শনিবারের বিকেল : 16th April, 2022

আরও পড়ুন

  • চলুন যাই ঘুরে আসি বাংলাদেশে থাকা আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বসত বাড়ি

আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ আচার্য্য প্রফুল্ল চান্দ্রা রায় ১৮৬১ সালের ২ অগাস্ট খুলনা জেলার পাইকগাছার উপজেলার বাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় ছিলেন বহু ভাষাবিদ ,পন্ডিত ও বিদ্যোৎসাহী। মা ভুবনমোহিনী। প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রফফুল চন্দ্র রায় গিলক্রাইস্ট স্কলারশিপ নিয়ে ইংল্যান্ডের এডিনবার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি মার্ককিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। যার বর্তমান নাম ”পিসি কলেজ”।তাঁর অর্থায়নে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান , শিক্ষাবৃত্তি ,গবেষণা পুরষ্কার ও রসায়নাগার প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি লাভ করে। তিনি ১৮৮৯ থেকে ১৯৩৬ সুদীর্ঘ ৪৭ বছর অধ্যাপনা পেশায় অতিবাহিত করেছেন। তিনি ব্রিটিশ সরকার কতৃক প্রদত্ত CIE ও Knight বা স্যার উপাধি পেয়েছিলেন। ১৯৪৪ সোনার ১৬ জুন এই বিজ্ঞানী ,শিক্ষাবিদ ও অসাম্প্রদায়িক দেশ -দরদী মাহামনীষী মৃত্যু বরণ করেন।

a

জনশ্রুতি অনুযায়ী ১৮৫০ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় বাড়ুলী গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য একটি বাসাটা বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়িটি ছিল দুটি ভাগে বিভক্ত সদর মহল ও অন্দর মহল। সদর মহলটি পুরুষদের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয় সদর মহলটি ৪টি ভাগে বিভক্ত। এর উত্তরাংশ মন্দির (পূজা মণ্ডপ) হিসাবে ব্যবহার করা হতো। মন্দিরে সর্বমোট ৮ টি মাল্টিফয়েল খিলান রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের সময় পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। ভবনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কতৃক জারিকৃত গেজেট (বাংলাদেশ গেজেট ৭ নভেম্বর ১৯৯৬)এর মাধ্যমে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কতৃক সংষ্কার – সংরক্ষণ কাজের মাধ্যমে বাড়িটির পূর্বের আদল ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে।

আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের লিখিত পিস্তল থেকে জানা যায় সদর মহলের উত্তর পশ্চিম পশে মহিলাদের বসবাসের জন্য একটি সুরম্য অট্টালিকা নির্মাণ করা হয় যা অন্দরমহল নামে পরিচিত। জনশ্রুতি থেকেই জানা যায় এই আন্ডার মহলেই প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৬১ সোনে ২ অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই অন্দরমহল টি সদর ম,হলের অনুরূপ স্থাপত্য নকশায় নির্মিত। অন্দর মহলটি দক্ষিণ মুখী। এর বারান্দায় গোলাকার জোড়াখুটি ব্যবহার করা হয়েছে। এ জোড়াখুঁটিগুলো সদরমহলের গোলাকার জোড়াখুটির অনুরূপ।

Prafulla Chandra Roy’s House

১৮৬১ – ১৮৬১ সালের ২ অগাস্ট (বাংলা ১৮ শ্রাবন ১২৬৮) খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বাড়ুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
১৮৬৬ – বাড়ুলী গ্রামের বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন।
১৮৭০ -অগাস্ট মাসে কলকাতা গমন করেন
১৮৭১ – কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভপ্ৰতি হন।
১৮৭২ -দুরারোগ্য আমাশয় যোগ আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। বিদ্যোৎসাহী পিতা হরিশচন্দ্রের প্রতিষ্টিত পারিবারিক গ্রন্থাগারে অধ্যায়ন করেন।
১৮৭৪- কেশব চন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত কলকাতা এলবার্ট স্কুলে ভর্তি হন।
১৮৭৯- ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হন।
১৮৮১- মেট্রোপলিটন কলেজে থেকে এফ এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৮৮১- বি এ অধ্যায়নের জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।
১৮৮২- ”গিলক্রাইস্ট” বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড গমন এবং ১৮৮৪ সালে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন শেষে বা এস ডিগ্ৰী লাভ করেন।
১৮৮৫- India before and after the Munity শীর্ষক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রবন্ধে ব্রিটিশ সরকারের সমালচনা করায় পুরস্কার লাভে বঞ্চিত হলেও গুণীজন কতৃক প্রশংসিত হন।

 ১৮৮৬- Essays of India শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত ও গুণীজন কর্তৃক প্রশংসিত হন।
১৮৮৭- ডি.এস.সি ডিগ্রি লাভ ও একই বছর Hope Prize বৃত্তি লাভ করেন।
১৮৮৮- কলকাতা প্রত্যাবর্তন করেন।
১৮৮৯- সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান করেন।
১৮৯১- অনিদ্রারোগে আক্রান্ত হন। পূজার ছুটিতে দেওঘর গমন করেন।
১৮৯২- দেশীয় ভেষজ সম্মন্ধে গবেষণা শুরু করেন ও বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সূচনা করেন।
১৮৯৩- সালফিউরিক অ্যাসিড প্ল্যান্ট ক্রয় করেন।
১৮৯৪- Journal of the Asiatic Society of বেঙ্গল-এ তৈল ও ঘিতে ভেজাল সম্পর্কে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।
১৮৯৬- মার্কিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন।
১৮৯৮- ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল কংগ্রেসের অধিবেশনে প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর প্রস্তুতকৃত দেশীয় ভেষজের কার্যকারিতার স্বীকৃতি লাভ করেন।
১৯০১- বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্কসকে বেঙ্গল কেমিক্যাল লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেন।
১৯০২- সরল প্রাণী বিজ্ঞান ও History of Hindu Chemistry – Vol। গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
১৯০৩- রাড়ুলী গ্রামে পিত হরিশ্চন্দ্রের নামে উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন।
১৯০৪- ইউরোপের গবেষণাগারসমূহ পরিদর্শনের জন্য সরকারি ব্যয়ে ইউরোপ যাত্রা করেন।
১৯০৯- History of Hindu Chemistry -Vol 2 গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯১০ -বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলন রাজশাহী অধিবেশনে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।
১৯১১ -The Congress Of the Univesities Of the Empire হিসেবে কলকাতা বিশ্বাবিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হয়ে ইউরোপ যাত্রা করেন। C। E উপাধি লাভ করেন ও ডারহাম বিশ্বাবিদ্যালয় হলে অনারারি D .SC উপাধি লাভ করেন।
১৯১৪- পাঞ্জাব বিশ্বাবিদ্যালয়ের বল্ট্রিটা প্রদান করেন
১৯১৬- প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে অবসর নিয়ে কলকাতা বিশ্বাবিদ্যালয়ের পালিত অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯১৭- ভারতীয় জাতীয় সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন
১৯১৮ -বাগেরহাট কলেজে প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তী কালে পিসি কলেজে নামে নামকরণ করা হয় বাড়ুলী গ্রামে Education Society থেকে ১২ হাজার টাকা দেন করেন।
১৯১৯- Knight বা স্যার উপাধি লাভ করেন।
১৯২০-ভারতীয় বিজ্ঞান কলেজের মূল সভাপতি নির্বাচিত হন। চতুর্থবার ইংল্যান্ড গমন। খুলনায় রিলিফ কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। নাগার্জুন পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯২২- উত্তরবঙ্গে বন্যা ত্রাণ কার্যে আত্মনিয়োগ করেন।
১৯২৩- Indian Chemical Society প্রতিষ্ঠা প্রথম সভাপি নির্বাচিত হন।

১৯২৫- সিউড়ী মেলার উদ্বোধন ও শান্তিনিকেতন পরিদর্শন করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘ অধ্যাপক হিসেবে এবং নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদান করেন।কোকোনদে কংগ্রেস অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন।
১৯২৬- পঞ্চমবারের মতো ইংল্যান্ড যাত্রা করেন।
১৯৩১- বন্যার্তদের সাহায্যার্থে বঙ্গীয় সংকট ত্রাণ কমিটি গঠন করেন। তাঁর ৭০ নবছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে কলকাতা টাউন হলে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
১৯৩২- Life and Experiences of a Bengali Chemist গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
১৯৩৪- লন্ডনের Chemical Society এর অনারারি ফেলো নির্বাচিত হন।
১৯৩৬- ৭৫ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের পলী-এর অধ্যাপক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৩৭- পাটনা প্রবাসী বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন।
১৯৪১- তাঁর আসি বছর পূর্তি উপলক্ষে সিনেট হলে প্রফুল্ল জয়ন্তী উৎসব পালিত হয় এবং খুলনা শহরে খুলনাবাসীর পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১৯৪৩- রাড়ুলী গ্রামে রাড়ুলীর অধিবাসীগণ তাঁকে সম্বর্ধনা দেয়।
১৯৪৪- ১৬ জুন ১৯৪৪ সালে ৮৩ বছর বয়সে বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র পরলোক গমন করেন।

  • কবিতাঃ

     Shyama Charan Karmakar

নববর্ষ
শ‍্যামাচরণ কর্মকার

একটি করে দিন ফুরিয়ে নতুন বছর আসে
পুরনোকে বিদায় জানায়, বাজায় খুশির বীণ
পেরিয়ে আসা প্রহর তবু স্মৃতি হয়েই ভাসে
স্বপ্ন দেখে চোখের পাতা, যাক মুছে দুর্দিন।

কী দিল সে, কী-ই বা পেলাম আঁকে মনের খাতা
অনেক কিছু হারিয়ে যাওয়ার হিসেব খুঁজে পাই
দুঃখ – বিষাদ, রোগ-ব‍্যাধি-শোক সব ছিল যে গাঁথা
নতুন দিনে সেই খতিয়ান কে আর রাখতে চাই?

ভুলব সেসব ভয়-ধরানো ভয়ঙ্করের গান
সব হতাশার প্রহর মুছে আঁকব আশার ছবি
নতুন দিনের সূর্যালোকে আঁধার হবে ম্লান
আলো-আশার স্বপ্ন বোনার আখর সাজাক কবি।

নতুন বছর, শুনছ তুমি কী চায় বসুন্ধরা?
তোমার আশিস, স্নেহের আঁচল থাকুক সকল নীড়ে
নিরন্ন পাক দু’মুঠো ভাত, মুছুক মড়ক-জরা
হাসিখুশি, উচ্ছলতার দিনটা আসুক ফিরে।

নতুন বছর বলল শুনে, হোস না আশাহত
আনব সুদিন, ঝলমলে দিন ভরসাটুকু রাখ
আলো-আশায় মুছব মনের সব কালিমা, ক্ষত–
বলেই তোলে শঙ্খধ্বনি, হোক শুরু বৈশাখ।

- Advertisement -

সম্পর্কিত খবর

- Advertisement -

ট্রেন্ডিং

close