বাঙ্গালিয়ানায় ইলিশ মানে বাঙালির আবেগ
ইলিশ মাছের নাম শুনলেই এক অপার্থিব আনন্দে বাঙালির মন মেতে ওঠে। মাছের সঙ্গে বাঙালির আলাদাই একটা টান রয়েছে। খাদ্য রসিক বাঙ্গালির খাদ্য তালিকায় তাই ইলিশ মাছ একেবারে ঐতিহ্যবাহী একটি পদ। কথায় আছে- মাছে-ভাতে বাঙালি। আর সে বাঙালি মাছেদের রাজা ইলিশ। বাস্তবে বর্ষার মরশুম বাঙালির কাছে ইলিশের আগমণ ছাড়া প্রায় অসম্পূর্ণ। ইলিশ নামটা খাদ্যরসিক বাঙালির কাছে একটা আবেগ। এটি এক সুখকর অনুভূতি। এটি এমন একটি মাছ যাকে ভাজা, ঝোল, ভাপা,সরষে বাটা ইত্যাদি নানান স্বাদে খাওয়া যায়। যারা মাছটি হয়তো কাটার ভয়ে খায় না তারা সত্যি একটি সুন্দর স্বাদ থেকে বঞ্চিত হন। বাঙালি বর্ষাকালে সব থেকে বেশি ইলিশ মাছ খেয়ে থাকেন। যদিও এখন সারা বছরই এই মাছ স্টোর করে রাখার জন্য বাজারে এর জোগান অব্যাহত থাকে। তবে বর্ষাকালে উৎপন্ন ইলিশের স্বাদই হয় আলাদা। প্রায় প্রতিটি বাঙালি বাড়ির বর্ষাকাল ইলিশের আগমণে সম্পূর্নতা লাভ করে।
ভারতীয় উপমহাদেশের খাদ্যোপযোগী মাছগুলির মধ্যে ইলিশ একটি জনপ্রিয় মাছ। এটি বাংলাদেশের জাতীয় মাছ; ২০১৭ সালে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রক এর আওতাধীন Department of Patents, Designs and Trademarks (DPDT) ইলিশ মাছকে বাংলাদেশের পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইলিশ মাছ ইষৎ নোনা জলে জন্মায়, এটি ৩ কেজি ওজন পর্যন্ত ও দৈর্ঘ্যে ৬০ সেমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই মাছের সর্বাধিক প্রজননের হার দেখা যায় এপ্রিল মাসে, তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত নদীতে সর্বাধিক এই মাছের উথ্বান লক্ষ্য করা যায়। ইলিশ মাছ বাংলাদেশের মেঘনা-যমুনা, পদ্মা নদী এবং ভারতের গঙ্গা, রূপনারায়ণ, নর্মদা ও গোদাবরী নদী থেকে অধিক পরিমাণে আহরণ করা হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য ভারতের চিল্কা হ্রদ ইলিশ মাছ চাষের এক বিখ্যাত জায়গা।
অনেক বাঙালি হিন্দু পরিবারে সরস্বতী পুজো কিংবা লক্ষী পুজোর দিনে শিল্প বা জ্ঞান কিংবা আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য একজোড়া ইলিশ মাছ এনে দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের ঘাটতির কারনে বিবাহে মাছ উপহার হিসাবে এই মাছ ব্যবহৃত না হলেও বাংলাদেশে এই ঐতিহ্য এখনও অব্যাহত রয়েছে। তবে শুধু স্বাদের জন্যই এই মাছ বিখ্যাত নয়, এই মাছের পুষ্টিগুণও প্রচুর।
বাঙালির খাদ্য তালিকায় ইলিশের নামডাক থাকা সত্ত্বেও, এই নিয়ে বাঙাল-ঘটির দ্বন্দ্ব চিরকালীন। কিন্তু আমার মতে, ইলিশের মতো সুস্বাদু মাছ বাঙাল না ঘটির সেই দ্বন্দ্ব ভুলে একে সর্বজনীন ভেবে নিয়ে নিজেদের খাদ্য তালিকায় যোগ করাই শ্রেয়। পশ্চিমবাংলার পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে যেমন এই মাছ পাওয়া যায় ঠিক তেমনি মুর্শিদাবাদের ফারাক্কায় এই মাছ জালে ভেসে ওঠে। উড়িষ্যার সমুদ্র উপকূলেও এই মাছের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তথাপি ওপার বাংলার পদ্মার ইলিশ দুটি দেশকেই মাছের বন্ধনে আবদ্ধ রেখেছে।
অনুলিখন-অঙ্কিতা দাস, টাইমস ফোর্টিন বাংলা।