রাজ্যজুড়ে শীতের আমেজ মুখর রাজ্যবাসী
প্রতি দু’মাস ঋতু বদলের পালা দেখা যায়। এই ঋতু বৈচিত্র্যের মধ্যে পঞ্চমবারে আসে শীত। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস একসঙ্গে শীতকাল হয়। প্রতিটি ঋতুর মতোই শীতকাল তার নিজস্ব রূপ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়। শীতের কথা মাথা এলেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পরিবেশ আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে। এই সময় হাড়-হীম করা বাতাসে কাঁপতে থাকে শীতার্ত মানুষজন। এই সময় পরিবেশও যেমন দেখার মতো থাকে, ঠিক তেমনই ফল-মূল-সহ খাবারেরও বিভিন্ন বাহার দেখা যায়। শীত মানেই সারি সারি খেজুরগাছে ঝুলতে থাকা রসের ভাঁড়, নলেন গুড়ের রসগোল্লা, এ ছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, লাউ, মুলা, কুমড়া, লালশাক, পালংশাক, বেগুন, শসা, মিষ্টিকুমড়ার মতো বিভিন্ন শাক-সবজি পাওয়া যায়। এত সব পুষ্টিকর শাকসবজির পসরা অন্য কোনো ঋতুতে দেখা যায় না।
সব ঋতুগুলির মধ্যে শীত আমাদের সবার প্রিয় একটি ঋতু। শীতের মরসুমে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুর এক দেখার মতো দৃশ্য। এটা শীতেরই একটা সাধারণ চিত্র। বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যে অন্যান্য ঋতুর থেকে শীতকালই বেশি গুরুত্ব পায়।
শীতের মরসুমে যেমন ফল, শাক-সবজি মানুষের মনকে মুগ্ধ করে ঠিক তেমনই এই মরসুমের অন্যতম আকর্ষণ ফুল। লাল, হলুদ, সাদা, গোলাপি, বেগুনি প্রভৃতি বর্ণের ডালিয়ার পাপড়ির সৌন্দর্য আর চমৎকার বিন্যাস সহজেই মানুষকে মুগ্ধ করে। কৃষ্ণকলি শীত মৌসুমের নিজস্ব ফুল। এ ফুল সাদা আর গোলাপি রঙের হয়ে থাকে। শীত মরসুমের অন্য আর এক ফুল কসমস। এ ফুল সাদা, লাল বা গোলাপি বর্ণের হয়। এছাড়া শীতের আরও যেসব জনপ্রিয় ফুল রয়েছে তার মধ্যে গ্যাজানিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, অ্যাস্টার, ডেইজি, সিলভিয়া, এন্টিরিনাম, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, ডায়ান্থাস, ফ্লক্স, ভারবেনা, কারনেশান, পপি, সূর্যমুখী, পর্টুলেকা, ক্যালেন্ডুলা, হলিহক, মর্নিং গ্লোরি, সুইট পি, অ্যাজালিয়া, জারবেরা, গ্ল্যাডিওলাস পিটুনিয়া অন্যতম।
শীত মানেই হরেক রকম ফলের বাহার। শীত ঋতুর কমলা, কুল, সফেদা, জলপাই ইত্যাদি ফল মুখের স্বাদকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। এ ঋতুর জনপ্রিয় ফলগুলোর একটি ডালিম। এ ফল কারো কাছে বেদানা, কারো কাছে আনার নামে পরিচিত। শীতের ফলের রাজা বলা হয় কমলাকে। বর্তমানে আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলে কমলার চাষ হয়। এ ঋতুতে আরো যেসব সুস্বাদু ও উপকারী ফল পাওয়া যায় তার মধ্যে কুল, জলপাই, আমলকী অন্যতম।
শীতকালে মানেই পিঠে-পুলির উৎসব। শীত এলেই পৌষ মাসে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠে বানানোর ধুম পড়ে যায়। বাংলার শীতকাল আর পিঠে যেন একসূত্রে গাথা। কৃষকের ঘরে হেমন্তে নতুন ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় পিঠে তৈরির কাজ। চলতে থাকে তা পুরো শীতকালজুড়ে। বেশির ভাগ পিঠাই মিষ্টিপ্রধান, কিছু পিঠে ঝালজাতীয়। তবে যে পিঠেই তৈরি করা হোক না কেন, পিঠে তৈরির মূল উপকরণ চালের গুঁড়া। এক এক অঞ্চলে এক এক রকমের পিঠে তৈরি হয়। একই পিঠের নামও আবার অঞ্চলভেদে ভিন্ন। তবে এমন কিছু পিঠা আছে, যা দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বানানো হয়। যেমন- চিতই পিঠে, পাটিসাপটা, পুলি পিঠে, নকশি পিঠে, তেলে পিঠে ইত্যাদি। শীতকালীন পিঠের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পিঠাগুলো হল চিতই, পাকান, পাটিসাপটা, ভাপা, পুলি, ম্যারা, তেলেভাজা, ফুলঝুরি, নকশি, গোলাপফুল, দুধপিঠে, লাউ পায়েস, ছিট পিঠা, সিদ্ধ পিঠে, পুতুল পিঠে, লরি পিঠে, তারাজোড়া, জামাই পিঠে, ঝুরি পিঠে, বিবিয়ানা পিঠে, খান্দেশা পিঠে, পাতা পিঠে, গুলগুলা, লবঙ্গ পিঠে, ক্ষীরডুবি, খাস্তা পিঠে, ঝালপোয়া পিঠে, মালপোয়া পিঠে, মালভোগ, ক্ষীরকুলি, মালাই পিঠে, নারকেল ভাজা পুলি, নারকেল সিদ্ধ পুলি, নারকেল ঝুরি পিঠে, তেলপোয়া পিঠে, ঝাল পিঠে, বিস্কুট পিঠে, খাস্তা পিঠে, গজা, রুটি পিঠে, দুধ পায়েস, কুলি পিঠে, দুধকুলি পিঠে, জামাই কুলি পিঠে, হাঁড়ি পিঠে, চাপড়ি পিঠে, চুটকি পিঠে, রসপুলি, মুরালি পিঠে, খান্দাশ, পয়সা পিঠে, চুষি পিঠে ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়াও এই সময় নানান উৎসবের মধ্যে দিয়ে কিভাবে যে এই ঋতু পার হয়ে যায় বোঝাই যায় না।
আপনিও হয়ে উঠতে পারেন নামী লেখক। ছোট গল্প, কবিতা, শিক্ষামূলক লেখা পাঠান আমাদের ই-পোর্টালের মেইল আইডিতে। বিভাগীয় সম্পাদক , ’শনিবারের বিকেল’times.14.2020@gmail.com