিনে শিশুদের কাছে দেবী দূর্গার পৌরাণিক কাহিনি সুরে সুরে শোনানো হয়।
পিতৃপক্ষের শেষক্ষণ ও মাতৃপক্ষের সূচনাকালের সময়কেই মহালয়া বলা হয়। প্রলয়কালে পৃথিবী এক বিরাট কারণ-সমুদ্রে পরিণত হলে শ্রীবিষ্ণু সেই সমুদ্রের উপর অনন্তনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। এই সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই দৈত্য নির্গত হয়ে বিষ্ণুর নাভিপদ্মে স্থিত ব্রক্ষ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। ভিত হয়ে ব্রহ্মা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য তাঁর নয়নাশ্রিতা যোগনিদ্রাকে স্তব করতে লাগলেন। সৃষ্টি হয়ে দেবী শ্রীবিষ্ণুকে জাগরিত করলে তিনি পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সঙ্গে মহাযুদ্ধে রত হলেন। পিতৃপক্ষ আর দেবীপক্ষরে সন্ধক্ষিণ হচ্ছে মহালয়া।
প্রসঙ্গত, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ শুরু হয়ে পরর্বতী অমাবস্যা র্পযন্ত সময়কে পিতৃ পক্ষ বলে। পুরাণ মতে ব্রহ্মার নির্দেশে পতিৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকরে কাছাকাছি চলে আসনে। তাই এই সময় তাঁদরে উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌছয়। তাই গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে র্তপণ করা হয়। যার চূড়ান্ত প্রকাশ বা মহালগ্ন হল এই মহালয়া। অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। এটি একটি জনপ্রিয় কৃতকর্ম। মহালয়া পতিৃপক্ষরে শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রিতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিনই হল দেবীপক্ষ।
উল্লেখ্য, নবরাত্রির নয় দিনে পার্বতী তাঁর শক্তি ও নয়টি রূপ নিয়ে তাঁর মর্ত্যে বাপের বাড়িতে আসেন অর্থাৎ পৃথ্বীলোক। দেবী তার সঙ্গী যোগিনীদের সঙ্গে আসেন। সঙ্গে থাকেন দুই কন্যা ও দুই পুত্র। পৃথ্বী হলেন দেবী পার্বতীর মামা এবং মাতা নবরাত্রির নয় দিনে তার মাতৃগৃহে আসেন। মনে করা হয়, পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি মানুষের দুঃখ-কষ্ট দূর করেন এবং অসুরের মত অশুভ যা শক্তি রয়েছে, তা ধ্বংস করেন। মাতা পার্বতী হিমালয়ের কন্যা এবং হিমালয় ছিলেন পৃথিবীর রাজা, তাই বাংলায় মহালয়ার দিনে দেবীকে কন্যা রূপে ডেকে কন্যা পুজো ও ভোজের আয়োজন করা হয়। মাতা পার্বতী জগৎপিতা ভোলেনাথের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল বলে তাঁকে জগৎ মাতা বলা হয়।মহালয়া অমাবস্যার দিনে পূর্বপুরুষদের কাছে সমস্ত ভুল স্বীকার করে কৃপা বজায় রাখার প্রার্থনা করা হয়। ওই একই সন্ধ্যায় পৃথিবীতে দেবী দুর্গার আগমনের জন্য প্রার্থনা করা হয়। মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা পৃথিবীতে প্রথম পা রাখেন। অশুভ বলে মনে করা হলেও এই সময়ে শুরু হওয়া যে কোনও কাজ সর্বদা ফলদায়ক বলে বিবেচিত হয়।